জোড়া ফিফটিতে বড় সংগ্রহ ছিল টাইগারদের। তবে বোলিংয়ে বাজে ফিল্ডিংয়ের সাথে ক্যাচ মিসের মহড়ায় পেল হারের স্বাদ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
রোববার (২৪ অক্টোবর) টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেচ হারিয়ে ১৭১ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ওপেনার নাঈম শেখ (৬২) এবং মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে (৫৭*) বড় সংগ্রহ পায় টাইগাররা।
তবে বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিং ও ক্যাচ মিসের ম্যাচে ৭ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে চারিথ আশালাঙ্কা অপরাজিত ৮০ এবং ভানুকা রাজাপাকসে ৫৩ রান করেন।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ১৭২ রানের টার্গেটে এক সময় সাকিব আল হাসানের জোড়া আঘাতে ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ম্যাচে টিকে থাকার লড়াইয়ে চারিথ আসালঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসের দেওয়া দুই ক্যাচ ফেলে বাংলাদেশকে হারের মুখে ঠেলে দেন লিটন দাস।
বোলিং ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন বিশ্বকাপে প্রথবারের মতো খেলতে নামা স্পিনার নাসুম আহমেদ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই শ্রীলঙ্কার ওপেনার ১ রান করা কুশল পেরেরাকে বোল্ড করেন নাসুম।
শুরুতেই উইকেট হারলেও দলকে চাপে পড়তে দেননি আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আসালঙ্কা। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের উপর চড়াও হন আসালঙ্কা। তার ১৮ বলে ৩৬ রানের সুবাদে পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান পায় শ্রীলঙ্কা। অন্যপ্রান্তে উইকেটে সেটও হয়ে যান নিশাঙ্কা। এ জুটিকে ভাঙতে মরিয়া ছিল বাংলাদেশ।
নবম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো বোলিং আক্রমণে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। ওভারের প্রথম বলে নিশাঙ্কাকে বোল্ড করেন তিনি। সেই সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়ে যান সাকিব।
ওই ওভারের চতুর্থ বলে আরও একটি উইকেট শিকার করেন সাকিব। আভিস্কা ফার্নান্দোকেও দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তিনি। খালি হাতে ফিরেন ফার্নান্দো। সাকিবের জোড়া আঘাতের সাথে উইকেট শিকারের আনন্দে মেতে উঠেন সাইফউদ্দিনও। পাঁচ নম্বরে নামা হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ৬ রানে থামান তিনি। ফলে ৪ উইকেটে ৭৯ রানে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা। ওই অবস্থায় ১০ ওভারে ৯২ রান প্রয়োজন ছিল শ্রীলঙ্কার।
নতুন ব্যাটার ভানুকা রাজাপাকসেকে নিয়ে সাবধানে খেলতে থাকেন আসালঙ্কা। এ জুটি ভাঙতে অকেশনাল বোলার আফিফকে আক্রমণে আনেন মাহমুদউল্লাহ। ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই আফিফকে ছক্কা মারেন রাজাপাকসে। আর চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন রাজাপাকসে। সেই ক্যাচ ফেলেন লিটন। ওই বলে চার রানও পায় শ্রীলঙ্কা। ১ বল পর ৩২ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রাজাপাকসে।
ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি পেয়ে মারমুখী হয়ে ওঠেন আসালঙ্কা। ১৪তম ওভারে মাহমুদউল্লাহকে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে জীবন পান আসালঙ্কা। বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। সেই ক্যাচটিও ফেলেন লিটন। তখন ৬৩ রানে দাঁড়িয়ে আসাঙ্কা। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য ৩৩ বলে ৪৯ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার।
১৮ রানে জীবন পাওয়া রাজাপাকসে ১৬তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে ২টি ছক্কা ও চারে ২২ রান তুলে ম্যাচের লাগাম নিয়ে নেন। ১৮তম ওভারে এসে ২৮ বলে ১৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বার্থ-ডে বয় রাজাপাকসে।
আসালঙ্কা-রাজাপাকসের ব্যাটিং তান্ডবে শেষ দুই ওভারে জিততে ৯ রান প্রয়োজন পড়ে শ্রীলঙ্কার। ১৯তম ওভারে রাজাপাকসেকে বোল্ড করেন নাসুম। ফলে বিচ্ছিন্ন হন লিটনের হাতে জীবন পাওয়া আসালঙ্কা-রাজাপাকসে জুটি। পঞ্চম উইকেটে ৫২ বলে ৮৬ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কার জয়ের পথ সুগম করেন তারা।
রাজাপাকসের বিদায়ের পর ওই ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত করেন আসালঙ্কা। ৪৯ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৮০ রান করেন আসালঙ্কা। ৩১ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৫৩ রান করেন রাজাপাকসে। বাংলাদেশের নাসুম-সাকিব ২টি করে এবং সাইফুদ্দিন ১টি উইকেট নেন।
এর আগে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন এনে খেলতে নামে টাইগাররা। ডান-হাতি পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে সেরা একাদশে সুযোগ পান বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
প্রথমে ব্যাট করার সুবিধাটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। সাবধানী শুরুতে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম পর্যন্ত প্রতিটি ওভারেই একটি করে বাউন্ডারি হাকান নাঈম-লিটন।
দুই ওপেনারের দৃঢ়তায় ৫ ওভার শেষে ৩৮ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারে এ জুটি ভাঙেন শ্রীলঙ্কার পেসার লাহিরু কুমারা। লিটন ব্যক্তিগত ১৬ বলে ১৬ এবং দলীয় ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ক্রিজে নাঈমের সঙ্গী হয়ে দ্রুত রান তুলে উইকেটে সেট হওয়ার পথে থেকেও হতাশ করেন সাকিব। অষ্টম ওভারে উইকেট থেকে সরে লেগ সাইড দিয়ে ফ্লিক শট খেলতে টাইমিং মিস করেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার পেসার চামিকা করুনারত্নের ডেলিভারি উইকেট ভেঙে দিলে ৭ বলে ১০ রান করে আউট হন তিনি।
ভালো শুরুর পরও ১৪ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট পতনে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ সময় দলকে চাপ থেকে মুক্ত করতে সাবধানে এগোতে থাকেন নাঈম ও চার নম্বরে নামা মুশফিক।
মুশফিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রানের গতি ধরে রাখার চেষ্টায় ছিলেন নাঈম। ১৪তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ৪৪ বলে এবারের আসরের দ্বিতীয় ও ২৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ অর্ধশতক করেন নাঈম।
ক্রিজে দুই সেট ব্যাটসম্যান থাকায় বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে ১৬তম ওভারের প্রথম বলে উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ফার্নান্দোকে পুল শটে মারতে গিয়ে তাকেই ক্যাচ দেন নাঈম। ৬টি চারে ৫২ বলে ৬২ রান করেন তিনি। প্রাধমিকপর্বে ওমানের বিপক্ষে ৬৪ রান করেছিলেন তিনি। মুশফিকের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৫১ বলে ৭৩ রান যোগ করেন নাঈম। যেখানে নাঈম ৩৪ ও মুশফিক ৩৭ রানের অবদান রাখেন।
নাঈমের বিদায়ের ওভারে ১১ রান তোলেন মুশফিক ও আফিফ হোসেন। আর ১৯তম ওভারের প্রথম বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশি। ৩২ বলে আসে তার কাঙ্ক্ষিত হাফ-সেঞ্চুরি। ১১ ইনিংস পর সংক্ষিপ্ত ভার্সনে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। ৯৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি মুশফিকের।
৭ রান করে আফিফ রান আউট হলে শেষ ৯ বলে ২১ রান যোগ করেন মুশফিক ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ফলে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭১ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। মুশফিক ৩৭ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান করেন। ২টি চারে ৫ বলে অপরাজিত ১০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। শ্রীলঙ্কার করুনারত্নে-ফার্নান্দো-কুমারা ১টি করে উইকেট নেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]