চট্টগ্রাম টেস্টে ১১৫তম ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের ছিল এটি তৃতীয় টেস্ট। ১১২ ম্যাচের বেশি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েও আফগানিস্তানের মত নতুন দলের কাছে ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
৩৯৮ রানের লক্ষ্যে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে লজ্জাজনক হারের স্বাদ পেল সাকিবের দল। আফগানিস্তান দুই ইনিংসে ৩৪২ ও ২৬০ রান করে। পক্ষান্তরে দুই ইনিংসে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে যথাক্রমে ২০৫ ও ১৭৩। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে আফগানরা।
পঞ্চম ও শেষ দিনের (সোমবার) সকাল থেকেই বৃষ্টি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের ম্যাচে বৃষ্টির দোলাচলে দুলছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রা। তারপরও নিজের ভাব বজায় রেখেছিল বৃষ্টি। তবে ১২টা ৪০ মিনিটে বৃষ্টি কমলে, দুপুর ১টায় খেলা শুরুর সিদ্বান্ত নেয় ম্যাচ পরিচালনাকারীরা। তখন দিনের ৬৩ ওভার খেলা বাকি ছিল।
যথারীতি ১টায় শুরু হয় খেলা। আগের দিনের আফগানিস্তানের ছুড়ে দেয়া ৩৯৮ রানের টার্গেটে খেলতে চতুর্থ দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ হারের পথও দেখে ফেলে টাইগাররা। কারণ পঞ্চম ও শেষ দিনে বাকি ৪ উইকেটে আরও ২৬২ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু খেলা হয় মাত্র ১৩ বল।
বৃষ্টির কারণে আবারো খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মাত্র ৭ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। ফলে স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৪৩ রান। তারপরও ম্যাচ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচ নিয়ে আশার আলো শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় দফায় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে আবারও শুরু হয় খেলা। বৃষ্টি বা আলো স্বল্পতা না হলে ১৮ দশমিক ৩ ওভার খেলা হবে। এমন সমীকরণ নিয়ে ব্যাট হাতে নামেন সাকিব-সৌম্য।
কিন্তু যে ব্যক্তিটি চতুর্থ দিন শেষে শুনিয়েছিলেন স্বপ্নের গল্প, সেই সাকিবই প্রথম বলেই আউট হন। আফগানিস্তানের বাঁ-হাতি স্পিনার জহির খানকে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। ৪টি চারে ৫৪ বলে ৪৪ রান করেন সাকিব।
এরপর সৌম্যকে নিয়ে উইকেটে টিকে থাকার মিশন শুরু করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ান তারা। এমন অবস্থায় ৫৩ বল মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে চিন্তামুক্ত করছিলেন সৌম্য-মিরাজ।
কিন্তু ৫৬তম ওভারের তৃতীয় বলে মিরাজকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। আম্পায়ার আউট দিলে, রিভিউ নেন মিরাজ। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। আউট হন মিরাজ। এতে ভাঙে সৌম্য-মিরাজ জুটি। বাংলাদেশ হারায় অষ্টম উইকেট। ২৮ বলে ১২ রান করেন মিরাজ।
নবম নম্বরে উইকেটে গিয়ে ৬ বলের বেশি খেলতে পারেননি তাইজুল ইসলাম। শূন্য রানে রশিদের শিকার হন। এতে ম্যাচ হার বাংলাদেশের সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে ছিলেন সৌম্য।
শেষ ব্যাটসম্যান নাইম হাসানকে নিয়ে মান-সম্মান বাঁচানোর লড়াই শুরু করেন সৌম্য। পরবর্তীতে ৪ ওভার টিকেও যান তারা। এতে দিনের খেলার আর মাত্র ২১ বল বাকি ছিল। কিন্তু রশিদের পরের ডেলিভারিতে শর্ট লেগে ইব্রাহিম জাদরানকে ক্যাচ দিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন সৌম্য। ফলে ২০ বল বাকি থাকতে লজ্জাজনকভাবে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
১৭৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সৌম্য ১৫ রানে ফিরলেও ১ রানে অপরাজিত থাকেন নাইম। আফগানিস্তানের রশিদ ৪৯ রানে ৬টি, জহির ৫৯ রানে ৩টি ও নবী ৩৯ রানে ১টি উইকেট নেন।
বল হাতে ১১ উইকেট ও ব্যাট হাতে ৭৫ রান করে এক ম্যাচের সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হয়েছে এ ম্যাচে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ত্ব করে রেকর্ড সৃষ্টিকারী আফগানিস্তানের রশিদ খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রথম ইনিংস
আফগানিস্তান : ২৭১/৫, ৯৬ ওভার (রহমত ১০২, আসগর ৮৮*, জাজাই ৩৫*, নাইম ২/৪৩, তাইজুল ২/৭৩)
বাংলাদেশ : ২০৫/১০, ৭০.৫ ওভার (মোমিনুল ৫২, মোসাদ্দেক ৪৮*, রশিদ ৫/৫৫)।
দ্বিতীয় ইনিংস
আফগানিস্তান : ২৬০/১০, ৯০.১ ওভার (জাদরান ৮৭, আসগর ৫০, সাকিব ৩/৫৮)
বাংলাদেশ : ১৭৩/১০, ৬১.৪ ওভার (সাকিব ৪৪, সাদমান ৪১, রশিদ ৬/৪৯)।