টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সময়টা মোটেও ভালো কাটছে না। এমন সময়ই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে অধিনায়কের দায়িত্বভার পেয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। ঘরোয়া ক্রিকেটে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতার কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কের ব্যাটনটা তার হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আপাতদৃষ্টিতে অধিনায়কের ব্যাটনটা খুব দ্রুত পেলেও সোহান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন আরও ছয় বছর আগে। অবশ্য মাঝে চার বছর জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে। জাতীয় দলে যখন নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন, সেই সময়ই তার কাঁধে উঠেছে জাতীয় দলের নেতৃত্বভার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগেই দেশের সেরা উইকেটকরক্ষক হিসেবে বিবেচিত হওয়া সোহান টিম কম্বিনেশনের কারণে ক্যারিয়ারের শুরুতে পাকা করতে পারেননি জাতীয় দলের নিজের জায়গা। মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ার সায়াহ্নে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া সোহান অধিনায়ক হিসেবে কতটুকু সফল হন তাই দেখার পালা।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সপ্তম অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের ক্যারিয়ার এক নজরে দেখলে খুব একটা ভালো লাগবে না। এখন পর্যন্ত ৩৩ টি-টোয়েন্টি খেলা সোহান ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন ২৯ ইনিংসে। সেই সময়ে ১১১.৯৮ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ২৭১ রান।
ক্যারিয়ারে এখনো ছুঁতে পারেননি কোনো অর্ধশতক, এমনকি রান ৩০ এর কোটা ছুঁয়েছে কেবল মাত্র একবার। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন তৃতীয় ম্যাচে। সেই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল অপরাজিত ৩০ রান।
ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে ব্যাট করায় খুব বেশি বল মোকাবিলার সুযোগ মেলে না সোহানের। ক্যারিয়ারে ২৯ বার ব্যাটিংয়ে নামা সোহান নিজেকে অপরাজিত রাখতে পেরেছিলেন ৮ ইনিংসে। অপরাজিত থাকা ইনিংসগুলো থেকে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৯২ রান। এই সময়ে তার সেরা ইনিংস ৩০ রান।
আগেই বলেছি ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে ব্যাটিং করেন সোহান। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার পরিসংখ্যানেও। ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করেছেন সোহান। এই পজিশনে ১৪ ইনিংসে ব্যাট করে ১১৩.৩৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১২৭ রান। তিনবার এই পজিশনে ব্যাট করতে নেমে অপরাজিত ছিলেন।
আরও পড়ুন- সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করে অধিনায়কত্ব পেলেন সোহান
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ বার ষষ্ঠ পজিশনে ব্যাট করেছেন নুরুল হাসান সোহান। এই পজিশনে সোহানের স্ট্রাইক রেট মোটেও টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়। ৯২.৩০ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৬০ রান। এছাড়াও ৮ নম্বরে পজিশনে ৪ বার ব্যাট করতে নেমে ১৩০.৯৫ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৫৫ রান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা খেলেছেন এই ৮ নম্বর পজিশনেই।
৪ ও ৫ নম্বর পজিশনে ব্যাট করেছেন যথাক্রমে ১ ও ৩ বার। এই দুই পজিশনে যথাক্রমে ২০০ ও ৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে করেছেন যথাক্রমে ১৬ ও ৬ রান। আর বাকি ইনিংসে সোহান ব্যাট করতে নেমেছিলেন ৯ নম্বর পজিশনে। ওইখানে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৭ রান। ছিলেন অপরাজিত।
অবশ্য ব্যাটিংয়ের চেয়ে সোহান সবচেয়ে বেশি নজর কাড়েন উইকেটের পিছনে। দারুণ উইকেট কিপিংয়ে নজর কাড়া সোহান এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের ডিসমিসাল করেছেন ২৩ টি। প্রতি ম্যাচে গড়ে ০.৭১৮ ডিসমিসাল রয়েছে তার।
এছাড়াও উইকেটে পিছনে দাঁড়িয়ে ফিল্ডার কিংবা বোলারদের নিয়মিত উৎসাহ দেওয়া কিংবা ব্যাটারদের বিরক্তির কারণ হতে জুড়ি নেয় সোহানের। তার এই আগ্রাসী মনোভাবটিই মনে ধরেছে বিসিবির। তাই তো তার হাতেই তুলে দিয়েছে অধিনায়কত্বের ব্যাটন।
শুধু জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য তাকে অধিনায়ক করা হলেও আপাতদৃষ্টিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কের পদে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আর গুঞ্জন সত্যি করে সাকিব আল হাসান অধিনায়কের দায়িত্বভার না নিলে হয়তো সোহানের কাঁধেই যেতে পারে নেতৃত্বভার।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর