দারুণ উত্তেজনা, দারুণ উল্লাস। শেষ মুহূর্তে কিছু বিতর্কও! তুবও খুশিতে টাইগার ভক্তরা। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাকিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জয় নিশ্চিত। আর এ জয়ে নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচে জয় পেতে ও ফাইনালে উঠতে শেষ ২ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬ রানের। স্ট্রাইকে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি পেসার ইসুরু উদানার করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলটি পাঠিয়ে দিলেন মাঠের বাইরে। মাহমুদুল্লাহ আদায় করে নিলেন ছক্কা।এ ছক্কাতেই শ্রীলঙ্কা হেরে যায় বাংলাদেশের কাছে।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রানে ১ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখেই অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। চার খেলায় চার পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে খেলার শুরুর আগে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ইস্যু সবচেয়ে বড় আকার ধারন করেছিল ক্রিকেটঙ্গণে। তিনি কী খেলবেন, নাকি না। অবশেষে অধিনায়ক হিসেবে টস লড়াইয়ে নামেন সাকিব। জয়ও পেয়েছেন তিনি। তাই প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত সাকিবের।
শুধুমাত্র ফিল্ডিং করার সিদ্বান্তই নেননি দলের সেরা তারকা সাকিব। ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নিয়ে বল হাতে প্রথমেই আক্রমণে হাজির তিনি। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন সাকিব। পরের ওভারে দু’টি চারে বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন দেন ১২ রান। তাই শুরুটা ভালো করার আত্মবিশ্বাস পায় শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দানুস্কা গুনাথিলাকা ও কুশল মেন্ডিজ।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারের আত্মবিশ্বাসে ছেদ কাটেন সাকিব নিজেই। নিজের প্রথম ডেলিভারিতেই গুনাথিলাকাকে বিদায় দেন সাকিব। প্রায় দেড় মাস পর দলে ফিরেই নিজের সপ্তম ডেলিভারিতেই উইকেট শিকারের আনন্দে মাতলেন সাকিব। ৪ রান করেন গুনাথিলাকা।
প্রথম ওভারে রুবেল ব্যয়বহুল হওয়ায় তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন সাকিব। আক্রমণে নিয়ে আসেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানকে। সাকিবের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ফিজ। শেষ ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিজকে থামান মোস্তাফিজ। তার ওভারটি ছিল উইকেট মেডেন।
প্রথম উইকেট নিয়ে ক্ষান্ত হননি মোস্তাফিজ। মেন্ডিজকে ব্যক্তিগত ১১ রানে থামানোর পর নিজের পরের ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে দাসুন শানাকার উইকেটটিও তুলে দেন ফিজ। এর আগে ঐ ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে রান আউট হন উপুল থারাঙ্গা। থারাঙ্গা ৫ ও শানাক শূন্য রানে ফিরেন।
৩২ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোয় ধুকঁতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে আরও চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ছয় নম্বরে নামা জীবন মেন্ডিজকে থামান মিরাজ। মাত্র ৩ রান করেন মেন্ডিজ। এতে ৮ দশমিক ১ ওভারে ৫ উইকেটে ৪১ রানে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা।
এ অবস্থায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবেই নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তবে চাপে পড়েও দমে যায়নি ঐ সময় ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা ও অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। ব্যাট হাতে পাল্টা আক্রমণ চালান তারা। এতে ভড়কে যায় বাংলাদেশের বোলাররা। এই সুযোগে উইকেটে চারপাশে চার-ছক্কার ফুলকি ফোটান দুই পেরেরা। ফলে ১৬তম ওভারের প্রথম বলেই তিন অংকে পৌছায় শ্রীলঙ্কার দলীয় সংগ্রহ।
শেষ পর্যন্ত দলীয় ১৩৮ রানে বিচ্ছিন্ন হন দুই পেরেরা। মাত্র ৬১ বলে ৯৭ রান যোগ করেন তারা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেয়া কুশলকে শিকার করেন সৌম্য। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ বলে ৬১ রান করেন কুশল।
কুশলের মত হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন পেরেরাও। তবে ৭২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে প্রথম। শেষ পর্যন্ত ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। এছাড়া শেষদিকে ইসুরু উদানা অপরাজিত ৭ ও আকিলা ধনঞ্জয়া অপরাজিত ১ রান করেন। ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের মোস্তাফিজ ২টি, সাকিব-রুবেল-মিরাজ ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।
ওভার প্রতি ৮ রান করার লক্ষ্যে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার পেসার নুয়ান প্রদীপের করা প্রথম ওভার থেকেই ১০ রান তুলে নেন তামিম ও লিটন। দু’টি চারে ৯ রান তুলেন তামিম। ১টি রান ছিল অতিরিক্ত।
তবে পরের ওভারে বিদায় ঘটে লিটনের। অফ-স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার করা বেশ বাইরের ডেলিভারি মিড-অফ দিয়ে মারতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরেন তিনি। তার বিদায়ে ক্রিজে আসেন সাব্বির রহমান। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে ভালোই শুরু করেছিলেন তিনি। তিন বাউন্ডারিতে শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর সৃষ্টি করেছিলেন সাব্বির। কিন্তু বেশিক্ষণ নিজেকে ক্রিজে রাখতে পারেননি সাব্বির। ধনঞ্জয়ার একটি লাইনের ডেলিভারি মিস করে স্টাম্পড হন সাব্বির। ৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
৩৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে গেছেন তামিম ও আগের দু’ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিম। পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫০ রানে নিয়ে যান তারা। পরবর্তীতেও রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তামিম ও মুশফিকুর। এ জুটির কল্যাণে ১২তম ওভার শেষে শতরানের কোটা স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায় বাংলাদেশ।
তবে ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিগ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৭২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা মুশফিক। এবার ২৫ বলে ২৮ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে তামিমের সাথে ৫২ বল মোকাবেলা করে ৬৪ রান যোগ করেন মুশি।
এরপর ১২ রান যোগ হলে আরও ২ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জয়ের পথে বড় ধরনের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া তামিম থামেন ৫০ রানেই। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। পাঁচ নম্বরে নামা সৌম্য এবার করেন ১১ বলে ১০ রান।
১০৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোয় শেষ ৩১ বলে ৫১ রান প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের। লক্ষ্য পূরণের পথেই এগোচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। আস্কিং রেটের সাথে পাল্লা দেয়ার চেষ্টাতেও ছিলেন তারা। তবে ১৮তম ওভারের শেষ বলে বিদায় ঘটে সাকিবের। নামের পাশে ৭ রান রেখে ফিরেন তিনি। তাই শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ২৩ রান।
টেল-এন্ডার মিরাজকে নিয়ে একাই ১১ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ। ঐ ওভারের শেষ বলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মিরাজ। শূন্য হাতে ফিরেন তিনি। এরপর শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার পড়ে ১২ রান।
শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি পেসার উদানার করা ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলে কোন রান নিতে পারেননি মোস্তাফিজুর। পরের ডেলিভারিতে রান নিতে গিয়ে আউট হন তিনি। ফলে স্ট্রাইক পান মাহমুদুল্লাহ। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি ও চতুর্থ বলে ২ রান নেন মাহমুদুল্লাহ। ফলে শেষ দুই বলে ৬ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। পঞ্চম বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ফ্লিকড করে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ।
৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ম্যাচ সেরাও নির্বাচন হয়েছেন তিনি।
আগামী ১৮ মার্চ ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।