দুই ইনিংসে রোহিত শর্মার দুই সেঞ্চুরি ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরির পর বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যে বিশাখাপত্নম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিধ্বস্ত করলো স্বাগতিক ভারত। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারত ২০৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বিরাট কোহলির দল।
ম্যাচ জয়ের জন্য চতুর্থ দিন শনিবার ৩৯৫ রানের টার্গেট পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে দিন শেষে ১ উইকেটে ১১ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা। ফলে জয়ের জন্য পঞ্চম ও শেষ দিনে বাকি ৯ উইকেটে ৩৮৪ রান প্রয়োজন পড়ে সফরকারীদের। আইডেন মর্করাম ১ ও তিউনিস ডি ব্রুইন ৫ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন।
রোববার (৬ অক্টোবর) পঞ্চম ও শেষ দিনের ১১তম বলেই সাজঘরে ফিরেন ব্রুইন। ১০ রান করে ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হন তিনি। এ উইকেটের মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৫০তম শিকার পূর্ণ করেন অশ্বিন। যার মাধ্যমে দ্রুত ৩৫০ উইকেট শিকারে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরলিধরনের পাশে নিজের নাম লিখলেন অশ্বিন। মুরালির মত অশ্বিনও ৬৬তম টেস্টে ৩৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
উইকেটে আসেন তেম্বা বাভুমা। রানের খাতা খোলার আগেই ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামির বলে বোল্ড হন বাভুমা। বাভুমাকে বোল্ড করার পর দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল-অর্ডারের দুই মেরুদণ্ড অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস ও কুইন্টন ডি কককেও শিকার করেন সামি। এ দু’জনকেও বোল্ড করেন সামি। ডু-প্লেসিস ১৩ রান করলেও বাভুমার মত রানের খাতাই খুলতে পারেননি প্রথম ইনিংসে ১১১ রান করা ডি কক। এতে ৬০ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ অবস্থায় বল হাতে জ্বলে ওঠেন ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা। নিজের স্পিন বিষ দিয়ে এক ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার তিন উইকেটের পতন ঘটান জাদেজা। ইনিংসের ২৭ ও নিজের অষ্টম ওভারে প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে মার্করাম-ভারনন ফিলান্ডার-কেশব মহারাজকে শিকার করেন জাদেজা। মার্করাম ৩৯, ফিলান্ডার-মহারাজ শূন্য রান করেন।
৭০ রানে অষ্টম উইকেট পতনে দক্ষিণ আফ্রিকার হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে শেষ দিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা সেনুরান মুথুসামি ও ড্যান পিট। দারুণ লড়াইয়ে ভারতের জয় দীর্ঘায়িত করেন দুই টেল-এন্ডার মুথুসামি ও পিথ। ৭০ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতির আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে ১১৫ রান তুলে প্রথম সেশন শেষ করে।
মধ্যাহ্ন-বিরতি পর ফিরেও নিজেদের লড়াই চালিয়ে যান মুথুসামি ও পিট। জমে যাওয়া এ জুটিকে ভাঙ্গেন সামি। ১০৭ বলে ৫৬ রান করে সামির শিকার হন পিট। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া লড়াকু ইনিংসে ৯টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন পিথ।
পিটকে হারানোর পর শেষ ব্যাটসম্যান কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মুথুসামি। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। আবারও বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সামি। ১৮ রানে থাকা রাবাদাকে শিকার করেন তিনি। রাবাদাকে আউট করার মাধ্যমে টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করেন তিনি।
শেষ উইকেট জুটিতে ৩০ রান যোগ করেন মুথুসামি-রাবাদা। রাবাদার আউটে ১৯১ রানে শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। তবে ৫টি চারে ১০৮ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে যান মুথুসামি। ভারতের সামি ৫টি, জাদেজা ৪টি ও অশ্বিন ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের রোহিত শর্মা। এ টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৭৬ ও ১২৭ রান করেছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৫০২/৭ ডি ও ৩২৩/৪ডি, ৬৭ ওভার (রোহিত ১২৭, পূজারা ৮১, মহারাজ ২/১২৯)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৩১/১০ ও ১৯১/১০, ৬৩.৫ ওভার (পিথ ৫৬, মুথুসামি ৪৯*, সামি ৫/৩৫)।
ফল : ভারত ২০৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রোহিত শর্মা (ভারত)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।