পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম শিরোপা নিজেদের করে নিলো ইংল্যান্ড। এর মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দুইবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে বসলো ইংলিশরা।
রোববার (১৩ নভেম্বর) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের পুঁজি গড়ে পাকিস্তান। স্বল্প রানের পুঁজি নিয়ে দারুণ লড়াই করে পাকিস্তান। তবে বেন স্টোকসের লড়াকু ব্যাটিংয়ে হার মানতে বাধ্য হয়। টি-টোয়ন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফিফটি হাঁকান তিনি।
৬ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। বল হাতে পেসার স্যাম কারান-স্পিনার আদিল রশিদ এবং ব্যাট হাতে বেন স্টোকসের দুর্দান্ত নৈপূন্যে অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা পাকিস্তানকে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের বেশি করতে দেয়নি ইংল্যান্ড। কারান ১২ রানে তিনটি ও রশিদ ২২ রানে দুই উইকেট শিকার করেন। পাকিস্তানের পক্ষে শান মাসুদ ৩৮ ও অধিনায়ক বাবর আজম ৩২ রান করেন। জবাবে স্টোকসের অপরাজিত ৫২ রানে ১৯ ওভারেই ১৩৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
৮০ হাজার ৪৬২ জন দর্শকের উপস্থিতিতে মেলবোর্নে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে প্রথমে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলার। ব্যাট হাতে নেমে প্রথম তিন ওভারে বল বাউন্ডারি পার করতে পারেননি পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন রিজওয়ান। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৯ রানে রিজওয়ানকে বোল্ড করেন ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার কারান। ১৪ বলে ১৫ রান করেন রিজওয়ান।
রিজওয়ানকে হারিয়ে পাওয়ার-প্লেতে ৩৯ রান করে পাকিস্তান। এ সময় ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারতে পারেন পাক ব্যাটাররা। অষ্টম ওভারের প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে উইকেট তুলে নেন ইংল্যান্ডের স্পিনার আদিল রশিদ। ১২ বলে ৮ রান করা হারিস রৌফকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান রশিদ।
তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে পাকিস্তানের রানের গতি বাড়ান বাবর ও চার নম্বরে নামা শান মাসুদ। ১২তম ওভারের প্রথম বলে পাকিস্তানকে আবারও বড় ধাক্কা দেন রশিদ। তার গুগলি বুঝতেও না পেরে বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দেন ২টি চারে ২৮ বলে ৩২ রান করা বাবর। তৃতীয় উইকেটে মাসুদ-বাবর ২৪ বলে ৩৯ রান করেন।
বাবর ফেরার পরের ওভারে ইফতেখার আহমেদকে শিকার করেন বেন স্টোকস। ৬ বল খেলে কোন রান করতে পারেননি ইফতেখার। ইফতেখার ফেরার পর ক্রিজে মাসুদের সঙ্গী হন শাদাব খান। ১৫ ওভারে দলের রান ১শতে নেন তারা। ১৬তম ওভারে ১৩ রান তুলেন মাসুদ ও শাদাব। ইনিংসের ১৭তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন কারান। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করা পাকিস্তানের পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে আউট হন মাসুদ।
মাসুদকে শিকারের পর ডেথ ওভারে পাকিস্তানের ব্যাটারদের মারমুখী হতে দেয়নি ইংল্যান্ডের দুই পেসার ক্রিস জর্ডান ও কারান। ১৭ থেকে ২০, শেষ চার ওভারে ১৮ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় পাকিস্তান। জর্ডান ও কারান দু’টি করে উইকেটে নেন। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। শাদাব ১৪ বলে ২টি চারে ২০ রান করেন।
৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে পাকিস্তানের সফল বোলার কারান। রশিদ ২২ রানে ও জর্ডান ২৭ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ৩২ রানে ১ উইকেট শিকার করেন স্টোকস। ফিল্ডিংয়ে লিয়াম লিভিংস্টোন একাই ৩টি ক্যাচ নেন।
জয়ের জন্য ১৩৮ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডেরও। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে বিনা উইকেটে ১৭০ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার অ্যালেক্স হেলস ও অধিনায়ক জশ বাটলার। তবে ফাইনালে দলীয় ৭ রানে বিচ্ছিন্ন হন তারা।
প্রথম ওভারের শেষ বলে হেলসকে বোল্ড করেন পাকিস্তান পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। সেমিতে অপরাজিত ৮৬ রান করে ম্যাচ সেরা হওয়া হেলস আজ করেন মাত্র ১ রান।
হেলস ফিরলেও মারমুখী মেজাজে ছিলেন বাটলার। তবে চতুর্থ ওভারেই আবার ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। তিন নম্বরে নেমে ৯ বলে ঝড়ো গতিতে ২০ রান করা সল্টকে বিদায় করেন পেসার হারিস রউফ।
পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে ইংল্যান্ড শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন রউফ। বাটলারকে থামিয়ে পাকিস্তানকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান রউফ। ভারতের বিপক্ষে অনবদ্য ৮০ রান করা বাটলার এবার ১৭ বলে ২৬ রানে আউট হন। আউট হওয়ার আগে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন বাটলার।
৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেলে চতুর্থ উইকেটে সাবধানে খেলে ইংল্যান্ডকে তা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুক। ৪২ বলে ৩৯ রান যোগ করেন তারা। কিন্তু ২৩ বলে ২০ রান করা ব্রুককে আউট করে জুটি ভেঙে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার শাদাব।
এ সময় জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৪৫ বলে ৫৪ রান। শেষ ৫ ওভারে ৪১ রান দরকার পড়ে ইংলিশদের। ১৬তম ওভারের প্রথম ডেলিভারির পর পায়ের ব্যথায় মাঠ ছাড়েন আফ্রিদি। তার ওভার শেষ করতে বোলিং করেন ইফতেখার। ইফতেখারের শেষ পাঁচ বলে ১৩ রান নেন স্টোকস ও মঈন আলি।
১৭তম ওভারে মঈনের ৩ চারে ১৬ রান পায় ইংল্যান্ড। এতেই ম্যাচের লাগাম হাতে নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মঈন ফিরলেও লিভিংস্টোনকে নিয়ে ৬ বল বাকি রেখে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন স্টোকস।
৪৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া স্টোকস ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪৯ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এবারের আসরে এটি প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তার। মঈন ১২ বলে ১৯ ও লিভিংস্টোন অপরাজিত ১ রান করেন।
পাকিস্তানের রউফ ২৩ রানে ২ উইকেট নেন। ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের কারান।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস