রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ ওভারে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েও দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে মোহাম্মদ নবির হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৪ রান করে আফগানিস্তান। ৪০ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করেন নবি। জবাবে শুরুতে চাপে পড়লেও পঞ্চম উইকেটে তাওহিদ হৃদয় ও শামিম হোসেনের ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটিতে জয়ের পথ সহজ করে ফেলে বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে এক পর্যায়ে শেষ ৫ বলে ২ রান দরকার পড়ে টাইগারদের। কিন্তু হ্যাটট্টিক করে ম্যাচে উত্তেজনা তৈরি করেন আফগানিস্তানের পেসার করিম জানাত। শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতে জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট শিকারের আনন্দে মাততে পারতো বাংলাদেশ।
পেসার তাসকিন আহমেদের বলে আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের কঠিন ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি রনি তালুকদার। ১ রানে জীবন পান গুরবাজ। পরের ওভারে স্পিনার নাসুম আহমেদের প্রথম বলে ছক্কা মারেন আরেক ওপেনার হজরতুল্লাহ জাজাই। পরের ডেলিভারিতে আবারও বড় শট মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে তাওহিদ হৃদয়কে ক্যাচ দেন ৮ রান করা জাজাই।
দ্বিতীয় ওভারে জীবন পেলেও চতুর্থ ওভারে তাসকিনের বলেই আউট হন গুরবাজ। ডিপ স্কয়ার লেগে মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১১ বলে ১৬ রান করা গুরবাজ। পঞ্চম ওভারে আক্রমনে এসেই উইকেট তুলে নেন ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের হিরো পেসার শরিফুল ইসলাম। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হজম করলেও পরের ডেলিভারিতে তিন নম্বরে নামা ইব্রাহিম জাদরানকে ৮ রানে থামান শরিফুল। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ৪০ রান তুলতে পারে আফগানিস্তান।
অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে আফগানিস্তানের উপর চাপ বাড়ান সাকিব। চার নম্বরে নামা করিম জানাতকে ৩ রানে থামিয়ে দেন সাকিব। পঞ্চম উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে জুটির চেষ্টা করেন নবি। সাবধানে খেলে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তারা। তবে এ জুটির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান মেহেদি হাসান মিরাজ।
উইকেটের পেছনে লিটন দাসের দারুণ ক্যাচে আউট হন নাজিবুল্লাহ। ২৩ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করেন নাজিবুল্লাহ। ১৪তম ওভারে ৮৭ রানেই ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। রানের গতি কম থাকায় ষষ্ঠ উইকেটে মারমুখী হয়ে উঠেন নবি ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই।
তাসকিন-মোস্তাফিজ ও সাকিবের করা ১৭ থেকে ১৯তম ওভারের প্রত্যকটিতে ১৪ রান করে তুলেন নবি ও ওমারজাই। এসময় ৫টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তারা। সাকিবের করা ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে ছক্কা মারার পর শেষ ডেলিভারিতে তাসকিনের দারুন ক্যাচে বিদায় নেন ওমরজাই। ৪টি ছক্কায় ১৮ বলে ৩৩ রান করেন তিনি।
২০তম ওভারে মুস্তাফিজের তৃতীয় ডেলিভারিতে বাউন্ডারি দিয়ে ১০৮তম টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ বল খেলে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নবি। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে নাজমুল হোসেন শান্তর দারুন ক্যাচে ৩ রানে আউট হন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৪ রান করে আফগানিস্তান। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করেন নবি।
বাংলাদেশের সাকিব ২৭ রানে ২টি, নাসুম-তাসকিন-শরিফুল-মোস্তাফিজ ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
১৫৫ রানের টার্গেটে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে বোল্ড হন ওপেনার রনি তালুকদার। দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে শুরু করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। ৫ ওভার শেষে ৩০ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারের প্রথম বলে লিটন-শান্তর জুটি ভাঙ্গেন আফগান স্পিনার মুজিব। সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিং করলে বল শান্তর বাঁ-হাতে কনুইতে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ১টি ছক্কায় ১২ বলে ১৪ রান করেন শান্ত।
পরের ওভারে ওমরজাইর বলে উইকেট ছেড়ে খেলে পুল শটে আকাশে বল তুলে রশিদকে ক্যাচ দেন লিটন। ২টি চারে ১৯ বলে ১৮ রান করে লিটন আউট হলে দলীয় ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন অধিনায়ক সাকিব ও তাওহিদ হৃদয়। জুটির শুরুতে বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। খেলার শুরুর পর ব্যাট হাতে চড়াও হবার চেষ্টা করেন সাকিব। দুই ওভার মিলিয়ে ৩টি চারও মারেন তিনি। কিন্তু ১১তম ওভারে পেসার ফরিদের প্রথম বলে ডিপ পয়েন্টে করিমকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৩টি চারে ১৯ রান করা সাকিব।
৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। নতুন ব্যাটার শামীম হোসেনকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন হৃদয়। ওমরজাইর করা ১৩তম ওভারে ২১ রান তুলেন হৃদয়-শামিম। ওই ওভারেই তিন অংকে পা রাখে বাংলাদেশ। ১৬তম ওভারে মুজিবের বলে নাজিবুল্লাহর হাতে ব্যক্তিগত ২৪ রানে জীবন পান শামিম।
ফারুকির করা ১৭তম ওভারে ১৬ রান তুলে টাইগারদের জয়ের পথে নিয়ে আসেন হৃদয়-শামিম জুটি। শেষ ৩ ওভারে ১৯ রানের সমীকরণে নামিয়ে আনেন তারা। ১৮তম ওভারে শামীমকে শিকার করে আফগানিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন রশিদ। ৪টি চারে ২৫ বলে ৩৩ রান করেন শামিম। জুটিতে ৪৩ বলে ৭৩ রান যোগ করেন হৃদয় ও শামীম।
শামীম যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ১৮ রান দূরে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ১২ বলে ১৬ রান তুলে ম্যাচ হাতে মুঠোয় আনেন হৃদয় ও মিরাজ। শেষ ওভারে ৬ রানের প্রয়োজনে প্রথম বলে চার মারেন মিরাজ।
জয়ের সমীকরণ ২ রানে নেমে আসে। পরের তিন বলে মিরাজ-তাসকিন ও নাসুমকে শিকার করে হ্যাটট্টিক করেন করেন জানাত। টি-টোয়েন্টি ৫০তম হ্যাটট্টিক এটি।
তবে পঞ্চম ডেলিভারিতে চার মেরে বাংলাদেশকে জয়ের স্বাদ দেন শরিফুল। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩২ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া হৃদয়। ৪ রানে অপরাজিত থাকেন শরিফুল। ৬ বলে ৮ রান করেন মিরাজ। আফগানিস্তানের জানাত ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন।