টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচেই রেকর্ড গড়লো নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। ব্যাটারদের দুর্দান্ত পারফর্মে বড় সংগ্রহ গড়ার পর বাকি কাজটা ছাড়লেন বোলাররা। ব্যাটিংয়ে ২শ রানের ইনিংস গড়ার পর অস্ট্রেলিয়াকে ১১১ রানে গুটিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। এর ফলে রেকর্ড গড়া জয়ের সাথে দীর্ঘ ১১ বছরের অপেক্ষার অবসানও ঘটাল কিউইদের।
সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্ব কাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। এবার অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিলো তারা। অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে জয়ে তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
রান বিবেচনায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি ষষ্ঠ বড় জয়। আর নিজেদের টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ বড় ব্যবধানে জয় পেল নিউজিল্যান্ড। ফলে মধুর প্রতিশোধের সাথে জয়ের রেকর্ডও গড়লো নিউজিল্যান্ড।
শনিবার (২২ অক্টোবর) সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। ফিন অ্যালেনকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন ডেভন কনওয়ে। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্কের প্রথম ওভার থেকে ১৪ রান তুলেন অ্যালেন। ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে জশ হ্যাজেলউডকেও পাত্তা দেননি অ্যালেন ও কনওয়ে। কনওয়ে ২টি চার ও অ্যালেন ১টি বাউন্ডারিতে ১৫ রান তুলেন।
স্টার্ক-হ্যাজেলউডের করা প্রথম দুই ওভার থেকে ২৯ রান তোলেন অ্যালেন ও কনওয়ে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তৃতীয় ওভারে প্যাট কামিন্সকে আক্রমণে আনেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। এ ওভার থেকেও ১৭ রান আসে। অ্যালেন ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন। অবশ্য ওভারের দ্বিতীয় বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান অ্যালেন।
স্টয়নিসের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে নিউজিল্যান্ডের রান পঞ্চাশে পৌঁছে দেন অ্যালেন। তাতে ৪ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ড রান গিয়ে দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৬ রানে। পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বোলিং আক্রমণে এসেই সাফল্য পান হ্যাজেলউড।
ভয়ঙ্কর রূপে থাকা অ্যালেনকে বোল্ড করেন হ্যাজেলউড। ২৬২ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ১৬ বল খেলে ৪২ রান করেন অ্যালেন। তার বিধ্বংসী ইনিংসে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ২৫ বলে ৫৬ রান করেন অ্যালেন ও কনওয়ে। অ্যালেনের বিদায়ে ক্রিজে এসেই বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অ্যালেন ঝড়ে পাওয়ার-প্লেতে ১ উইকেটে ৬৫ রান পায় নিউজিল্যান্ড।
পাওয়ার-প্লে শেষ হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের রানের গতি ধরে রাখেন কনওয়ে ও উইলিয়ামসন। ১১তম ওভারের প্রথম বলে উইলিয়ামসনের ছক্কায় নিউজিল্যান্ডের স্কোর ১শ পৌঁছায়। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পার করা ইনিংসের ১৩তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কনওয়ে। এ জন্য খেলেন মাত্র ৩৬ বল।
একই ওভারে শেষ বলে উইলিয়ামসনকে শিকার করে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন জাম্পা। ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৩ রান করেন উইলিয়ামসন। কনওয়ের সাথে ৫৩ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। উইলিয়ামসন যখন ফিরেন, তখন ইনিংসের ৭ ওভার বাকি ছিল। তৃতীয় উইকেটে গ্লেন ফিলিপসের সাথে ১৮ বলে ২৭ রান তুলেন কনওয়ে।
চতুর্থ উইকেটে জেমস নিশামকে নিয়ে ঝড় তোলেন কনওয়ে। শেষ ২৪ বলে ২শ স্ট্রাইক রেটে ৪৮ রান যোগ করেছেন তারা। এ সময় নিশাম ২টি ছক্কা ও কনওয়ে ২টি চার মারেন। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মারেন নিশাম। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০০ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। এবারের আসরে এটিই প্রথম ২শ ও সর্বোচ্চ দলীয় রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থবারের মত ২শ রান করলো নিউজিল্যান্ড।
৫৮ বল খেলে সাত বাউন্ডারি ও দুই ওভার বাউন্ডারিতে ৯২ রানে অপরাজিত থাকেন কনওয়ে। ২টি ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাম। বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার হ্যাজেলউড ৪ ওভারে ৪১ রানে ২ উইকেট নেন। ৪ ওভারে ৩৯ রানে ১ উইকেট নেন জাম্পা।
২০১ রানের বিরাট টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নারকে ৫ রানে বিদায় করেন নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি। ওয়ার্নারের পর পাওয়ার-প্লেতে আরও ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে ১৩ রানে স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও মিচেল মার্শকে ১৬ রানে বিদায় করেন সাউদি।
৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। এ পরিস্থিতিতে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন স্টয়নিস ও টিম ডেভিড। কিন্তু পরপর দু’ওভারে স্টয়নিস ও ডেভিডকে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারের মুখে ঠেলে দেন স্যান্টনার। ৬৮ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় অসিরা।
এরপর ১৩তম ওভারে ম্যাথু ওয়েড ও ১৪তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বিদায় নিলে অস্ট্রেলিয়ার হার নিশ্চিত হয়ে যায়। ওয়েড ২ ও ম্যাক্সি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান করেন কামিন্স। শেষদিকে ট্রেন্ট বোল্টের তোপে ১৭ দশমিক ১ ওভারে ১১১ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
সাউদি ৬ রানে ও স্যান্টনার ৩১ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। বোল্ট ২৪ রানে ২টি শিকার করেন। আর ম্যাচ সেরা হয়েছেন কনওয়ে।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস