ভারতের কাছে দুই টেস্ট সিরিজের দুটিতেই বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর স্বাগতিক অধিনায়ক বিরাট কোহলি টাইগারদের আরও বেশি করে টেস্ট ম্যাচ খেলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে, টাইগারদের পরিস্থিতি ও চাপ মোকাবেলার করার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে।
দক্ষতা থাকার পরও টাইগাররা অনভিজ্ঞতার কারণে টেস্টে এগুতে পারছে না বলে মনে করছেন কোহলি। ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘আমি যেমনটি বলছিলাম, তারা যদি আরও বেশি টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারতো তাহলে আরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতো। আপনি যদি দুটি টেস্ট খেলার পর বাকি এক থেকে দেড় বছর না খেলে ফের মাঠে নামেন, তাহলে আপনি বুঝে উঠতে পারবেন না কিভাবে চাপ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।’
দুটি ম্যাচেই তিন দিনেরও কম সময়ের মধ্যে টাইগারদের হারিয়েছে ভারত। কোহলি বলেন, ‘সুতরাং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মানুষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চায় এ কারণে যে, সেখানে তারা ভালো করে। তবে নিয়মিতভাবে ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝে ওঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বুঝতে হবে কিভাবে আরও ভালো করা যায়। আমি যেটি বুঝাতে চাই সেটি হচ্ছে, বোর্ড ও খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে হবে তাদের কাছে এ খেলার অর্থ কী বোঝায়। টেস্টে সামনের দিকে এগুতে হলে এটি হচ্ছে একমাত্র উপায়।’
ভারত যেখানে টেস্ট ক্রিকেটের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কিছু কিছু দেশ ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ধারা ও এর মিশন এবং ভিশন নিয়ে উদাসীন। এমনকি অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের টেস্ট ক্রিকেট খেলতে অনীহার কথাও শোনা যায়।
টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে ওকালতি করা কোহলি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বোর্ডই কেবল খেলোয়াড়দের টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট করাতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের ভূমিকা সিমীত। ক্রিকেট বোর্ড কিভাবে বিষয়টি দেখভাল করছে সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে তাকান, কয়েক বছর ধরে সেখানেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, আমি জানি না বাংলাদেশের বোর্ড টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কিভাবে আলোচনা করে। তারা কিভাবে এটিকে প্রমোট করে এবং গুরুত্ব দেয়। আমার মনে হয় আর্থিক অবকাঠামোই এটিকে সুদৃঢ় করবে। টেস্ট ক্রিকেটাররা যদি ভালো আর্থিক সহায়তা না পায়, তাহলে তাদের মনোযোগ নষ্ট হবেই। কারণ কোন খেলোয়াড় ২০ ওভারের ম্যাচ খেলে চার ওভার বল করেই আপনার চেয়ে ১০ গুণ অর্থ উপার্জন করছে। দিন শেষে এটিই আপনার জীবিকার মূল উৎস। ফলে আপনি আর যুক্তির খাতিরে ৫-৬ বছরের বেশি এক জায়গায় থেকে যেতে পারবেন না। আপনি আপনার পেশা পরিবর্তন করতে চাইবেন। আপনারা দেখছেন, কেন বছরের পর বছর ধরে শক্তিশালী অবস্থানে থেকে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট।
কোহলি আরও বলেন, কারণ তাদের চুক্তি শুরু হয় টেস্ট ক্রিকেটের ভিত্তিতে। এরপর তারা অন্য ক্রিকেট অনুসরণ করে। তাই আমার দৃষ্টিতে টেস্ট খেলোয়ড়রা এটি অনুভব করবে যে তারা যদি দীর্ঘ সময় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে খেলতে পারে তাহলে নিজের ভবিষ্যতের সুরক্ষা দিতে পারবে।
এদিকে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ দলে একটি বড় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। এ দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে বাইরে রেখে বাংলাদেশ দলের পক্ষে নির্দয় ভারতের মোকাবেলা সম্ভব ছিল না বলে উল্লেখ করেন কোহলি।
ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে বাংলাদেশ দলে ছিল না তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড়। সাকিবও নেই, তামিম ও নেই। দলে ছিলেন শুধু মুশফিকুর রহিম। সেই সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু দু’জন মাত্র অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। বাকি সবাই ছিল তরুণ। তাই তাদেরকে আরও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।’