জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান লক্ষ্য বলে জানালেন টাইগার সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) কারণে দেশে না থাকায় রোববার সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। আসন্ন সিরিজ নিয়ে বেশ আশাবাদি মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই সিরিজ জয় করা। এটাই আমাদের একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য।’
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ঐ ম্যাচে হেসেখেলে জয় পেয়েছিল টাইগাররা। বোলারদের নৈপুণ্যে আফগানদের ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দলটি। এরপর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কখনো মোকাবেলা করেনি বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।
চার বছর আগের সেই আফগানিস্তান এখন আর আগের চেহারায় নেই। বদলে গেছে আফগানদের দলের চিত্রপট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বাধিক উন্নতি করার দল আফগানিস্তান। তাই আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দলটি। বর্তমানে অষ্টমস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
এমন অবস্থায় ভারতের দেরাদুনে আগামী মাসে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। এ প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি সিরিজের লড়বে দু’দল। ঐ সিরিজে জয় ছাড়া অন্য কোন কিছুই ভাবছে না বাংলাদেশ। এমনটাই জানালেন মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘নতুন দলগুলোর মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আফগানিস্তান। তারা ভালো পারফরমেন্স করছে। ক্রিকেটের জন্য নতুন দলের উন্নতি ভালো লক্ষণ। আমাদের জন্য এটা অন্যরকম চ্যালেঞ্জের। আমাদের সুনাম ধরে রাখতে এই সিরিজে জয়ের বিকল্প নেই। আশা করি ভালো ক্রিকেট খেলে, সিরিজ জিতে আসতে পারব আমরা।’
শক্তি ও র্যাংকিংয়ের বিচারে ছোট ফরম্যাটে কিছুটা এগিয়ে আফগানিস্তান। কিন্তু কাগজ-কলমের হিসাবটা অন্যভাবে ব্যাখা দিলেন মাহমুদুল্লাহ, ‘দুই দলের শক্তির জায়গা দুই রকম। আমাদের ব্যাটিং শক্তি একরকম। অবশ্যই আমাদের ব্যাটিং গভীরতা এবং অভিজ্ঞতা তাদের চেয়ে এগিয়ে। আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স খুব ভালো। বোলিং অনেক বেশি ভালো। তারকা ক্রিকেটারও আছে তাদের। ফলে দু’দলের শক্তির জায়গা দু’রকম। যদি পেস আক্রমণ দেখা হয়, তাদের চেয়ে আমাদের পেস আক্রমণ বেশি সমৃদ্ধ। রুবেল, মোস্তাফিজুর অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলছে। এছাড়া তরুণদের মধ্যে রনি-রাহী খুব ভালো বোলার। যদি স্পিনের কথা বলা হয়, তবে সাকিব বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। অপু ভালো করছে। তাদের স্পিন বিভাগে রশিদ-মুজিব আছে। যেটা আগে বললাম, আমাদের খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। এর বাইরে সহজ কোনো অপশন নেই।’
সর্বশেষ শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল খেলতে পারায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বাংলাদেশের। তবে শ্রীলঙ্কায় পাওয়া সাফল্য ভুলে নতুন চ্যালেঞ্জে মনোযোগী হতে চান মাহমুদুল্লাহ, ‘নিদাহাস ট্রফির চিন্তা করছি না। সেটা এখন অতীত। সেটা নিয়ে আমি চিন্তাও করছি না। এই সিরিজটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। খুব একটা সহজ হবে না। আমাদের খুব ভালো ক্রিকেটখেলেই সিরিজ জিততে হবে। তাই প্রতিটি খেলোয়াড়কে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি এবং চেষ্টা করছি সবাই মিলে কিভাবে ভালো পারফরম্যান্স করা যায়।’
অন্যান্য সিরিজের মত আফগানিস্তানের সিরিজকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জটা এভাবে দেখি, আমরা যখন খেলি সেটাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিছুদিন আগেও আমাদের সামনে প্রশ্নবোধক একটা চিহ্ন ছিল। এখন সেটা আমাদের সামনে থেকে সরে গেছে। ডে-বাই-ডে আমরা উন্নতি করছি। এই সিরিজটি আমাদের জন্য আরও একটি সুযোগ, প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য। এই সিরিজটি জিততে পারলে, পরবর্তী সব সিরিজে আমাদের সুযোগ তৈরি হবে।’
নিদাহাস ট্রফির মত আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও দলের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। বোলিং বিভাগের পাশাপাশি প্রধান কোচের দায়িত্বও পালন করবেন তিনি। তবে সিরিজে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটিং কোচ থাকবে না। ব্যাটিং কোচ না থাকায় নিজেদেরই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার ইঙ্গিত দিলেন মাহমুদুল্লাহ, ‘ব্যাটিং কোচ না থাকায় দায়িত্ব বেড়েছে নিজেদের ওপর। আমরা মনে করি, এটা আমাদের জন্য আরও বড় একটি সুযোগ। ওয়ালশ আছেন, সুজন ভাই আছেন। আমি গত পড়শু যখন নেটে ব্যাটিং করছিলাম, অনেক বেশি তাড়াহুড়ো করছিলাম। তখন ওয়ালশ এসে আমাকে পরামর্শ দিলেন তুমি তোমার টাইমিংটার ওপর আরও একটু মনোযোগী হও। ছোট খাটো এমন উপদেশ সে দিচ্ছে। এমন উপদেশ আমাদের কাজেও লাগে। সবাই সাহায্য করছে। তাই এখন এটা আমাদেরও দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নিয়ে আমরা যেন সেরা পারফরম্যান্সটা করতে পারি।’
নিদাহাস ট্রফির মত আফগানিস্তান সিরিজে বাংলাদেশ দলে পেস অলরাউন্ডার সৌম্য সরকার ও আরিফুল হক। এই দু’জনের কাছ থেকে ভালো পারফরমেন্স আশা করছেন মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘পেস অলরাউন্ডারদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পেস বোলিং অলরাউন্ডার দলের ব্যালেন্স আরো ভালো করে দেয়। আমাদের আরিফুল-সৌম্য আছে। তাদের ভালো করার সুযাগ আছে। নিদাহাস ট্রফিতে সৌম্য খুব ভালো বোলিং করেছে। তাদের দু’জনের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি।’
এদিকে এক বছর পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দলে সুযোগ পেয়েছেন স্পিন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন ৗসকত। চোখের সমস্যার কারণে গেল বছরের জুন থেকে বাংলাদেশ দলের বাইরে ছিলেন মোসাদ্দেক। এরপর সুস্থ হয়ে চলতি বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আবারো জাতীয় দলে ফিরেন তিনি। গেল বছরের এপ্রিলে কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন মোসাদ্দেক। দীর্ঘদিন পর ফিরলেও মোসাদ্দেককে নিয়ে আশাবাদি মাহমুদুল্লাহ, ‘মোসাদ্দেক দলে ফেরায় ভালো হয়েছে। সে ফেরাতে দল ব্যালেন্স হয়েছে।’