দুই দল মিলে ৪০ ওভারে রান তুললো ৪২৭! অথচ এর মধ্যেও পরাজিত দলের হারের ব্যবধান ৩৭ রান। কারণ, প্রথম ইনিংসেই যে জয়ী দল ইংল্যান্ড পরাজিত দল দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ছুড়ে দিয়েছিল ২৩৪ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য। যে লক্ষ্য তাড়া করতে না পেরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে সফরকারীরা।
বুধবার (২৭ জুলাই) ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাট চালিয়ে আফ্রিকার অধিনায়ক ডেভিড মিলারের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছিলেন ইংলিশ ব্যাটাররা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক জস বাটলারকে হারায় ইংল্যান্ড। কিন্তু এর আগে বাটলার মাত্র সাত বলে দুই ছয় ও দুই চারে ২২ রানের ঝড়ো শুরু এনে দিয়েছেন দলকে। বাটলার যেভাবে শুরু এনে দিয়েছিলেন, সেভাবেই ইনিংসের গতি বজায় রেখেছেন বাকি ইংলিশ ব্যাটাররা।
বাটলার আউট হওয়ার পর রয়ও দ্রুত ফিরে যান। মনে হচ্ছিল ইংলিশরা হয়তো একটু চাপে পড়লো, কিন্তু চাপ জিনিসটাকে ধারেই ঘেসতে দিলেন না জনি বেয়ারস্টো, মালান, মঈনরা।
বাংলাদেশের পর ভারতের বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে আফ্রিকান বোলারদের উপর ঝড় শুরু করেন ডেভিড মালান। দলীয় ১১২ রানে মাত্র ২৩ বলে ৪৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে মালান আউট হলে ভাঙে দু’জনের ৭১ রানের জুটি।
চারে নেমে মঈন যেন এদিন ছোট ক্রিকেট বলটাকে ফুটবল দেখা শুরু করেছিলেন। উইকেটে এসেই তান্ডব চালানো শুরু করেন এই বাঁহাতি ইংলিশ ব্যাটার। তার সামনে আফ্রিকার বোলারদের পাড়ার বোলার মনে হচ্ছিল।
মাত্র ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি। তার ব্যাটিংয়ের সামনে বেয়ারস্টোও যেন দর্শক হয়ে গিয়েছিলেন। ১৮ বলে ছয় ছক্কা ও দুইটি চারের সাহায্যে ৫২ রানে মঈন আলি আউট হলে ভাঙে তাদের ৯৪ রানের টর্নেডো জুটি।
মঈন আউট হওয়ার পর তান্ডব শুরু করেন বেয়ারস্টো। আট ছয় ও তিন চারে মাত্র ৫৩ বলে ৯০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ফেরেন দলীয় ২৩৩ রানে একেবারে ইনিংসের শেষ বলে।
এক ইনিংসে দুইটি পুরোনো রেকর্ড নতুন করে লিখেছেন ইংলিশ ব্যাটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ইনিংসের পাশাপাশি এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ২০টি ছয়ও এই ম্যাচেই মেরেছেন মঈন, বেয়ারস্টোরা। এর আগে আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৩০ রান সর্বোচ্চ ছিল ইংল্যান্ডের।
ফলে এই ম্যাচ জিততে হলে রেকর্ড গড়েই জিততে হতো সফরকারীদের। একই সাথে ২৩৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে ঝড়ো শুরু প্রয়োজন ছিল আফ্রিকার।
কিন্তু ঝড়ো শুরু তো দূরের কথা, ইনিংসের শুরুতেই জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা। আফ্রিকার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে চার বলের ব্যবধানে কুইন্টন ডি কক ও ছয় বছর পর একাদশে ফেরা রাইলি রুশোকে ফিরিয়ে ধাক্কা দেন ইংলিশ পেসার রিচ টপলি।
এরপর হেনরিচ ক্লাসেনকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার রেজা হেনরিকস। দলীয় ৭২ রানে ১৪ বলে ২০ রানে আদিল রাশিদের বলে ক্লাসেন ফিরে গেলে ভাঙে তাদের ৬৫ রানের জুটি।
দুই ওভার পর ব্যক্তিগত ৫৭ রানে ফিরে যান রেজাও! এরপরের গল্পের ট্রাজেডি নায়ক শুধুই আফ্রিকান ব্যাটার ট্রিস্টান স্টাভস। একা হাতেই আফ্রিকার জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেন তিনি।
মাত্র ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছোঁয়া স্টাভসকে কোনো আফ্রিকান ব্যাটারই ঠিকমতো সঙ্গ দিতে পারেনি। মাত্র ২৮ বলে আট ছয় ও দুই চারে ৭২ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন তিনি। বাকিদের সঙ্গ পেলে হয়তো ম্যাচ বের করে আনতে পারতেন।
রেজা ও স্টাভস ছাড়া আর কোনো আফ্রিকান ব্যাটারই বলার মতো রান করতে পারেননি। ফলে হারতেও হয়েছে বড় ব্যবধানে।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের ২য় ম্যাচে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনসে মুখোমুখি হবে দল দু’টি। ঐ ম্যাচে সিরিজ বাঁচাতে জয়ের কোনো বিকল্প নেই আফ্রিকার সামনে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি