ভানুকা রাজাপাকসের অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংসে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। ৫৮ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর রাজাপাকসার ইনিংসেই জয়ের ভীত গড়ে লঙ্কানরা। ব্যাটের পর বল হাতে প্রমোদ মধুশান-ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাদের তোপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ রানের জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) এশিয়া কাপের ১৫তম আসরের ফাইনাল ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা। টস জিতে প্রথমে বোলিং করা পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা ব্যাটারদের চেপে ধরে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেয় পাকিস্তান।
পরপর উইকেট হারিয়ে দলীয় ৫৮ রানেই শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটার ফিরেন সাজঘরে। তবে শেষ পর্যন্ত ভানুকা রাজাপাকসের অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের লড়াকু স্কোর পায় শ্রীলঙ্কা।
১৭১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারের শেষ বলে ১৪৭ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ফলে ২৩ রানের জয় নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলে শ্রীলঙ্কা।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে পাকিস্তান প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে বল হাতে আক্রমণে এসেই সাফল্য এনে দেন পেসার নাসিম শাহ। ওভারের তৃতীয় বলে দারুণ এক ইন-সুইংয়ে রানের খাতা খোলার আগেই কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করেন নাসিম। এরপর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসেই দ্বিতীয় বলে নিশাঙ্কাকে বিদায় করেন পেসার হারিস রউফ। এরপর ৫ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩৬।
পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে পাকিস্তানকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন রউফ। ওভারের প্রথম বলে হাফ-ভলি ইন-সুইংয়ে দানুস্কা গুনাথিলাকার উইকেট উপড়ে ফেলেন রউফ। ১ রান করেন আসরে পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়া গুনাথিলাকা। ৩ উইকেট শিকার করে পাওয়া-প্লেতে প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নেওয়ার নজির গড়ে পাক বোলাররা।
পাকিস্তানের বোলারদের দাপটের মাঝে যার হাত ধরে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা ঘুড়ছিলো সেই ধনাঞ্জয়াকে অষ্টম ওভারে বিদায় করেন অফ-স্পিনার ইফতিখার আহমেদ। ইফতিখারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ধনাঞ্জয়া ৪টি চারে ২১ বলে ২৮ রান করেন।
ধনাঞ্জয়া ফেরার পরের ওভারে শ্রীলঙ্কার পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান পাকিস্তানের লেগ-স্পিনার শাদাব খান। শাদাবের মিডল-স্টাম্পের ফুল পিচড বলকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ভুল শটে বোল্ড হন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা (২)। শানাকার আউটে নবম ওভারে ৫৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কাকে সেই চাপ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন ভানুকা রাজাপাকসে ও হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। রানের গতি বাড়িয়ে পাকিস্তানের বোলারদের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেন রাজাপাকসে-হাসারাঙ্গা জুটি। পরের ছয় ওভারে ছয়টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তারা। ১৪তম ওভারে শ্রীলংকার রান ১শ স্পর্শ করে। ওই ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১০৬ রান দাঁড় করায় লঙ্কানরা।
১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ করেন রাজাপাকসে ও হাসারাঙ্গা। আর তৃতীয় ও চতুর্থ বলে দু’টি চার মেরে পঞ্চম ডেলিভারিতে আউট হন হাসারাঙ্গা। ১৫তম ওভারে দলীয় ১১৬ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে হাসারাঙ্গার বিদায়ে রানের গতি কমে শ্রীলঙ্কার। পরের ১০ বলে কোন বাউন্ডারি পায়নি লঙ্কানরা।
নাসিমের করা ১৭তম ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন রাজাপাকসে ও চামিকা করুনারত্মে। আর ১৮তম ওভারে চতুর্থ বলে জীবন পেলেও শেষ বলে ১ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রাজাপাকসে। ৩৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ৫টি চার ও ১টি ছয়ের সহায়তা নেন তিনি।
হাসনাইনের করা ১৯তম ওভারের প্রথম ৫ বল থেকে মাত্র ২ রান নিতে পারেন রাজাপাকসে ও করুনারত্নে। তবে ছক্কা মেরে ওভারটি শেষ করেন রাজাপাকসে। শেষ ওভারে বল হাতে আক্রমণে আসেন নাসিম। প্রথম চার ডেলিভারিতে ৫ রান ওঠে। পঞ্চম বলে চার মারেন রাজাপাকসে। আর শেষ বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে ছক্কা মারেন রাজাপাকসে। এতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা।
সপ্তম উইকেটে চামিকা করুনারত্নের সাথে ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রান যোগ করেন রাজাপাকসে। সেখানে ১৭ বলে ৩৪ রান তুলেন রাজাপাকসে। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৫ বলে অপরাজিত ৭১ রান করেন রাজাপাকসে। ১৪ বলে ১৪ রান করেন করুনারত্নে। পাকিস্তানের রউফ ৪ ওভারে ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ উইকেটে ১১০ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। তবে এরপর রান তোলোর চাপে থাকা পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধস নামে। ১১২ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। ফলে জয়ের জন্য ৩ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৩ ওভারে ৫৯ রানের প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের।
শেষ পর্যন্ত পুরো ২০ ওভার খেলে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ৫৪ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার মধুশান ৩৪ রানে ৪টি ও হাসারাঙ্গা ২৭ রানে ৩টি উইকেট নেন।
শ্রীলঙ্কার এটি ষষ্ঠ এশিয়া কাপ শিরোপা। এর আগে পাঁচবার এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ১৯৮৬, ১৯৯৭, ২০০৪, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এশিয়া সেরা দল হয়েছিল লঙ্কানরা। তবে আরও ছয়বার ফাইনালে ওঠেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি দ্বীপ রাষ্ট্রটি।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস