ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ঠিকই জিতে নিয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সুখ-স্মৃতি নিয়ে এবার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দুর্দান্তভাবে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে ফুরফুরা মেজাজে থাকা টাইগাররা এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। বাসেটেরেতে আগামীকাল ১ আগস্ট সকাল (বাংলাদেশ সময়) সাড়ে ৬টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। পুরো টেস্ট সিরিজের এক সেশনেও দাপট দেখাতে পারেনি টাইগাররা। এমনকি নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউটের রেকর্ডও গড়ে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। জেসন হোল্ডারের নেতৃত্বে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টেস্ট সিরিজ জিতে চনমনে হয়ে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে সিরিজও হেসেখেলে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ক্যারিবীয়রা। তবে টেস্ট সিরিজের দুঃস্মৃতি সতীর্থদের মনের অন্তস্থল থেকে মুছে ফেলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ‘টেস্ট সিরিজের দুঃস্মৃতি ভুলে দেশের কথা চিন্তা করে নতুন করে শুরু করো’ -মাশরাফির এমন বার্তায় ঠিকই জেগে ওঠে বাংলাদেশ দল।
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই নিজেদের কারিশমা দেখায় মাশরাফির দল। ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের অপরাজিত ১৩০ রান, সাকিব আল হাসানের ৯৭ রান ও বল হাতে মাশরাফির ৩৭ রানে ৪ উইকেট শিকারে ৪৮ রানে প্রথম ওয়ানডে জিতে সিরিজে লিড নেয় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ম্যাচ সকল দায়িত্ব পালন করে রেখেছিল বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। কিন্তু ম্যাচের শেষ ৭ বলে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ফলে ৩ রানে ম্যাচ হারে টাইগাররা।
তবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ঠিকই স্বপ্ন পূরণ করে বাংলাদেশ। আবারও বাংলাদেশের জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন তামিম। ওপেনার হিসেবে এবারের সিরিজে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। পাশাপাশি মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদের ৪৯ বলে অপরাজিত ৬৭ ও অধিনায়ক মাশরাফির বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তায় ব্যাটিং প্রমোশন নিয়ে ২৫ বলে ৩৬ রানে ৬ উইকেটে ৩০১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
এছাড়া বোলারাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে ২৮৩ রানের মধ্যে আটকে দেয় বাংলাদেশ। ১৮ রানের জয়ে ম্যাচ ও সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা।
দীর্ঘ ৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। ওয়ানডে জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে লড়াইয়ের রসদ যুগিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। তৃতীয় ওয়ানডে শেষে টি-টোয়েন্টি নিয়েও কথা বলেছেন বছর এপ্রিলে ছোট সংস্করণকে বিদায় বলা মাশরাফি।
তিনি বলেন, ‘ওয়ানডের পারফরমেন্স ধরে রেখে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে হবে আমাদের। সিরিজের শুরুটাও আত্মবিশ্বাসের সাথেই করতে হবে। কারণ আমরা ভালোভাবেই ওয়ানডে সিরিজ জিততে পেরেছি।’
এদিকে মাশরাফি আত্মবিশ্বাসী হলেও রেকর্ড নেতিবাচক ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ২০১৫ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে কোন সিরিজই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সে বছর এপ্রিলে এক ম্যাচের সিরিজে সফরকারী পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারায় মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এরপর কোন সিরিজ তো জিততেই পারেনি, এমনকি ৩৭ ম্যাচে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১১টি।
গত জুনে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় সাকিবের দল। তাই সাম্প্রতিক রেকর্ডের ভিত্তিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে বাংলাদেশকে।
তবে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের খুব একটা খারাপ নয়। চারবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে দু’দল। এর মধ্যে ২টি সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ছয়বারের মুখোমুখিতে ২ ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ, ৩টিতে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে নতুন ফর্মেটের সিরিজে বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিরা ঠিকমত জ্বলে উঠলে যে কোন দলকে হারানোর সক্ষমতা বাংলাদেশ দলের রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে এ টি-টোয়েন্টি সিরিজি বিশ্রামে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিপক্ষে এ সিরিজের খেলছেন না তিনি।
বাংলাদেশ দল
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (সহঅধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, আবু জায়েদ রাহী ও আরিফুল হক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল
কার্লোস ব্রেথওয়েট (অধিনায়ক), স্যামুয়েল বদ্রি, শেলডন কোট্রেল, আন্দ্রে ফ্লেচার, এভিন লুইস, অ্যাশলে নার্স, কেমো পল, রভম্যান পাওয়েল, দিনেশ রামদিন, আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস, চাঁদউইক ওয়ালটন, কেসরিক উইলিয়ামস।