ওপেনার লিটন দাসের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি, রনি তালুকদারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আগুন বোলিংয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৭৭ রানে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে রান বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় জয় পেয়েছে টাইগাররা। একই সাথে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সাকিবের দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২২ রানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
বুধবার (২৯ মার্চ) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে ১৮ বলে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন লিটন। ৪১ বলে ৮৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি। বল হাতে ২২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
টস হওয়ার ১০ মিনিট পর বৃষ্টি নামলে নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হতে পারেনি। ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট নষ্ট হওয়ায় ম্যাচটি ১৭ ওভারে নির্ধারিত হয়।
ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন ও রনি তালুকদার। ৩.৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫০ স্পর্শ করেন তারা। যা টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ৫০ রান বাংলাদেশের।
ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। এ জন্য ১৮ বল খেলেন তিনি। ২০০৭ সালে ২০ বলে করা মোহাম্মদ আশরাফুলের রেকর্ড ভেঙে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির নজির গড়েন লিটন।
লিটনের রেকর্ড হাফ-সেঞ্চুরিতে পাওয়ার প্লেতে ৮৩ রান পায় বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশের রান ১শ স্পর্শ করে। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। আয়ারল্যান্ডের লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটের বলে লং-অনে মার্ক অ্যাডায়ারকে ক্যাচ দেন রনি।
৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৩ বলে ৪৪ রান করেন রনি। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ বলে ১২৪ রান তুলেন লিটন-রনি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে নতুন রেকর্ড। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪৩ বলে ৯১ রানের সূচনা করেছিলেন লিটন-রনি।
১২তম ওভারের শেষ বলে থামেন লিটন। হোয়াইটের বলে উইকেটরক্ষক লরকান টাকারকে ক্যাচ দিয়ে ৪১ বল খেলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৩ রান করে আউট হন লিটন। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সেরা ইনিংস।
দলীয় ১৩৮ রানে লিটন ফেরার পর বাংলাদেশের রানের চাকা দ্রুত ঘুড়িয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে ২৯ বলে ৬১ রান তুলে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ এনে দেন তারা। নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৩ উইকেটে ২০২ রান করে বাংলাদেশ।
৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৩৮ রান করেন সাকিব। ১৩ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪ রানে আউট হন হৃদয়। সাকিবের সাথে ২ রানে অপরাজিত থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আয়ারল্যান্ডের হোয়াইট ২টি ও মার্ক অ্যাডায়ার ১টি উইকেট নেন।
১৭ ওভারে ২০৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। পেসার তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরেন আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং।
তাসকিনের মতো দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট শিকার করেন সাকিবও। রনিকে ক্যাচ দিয়ে সাকিবকে প্রথম উইকেট দেন ৬ রান করা লরকান টাকার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন সাকিব। রস অ্যাডায়ার ও গ্যারেথ ডেলানিকে ৬ রানে আউট করেন তিনি।
নিজের তৃতীয় ওভারেও জোড়া আঘাত হানেন সাকিব। এবার জর্জ ডকরেল ২ ও হ্যারি টেক্টরকে ২২ রানে বিদায় দেন সাকিব। এতে ৩ ওভারে ১৪ রানে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব। ১১৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন সাকিব। ২০১৮ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।
টেক্টরকে শিকার করে আন্তর্জাকি টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদিকে সরিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার হন সাকিব। ১১৪ ম্যাচে সাকিবের উইকেট এখন ১৩৬টি, ১০৭ ম্যাচে সাউদি শিকার আছে ১৩৪ উইকেট।
সাকিবের ঘূর্ণিতে ৪৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আয়ারল্যান্ড। এতে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে আইরিশরা। তবে ৭ নম্বরে ব্যাট হাতে নামা কার্টিস ক্যাম্ফার ঝড় তোলেন। ২৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে দলের রান ১শ পার করেন তিনি।
১৫তম ওভারে তাসকিনের বলে আউট হন ক্যাম্ফার। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩০ বলে ৫০ রান করেন তিনি।শেষ পর্যন্ত ১৭ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৫ রানে শেষ হয় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের সাকিব ২২ রানে ৫টি ও তাসকিন ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।