নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বল হাতে হিরো হয়েছিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও বল কিংবা ব্যাটে হিরো পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন দলনেতা সাকিব আল হাসান। তবে নিজেও ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি হিরোর দেখাও পাননি তিনি। বিপরীতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেয়েছে বাংলাদেশ।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে রাইলি রুশোর সেঞ্চুরিতে ২০৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। বল হাতে কোনো টাইগার বোলার হিরো হয়ে উঠতে পারেননি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়াদের অর্ধেক রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের ২১ বল বাকি থাকতেই ১০১ রানে গুটিয়ে গেছে টাইগারদের ইনিংস।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় তুলে নিয়েছে ১০৪ রানের ব্যবধানে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের করা রানের চেয়ে জয়ের ব্যবধানটাই বেশি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। মিডল অর্ডার ব্যাটার ইয়াসির আলির জায়গায় একাদশে জায়গা পান স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে মিরাজও জ্বলে উঠতে পারেননি, বল হাতে উইটেক শূন্য থাকার পর ব্যাট হাতেও হতাশ করেছেন।
বল হাতে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন আগের ম্যাচের হিরো পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারেই সাফল্য পান তিনি। ওভারের শেষ বলে ২ রান করা প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাকে বিদায় করেন তাসকিন। অবশ্য শুরুতে অধিনায়ককে হারালেও ভড়কে যাননি আরেক ওপেনার কুইন্ট ডি কক ও তিন নম্বরে নামা রাইলি রুশো।
ডি কক ও রুশোর ঝড়ে ৫ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান পৌঁছায় ৫৮ রানে। ষষ্ঠ ওভারে এ জুটির ঝড় থামায় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ১৮ মিনিট বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হলে দক্ষিণ আফ্রিকার রান গতি কিছুটা কমে আসে। দশম ওভারে ৩০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রুশো।
১৫তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমনে এসে ডি কক-রুশো জমানো জুটি ভাঙেন অকেশনাল অফ-স্পিনার আফিফ হোসেন। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে সৌম্যকে ক্যাচ দেন ডি কক। ৩৮ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৩ রান করেন কক। টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ৮৫ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৩ রানের জুটি গড়ের রুশো-কক।
১৭তম ওভারের শুরুতেই ট্রিস্টান স্টাবসকে থামিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান সাকিব। ওভারের চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে ২৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রুশো । এ জন্য বল খেলেছন ৫২টি। গত ৪ অক্টোবর ইন্দোরে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন রুশো।
ইনিংসের ১৯তম ও নিজের তৃতীয় ওভারে সেঞ্চুরিম্যান রুশো থামেন সাকিবের বলে। রুশোকে আউট করে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিকে স্পর্শ করেন সাকিব। সাকিব-সাউদির শিকার এখন সমান ১২৫ করে। ৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৫৬ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১০৯ রান করেন রুশো।
শেষ ৫ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে মাত্র ৩৪ রান দেন বাংলাদেশের বোলাররা। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান দক্ষিণ আফ্রিকার।
বিপরীতে বল হাতে সাকিব ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। তাসকিন ৩ ওভারে ৪৬ রানে, হাসান ৪ ওভারে ৩৬ রানে ও আফিফ ১ ওভারে ১১ রানে ১টি করে উইকেট নেন।
২০৬ রানের বিশাল টার্গেটে পেসার কাগিসো রাবাদার প্রথম ওভারেই ১৭ রান নেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। শান্ত ১টি চার ও সৌম্য ২টি ছয় মারেন। তবে এনরিচ নর্টির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সৌম্য ও চতুর্থ বলে শান্ত বিদায় নেন। সৌম্য ৬ বলে ১৫ ও শান্ত ৯ বলে ৯ রান করেন।
২৭ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ধস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপে। ৩ উইকেটে ৩৯ থেকে ৮৫ রানে পৌঁছাতেই ৮ উইকেট নেই টাইগারদের। এ সময় দলের স্বীকৃত ব্যাটার সাকিব-আফিফ ১, মিরাজ ১১, মোসাদ্দেক শূন্য, নুরুল ২ রান করে ফিরেন। এক প্রান্ত আগলে খেলতে থাকা লিটন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করে আউট হন।
৮৯ রানে নবম উইকেট পতনে ১শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। শেষ দিকে মোস্তাফিজের ৩ বলে ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৯ ও তাসকিনের ১০ রানের সুবাদে ১শ রান স্পর্শ করতে পারে বাংলাদেশ। তবে ১৬ দশমিক ৩ ওভারে ১০১ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।
৩ দশমিক ৩ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার নর্টি। শামসি ৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকানো দক্ষিণ আফ্রিকার রুশো।
এদিকে, ২ খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ পয়েন্ট। ফলে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের অবস্থান এখন তিন নম্বরে। ৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থনে ভারত।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস