ক্রিকেটের লংগার ভার্সনে ওপেনার হিসেবে রোহিত শর্মার ফর্ম এবং নিজ মাটিতে জয়ের রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করছে স্বাগতিক ভারত। সিরিজ শুরুর আগে আলোচনায় ভারতের ওয়ানডে ও টি-২০ ওপেনার রোহিত শর্মা। সাথে সিরিজ নিয়েও ভাবছে ভারত।
বুধবার (২ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া টেস্টে প্রথমবারের মত টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে দেখা যাবে রোহিত শর্মাকে। তাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রোহিত। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতলেই দেশের মাটিতে টানা ১১টি সিরিজ জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়বে ভারত। এ সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও চ্যালেঞ্জ। ভারত স্পিনারদের সামলানোই প্রোটিয়াদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।
রোহিত তার ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ২৭টি। অথচ বড় ফরম্যাটে ওপেনার হিসেবে দেখা যায়নি তাকে। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসেবে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি আছে রোহিতের। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২৬৪ রানও রোহিতের। টি-২০ ফরম্যাটেও উজ্জ্বল রোহিত। টি-২০ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪টি সেঞ্চুরি তার। সিমিত ওভারের ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে রঙিন পোশাকে যেখানে উজ্জ্বল রোহিত, সেখানে টেস্টে ওপেনার হিসেবে কেন নন?
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ওপেনার হিসেবে অভিষেক হচ্ছে রোহিতের -এমন সিদ্বান্ত ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিতকে ওপেনার হিসেবে খেলিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে ভারত। তবে সেই পরীক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ রোহিত। ২ বলে শূন্য রানে ফিরেছেন রোহিত।
ওপেনার লোকেশ রাহুলের পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে রোহিতকে দলে নিয়েছে ভারত। রোহিত ভালো করবেন আশাবাদ ব্যক্ত করে ভারতের সহ-অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে, ‘সে (রোহিত) অনেক পরিশ্রম করেছে এবং যদি সে সুযোগ পায় তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি সে ভালো করবে। তার মান সম্পর্কে আমরা সবাই জানি জানি। এক কথায় সে বিশেষ কিছু।’
টেস্টে ওপেনার হিসেবে রোহিতকে স্বাভাবিক খেলার মধ্যে থাকতে হবে বলে মনে করেন ভারতের সাবেক মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ, ‘আপনি যদি আপনার স্বাভাবিক খেলা থেকে সড়ে আসেন তবে মানসিক বিশৃঙ্খলা হয়ে গেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না এবং ছন্দহীন হয়ে পড়বেন। আমি স্বীকার করছি, যখন ওপেন করেছিলাম আমার খেলায় প্রভাব পড়েছিল। রোহিত ছন্দভিত্তিক খেলোয়াড়। যদি সে ছন্দহীন হয় তবে তা কঠিন হবে।’
এদিকে দেশের মাটিতে দল হিসেবে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে চলেছে ভারত। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দশটি টেস্ট সিরিজ জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় পেলে টেস্ট ইতিহাসে দেশের মাটিতে এক টানা সর্বোচ্চ ১১ সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়বে বিরাট কোহলির দল। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে ১০টি সিরিজ জয় করে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয়রা।
বিশ্বরেকর্ড গড়ার মিশনে দলের সেরা পেসার জসপ্রিত বুমরাহকে পাচ্ছে না ভারত। পিঠের ইনজুরির কারণে এ সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছেন বুমরাহ। তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নামছে ভারত।
অন্যদিকে গত মাসে দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা ও পেসার ডেল স্টেইনের অবসরের পর প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আমলা ৯২৮২ রান নিয়ে প্রোটিয়াদের পক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আর স্টেইন ৪৩৯ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।
এবারের সফরে তিনজন নতুন মুখ রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দলে। পেসার এনরিখ নির্টি, উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান রুডি সেকেন্ড এবং বাঁ-হাতি স্পিনার সেনুরান মুথুসামি।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি প্রথম ম্যাচ। ফলে এ ম্যাচে দল ভালো করবে বলে মনে করেন প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিত শর্মাকে শিকার করা প্রোটিয়া পেসার ভারনন ফিলান্ডার। তিনি বলেন, ‘দলের সেরা খেলোয়াড়দের ওপর স্পট লাইট থাকবে। আমাদের প্রথম কাজ হবে ভারতকে চাপে রেখে ভালো পারফরমেন্স করা।’
ভারত দল
বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), মায়াঙ্ক আগারওয়াল, রোহিত শর্মা, সুবমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে, হনুমা বিহারি, ঋষভ পান্থ, ঋদ্ধিমান সাহা, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, ইশান্ত শর্মা, জসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ শামি।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল
ফাফ ডু-প্লেসিস (অধিনায়ক), টেম্বা বাভুমা, তিউনিস ডি ব্রুইন, কুইন্টন ডি কক, ডিন এলগার, জুবায়ের হামজা, কেশব মহারাজ, আইডেন মার্করাম, সেনুরান মুতুসামি, লুঙ্গি এনগিডি, এনরিখ নর্টি, ভারনন ফিলান্ডার, ড্যান পিট, কাগিসো রাবাদা এবং রুডি সেকেন্ড।