টেস্ট-ওয়ানডের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজি শুরু করলো বাংলাদেশ। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হারের স্বাদ নিয়েছে সাকিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এ জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে বুধবার সকালে (বাংলাদেশ সময়) টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েট। ব্যাট করতে নেমেই হতাশায় ভুগে টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আমেজ নিয়ে টি-টোয়েন্টি লড়াই শুরু করে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজে ২৮৭ রান করে সেরা খেলোয়াড় হওয়া তামিম ইকবাল ইনিংস শুরু করেন সৌম্য সরকারকে নিয়ে। বল হাতে ইনিংস শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অব-স্পিনার অ্যাশলে নার্স। সীমিত ওভারের ম্যাচে তামিমকে যেখানে দেখা গেছে বুঝে শুনে খেলতে সেখানে এ ফরম্যাটেও ভালো কিছুই তার কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল।
কিন্তু ইনিংসে প্রথম বলেই উইকেট ছেড়ে খেলতে এসে স্টাম্পড হন তামিম। শূন্য হাতে ফেরেন চলতি সফরে ওয়ানডে সিরিজে দু’টি সেঞ্চুরি ও ১টি হাফ-সেঞ্চুরি করা তামিম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম বলে আউট হলেন বাংলাদশের এ ড্যাশিং ওপেনার।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারি মারেন লিটন দাস। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারকে। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে আউট হন তিনিও। তাই তামিমের মতো শূন্য হাতে ফিরতে হয় সৌম্যকেও। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তামিমের মতোই দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম বলে আউট হলেন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে পুরোপুরিই ব্যর্থ সৌম্য।
ইনিংসের প্রথম ওভারে ৬ রান তুলে ২ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লিটন ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। লিটন দেখে-শুনে খেললেও প্রতিপক্ষ বোলারদের পাল্টা আক্রমণ করেন সাকিব। এতে বাংলাদেশের রান তোলার গতি বাড়ে। তবে পাওয়া প্লের শেষ ওভারের খেই হারিয়ে ফেলেন লিটন ও সাকিব। ও ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডান-হাতি পেসার কেমো পলকে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ২১ বলে ২৪ রান করা লিটন।
পরের বলে বিদায় ঘটে সাকিবের। পলকে কাট করেছিলেন সাকিব। বল চলে যায় থার্ড-ম্যানে। সেখানে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন কেসরিক উইলিয়ামস। ফলে নিশ্চিত ছক্কা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন সাকিব। ১০ বল মোকাবেলা করে ৪টি চারের সহায়তায় ১৯ রান করেন তিনি।
এরপর মুশফিকুর রহিম ও মাহমুুদুল্লাহর কল্যাণে রানের চাকা ঘুরতে থাকে বাংলাদেশের। মাহমুদুুল্লাহ মারমুখী হয়ে উঠেন। সপ্তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেগ-স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রির শেষ তিন বল থেকে দু’টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪ রান তুলে নেন মাহমুুদুল্লাহ। পরের ওভারে পলকে একটি ছক্কাও মারেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ এমন মারমুখী ব্যাটিংয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন মুশফিকুর। কিন্তু বেশিক্ষণ খোলসের মধ্যে আটকে থাকতে পারেননি মুশি। পরপর দু’টি বলে বাউন্ডারি মেরে ১০তম ওভারের তৃতীয় বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মুশফিক। ২টি চারে ১১ বলে ১৫ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ২৪ বলে ৪৭ রান দলকে উপহার দেন মুশফিক ও মাহমুুদুল্লাহ। এতে ৯ দশমিক ২ ওভার শেষে ৯০ রান পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু পরের ৬৪ ডেলিভারি থেকে ৫৩ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। কারণ শেষদিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বাংলাদেশের রানের লাগাম টেনে ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা। ৪ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট নেন উইলিয়ামস।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হবার সাথে-সাথেই বৃষ্টি নামায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টি কমে যাবার পর খেলা শুরু হলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১১ ওভারে ৯১ রান। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদির প্রথম ওভার থেকে ১০ রান তুলে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও এভিন লুইস।
দ্বিতীয় ওভারে এই দু’জনকে বিদায় দেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে লুইস ও শেষ ডেলিভারিতে ফ্লেচারের বিদায় ঘটে। লুইস ২ ও ফ্লেচার ৭ রান করে ফিরেন। এই ওভারে কোন রান না দিয়েই দুই উইকেট নেন ফিজ। ফলে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ডাবল-উইকেট মেডেন নিলেন মোস্তাফিজ। এর আগে ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল উইকেট মেডেন নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি।
মোস্তাফিজের ডাবল আঘাতে প্রথম ২ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১০ রান সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব পালন করেন তিন নম্বরে নামা আন্দ্রে রাসেল ও চার নম্বরে নামা মারলন স্যামুয়েলস। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিবের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভার থেকে ১৪ রান নেন তারা। ষষ্ঠ ওভারর প্রথম বলে দলের স্কোর ৫০ রানে পৌঁছে দিতে সক্ষম হন রাসেল-স্যামুয়েলস। ফলে ম্যাচে ফিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কিন্তু ঐ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের ডান-হাতি পেসার রুবেল হোসেন। মারমুখী মেজাজে থাকা স্যামুয়েলসকে তুলে নেন রুবেল। ২টি করে ও ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রান করেন স্যামুয়েলস। রাসেলের সাথে জুটি বেধে ২২ বলে ৪২ রান দলের স্কোরে যোগ করেন স্যামুয়েলস।
স্যামুয়েলস ফিরে গেলেও ভড়কে যাননি হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যান রাসেল। ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নেন তিনি। সপ্তম ওভারের ব মোস্তাফিজের ছয় ডেলিভারি থেকে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ রান তুলে দলের জয়ের পথ পরিস্কার করে ফেলেন রাসেল। শেষ পর্যন্ত ১১ বল বাকি থাকতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ সেরা হয়েছেন আন্দ্রে রাসেল।
আগামী ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (তামিম ০, সৌম্য ০, লিটন ২৪, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫, আরিফুল ১৫, মিরাজ ১১, অপু ৭, রুবেল ২*, মুস্তাফিজ ৩*; নার্স ২/৬, রাসেল ১/২৭, বদ্রি ০/৩৫, পল ২/২৪, ব্র্যাথওয়েট ০/২১, উইলিয়ামস ৪/২৮)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: (লক্ষ্য ১১ ওভারে ৯১) ৯.১ ওভারে ৯৩/৩ (ফ্লেচার ৭, লুইস ২, রাসেল ৩৫*, স্যামুয়েলস ২৬, পাওয়েল ১৫*; মিরাজ ০/৯, মুস্তাফিজ ২/১৮, সাকিব ০/২১, অপু ০/২৪, রুবেল ১/১৩)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: আন্দ্রে রাসেল