দ্বিতীয় ইনিংসে মমিনুল হকের ১০৫ ও লিটন দাসের ৯৪ রানের সুবাদে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।
২শ’ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ১০০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে বাংলাদেশ। এ সময় বাংলাদেশের লিড ছিল ১০৭ রানের। তবে দুই অধিনায়কের সম্মতিতে দিনের খেলা শেষ হবার ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট ও ১৭ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচটি ড্র ঘোষণা করেন ম্যাচের দুই অনফিল্ড আম্পায়ার। ম্যাচের সেরা হয় বাংলাদেশের মমিনুল হক।
এর আগে স্বাগতিকদের ৫১৩ রানের জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ৭১৩ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ২শ’ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮১ রান তুলে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে বাকি ৭ উইকেটে আরও ১১৯ রান করতে হতো টাইগারদের। ফলে চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচ হারের শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তাই পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনটি বাংলাদেশের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আগের দিন মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের পরই খেলা বন্ধ করে দেন দুই অন-ফিল্ড আম্পায়ার। তাই ১৮ রানে অপরাজিত থেকে একাই দিন শেষ করেছিলেন প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রান করা মমিনুল।
পঞ্চম দিনের শুরুতে অবশ্য একা নামতে হয়নি মমিনুলকে। নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেন মমিনুল। দিনের শুরু থেকে কিছুটা নড়বড়েই ছিলেন মমিনুল ও লিটন। তাই বেশ কয়েকবার শ্রীলঙ্কার বোলারদের বেশ কিছু ডেলিভারি সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন মমিনুল-লিটন। তবে ৩১তম ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথকে ছক্কা হাকিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার রসদ পেয়ে যান মমিনুল।
এতে অবশ্য সাহস পাননি লিটন। নিজের খোলস থেকে বের হতে আরও কিছু সময় নেন তিনি। তবে মমিনুলের ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরির আগেই রান তোলায় দক্ষতা দেখিয়েছেন লিটন। তাই মমিনুলের অর্ধশতক ও লিটনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৪৩তম ওভারেই দেড়শ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
তারপরও কোন উইকেট না হারিয়ে প্রথম সেশন শেষ করাটাই প্রধান কাজ ছিল মোমিনুল ও লিটনের। দক্ষতার সাথেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। তাই শতভাগ সাফল্য নিয়েই প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৬ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকেন মমিনুল ও লিটন। এর মধ্যে মমিনুলের ছিল ৫২ ও লিটনের ছিল ৪৭। তাই মমিনুল ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১৬ বলে ৭০ ও লিটন ৫টি চারে ৮৯ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে মধ্যাহৃ-বিরতিতে যান।
দিনের দ্বিতীয় সেশনেও ব্যাট হাতে দুর্বার ছিলেন মমিনুল ও লিটন। তাই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও একই টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পেতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি মমিনুলকে। একই টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যান হলেন লোকাল বয় মমিনুল। ১৫৪তম বলে তিন অংকে পা দিয়েও বড় ইনিংস খেলার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অফ-স্পিনার ধনানঞ্জয়া ডি সিলভার অফ-স্পিন সামলাতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দেন মমিনুল। সেটি ঝাপিয়ে পড়ে তালুবন্দি করেন দিমুথ করুনারত্নে। তাই নামের পাশে ১০৫ রান রেখে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মমিনুল। তার ১৭৪ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। লিটনের সাথে চতুর্থ উইকেটে ১৮০ রান যোগ করেন মমিনুল-লিটন। তার দু’জনে মোকাবেলা করেছেন ৩০৬ বল।
মমিনুলের বিদায়ে স্পট লাইট গিয়ে পড়ে লিটনের দিকে। কারন সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হলেন লিটন। নাভার্স নাইন্টিতে কাটা পড়ে লিটনের ইনিংসের। টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৯৪ রানে থামেন তিনি। ১৮২ বল মোকাবেলা করে ১১টি চারে নিজের ইনিংস সাজান লিটন।
দলীয় ২৬১ রানে মমিনুল ও ২৭৯ রানে লিটনের বিদায় চিন্তা পড়ে যায় বাংলাদেশ। কারণ তখনও দিনের প্রায় ৩৪ ওভার খেলা বাকি ছিল। দ্রুত বাংলাদেশের আরও কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকের উপর চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনায় ছিলো শ্রীলঙ্কা। তবে সেটি হতে দেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন।
ষষ্ঠ উইকেটে ১০৬ বল মোকাবেলা করে ম্যাচকে ড্র’র দিকে নিয়ে যান রিয়াদ ও মোসাদ্দেক। দু’জনই ৫৩ বল করে মোকাবেলা করেন। এরপরই দুই অধিনায়কতের সম্মতিতে ম্যাচকে ড্র ঘোষণা করেন দুই অন-ফিল্ড আম্পায়ার।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ১৬তম ম্যাচ ড্র’র স্বাদ নিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৩টিই দেশের মাটিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মোট ৩টি হলেও দু’টিই এই চট্টগ্রামের ভেন্যুতে। অন্যটি ২০১৩ সালে গল টেস্টে হয়েছিল।
ম্যাচ ড্র ঘোষণায় করার সময় রিয়াদ ২৮ ও মোসাদ্দেক ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। শ্রীলঙ্কার হেরাথ ৮০ রানে ২টি উইকেট নেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।