ত্রিদেশীয় সিরিজের টাইটেল স্পন্সর ছিল বাংলাদেশি কোম্পানি ‘বাংলা ওয়াশ’। বাংলা ওয়াশ শব্দটি শুনলেই ক্রিকেটমোদী দর্শকদের মনে আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়। কিন্তু বাংলা ওয়াশের স্পন্সরশীপে যখন বাংলাদেশ নিজেই বাংলা ওয়াশ হয়ে যায় তখন হতাশার মরুভূমিতে বসবাস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতেই পাকিস্তান, এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই হারের পর আবারও বাবর আজমদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের ফলফলও একই বাংলাদেশের। কোনও জয় ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিউজিল্যান্ডে সারতে হলো। এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। তবে সিরিজে বাংলাদেশের প্রতি ম্যাচের পারফর্মেন্স আর পরীক্ষা-নীরিক্ষায় মনে হতেই পারে বিশ্বকাপের আগে এ যেন এক শিশু দলের শিক্ষা সফর।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) হ্যাগলি ওভালে আগে ব্যাট করে লিটন ও সাকিবের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে ৬ উইকেটে ১৭৩ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে শেষ ওভারে পাকিস্তান ৭ উইকেটে অনায়াসে জয় তুলে নেয়। ম্যাচ শেষে নিজেদের আস্থার জায়গা শক্ত করার চেয়ে বরং খানিক নড়বড়ে অবস্থাতেই আছে বাংলাদেশ।
তবে আশার কথা এতটুকুই যে, শেষ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে খানিকটা উন্নতির ছাপ দেখা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের চিরাচরিত যে ব্যাপারটি হয় তা হলো ব্যাটিংয়ে ভালো করলে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতার ক্লাইমেক্স রাখতেই হবে। কিন্তু টানা চার হারে শূন্য হাতে বিশ্বকাপ মঞ্চে দাঁড়াতে হচ্ছে সাকিব-লিটনদের।
সবচেয়ে বড়কথা বাংলাদেশ সব ম্যাচই হেরে যাচ্ছে৷ হারতে হারতে কিভাবে জিততে হয় সেটাই ভুলতে বসেছে এই দলটি৷ একদিন ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে তো একদিন বোলিং ভালো হচ্ছে৷ আবার, যেদিন ব্যাটিং ভালো হচ্ছে সেদিন বোলিং খারাপ হচ্ছে। যেদিন ব্যাটিং বোলিং দুটোই ভালো সেদিন বাজে ফিল্ডিং আর গুরুত্বপূর্ণ উইকেটের ক্যাচ মিস করার মহড়া চলে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, প্রতিপক্ষ দলের সামর্থ্যে ভাটা পড়লে তবেই জয় পাওয়া সম্ভব টাইগারদের। নিজেদের সামর্থ্যে কুলিয়ে জয় পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে দুর্বল প্রতিপক্ষ ছাড়া।
মুশফিক, রিয়াদ, তামিমকে ছাড়াই সাকিবের লড়াই যেন অসহায়ের মতো। একাই এক প্রান্তে লড়াই করে যান। আর কখনো অধারাবাহিকভাবে একেকদিন একেকজন একটু অবদান রাখেন ম্যাচে। সেই অবদান ওভাবে দলের কোনও জয়ে কার্যকারী হয় না।
এ সিরিজের অন্তত শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতো। উল্টো বাংলা ওয়াশ তকমাটা অন্তত এড়ানো যেত। কিন্তু ওপেনিং পার্টনারশীপ বার বারই ভোগাচ্ছে টিম টাইগারকে। পাকিস্তানের সাথে ম্যাচেও শান্ত ব্যর্থতার বেড়াজালে আটকানো।
ইনিংসের প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান আসে। প্রথম পাওয়ার প্লেতে যেখানে সব দল চড়াও হয়ে খেলে সেখানে উল্টো শান্ত ৯ বলে ১ রান করেন। তখনি দল শুরুর চাপে পড়ে যায়। আর সাইফুদ্দীনকে বলা যায় এই ম্যাচ হারের টার্নিং পয়েন্ট।
সাইফুদ্দিন ২৩ বলে ৫৩ রান খরচের পর ফিল্ডিংয়ে বাবর আজমের ক্যাচ ফেলে দেন! বাংলাদেশ দল প্রয়োজনে বেশি রান নিতে পারলেও রান দিতে পারে খুব সহজেই। এটা বরাবরই প্রমাণিত।
২০ ওভারের খেলায় দুইটা জায়গায় রান তোলার তারা থাকে প্রথম ৬ ওভার, শেষ ৫ ওভার আর সেখানেই আমাদের ব্যটারদের সব চেয়ে বড় দুর্বলতা। অথচ, শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশ পায় মাত্র ১২ রান। পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশের গড় রান ৪০। তবে শেষ ম্যাচে ব্যাটাররা তুলেছেন ৪১ রান। ১০ ওভারে রান পায় ৮০। পরের ১০ ওভারে ৯৩ রান তুললেও তা যথেষ্ট ছিল না। আর শেষ ওভারে তোলে মাত্র ৩ রান।
টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট আফিফ ৪ ম্যাচে করেছে ৬৪ রান আর শান্ত ৩ ম্যাচে ৫৬ রান। আর জিম্বাবুয়ের সাথে দুই ম্যাচ ভালো করে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট খেতাব পাওয়া মোসাদ্দেক ৩ ম্যাচে করছে মাত্র ১১ রান।
ত্রিদেশীয় সিরিজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে, আদর্শ কম্বিনেশন ঠিক করা হবে, খেলোয়াড়দের বিভিন্নভাবে নীরিক্ষা করে দেখা হবে। টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম সেই কাজটাই করছেন। কিন্তু, অর্জনের খাতা কতটা ভরলো শ্রীরামের সেটাই প্রশ্ন!
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা দেবার আগের প্রস্তুতি মঞ্চে যাওয়া বাংলাদেশ এবার সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলবে। ২৪ অক্টোবর খেলবে নিজেদের প্রথম ম্যাচ। এর আগে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচও আছে। এখন দেখার বিষয়, নিউজিল্যান্ডের ব্যর্থ মিশন শেষে অস্ট্রেলিয়ায় গোটা বাংলাদেশ কেমন খেলে।
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পর মূল পর্বে কোনও ম্যাচ না জেতা ওই রূপে নিশ্চয় কোনও ক্রিকেটমোদী দেখতে চাইবে না ১৫ বছর পরের বাংলাদেশকে। এরই সাথে কেউ দেখতেও চাইবে না নতুন কোনও বাংলা ওয়াশ।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস