টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজ। এজবাস্টনে শুরু হলো অ্যাশেজের ৭১তম সিরিজ। এর আগে ৭০টি আসরের মধ্যে ৩৩টিতে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড জয় পেয়েছে ৩২টি সিরিজে। ৫টি সিরিজ হয়েছে ড্র।
কিভাবে এলো অ্যাশেজ সিরিজ? অ্যাশেজ অর্থাৎ ‘ছাই’। এ ছাই-এর জন্যই লড়াই করে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডর মাটিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবার টেস্ট ম্যাচ জিতলে স্বাগতিক সাংবাদিকরা নিজ দলের সমালোচনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে এমন হারে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ‘মৃত্যু’ ঘটেছে বলে দাবি করেন তারা।
‘ছাই’-এর জন্য লড়াই করেই ‘অ্যাশেজ সিরিজ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৮২ সালে ‘দ্য অ্যাশেজ’ নামের সিরিজটি প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডের মাটিতে। এরপরই তৎকালীন ইংলিশ অধিনায়ক ইবো ব্লিগ অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘অ্যাশেজ’ বা ছাই শিরোপা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন। শুরু হয় অ্যাশেজ সিরিজ।
অ্যাশেজ সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী পাঁচ ব্যাটসম্যান
স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান-৫০২৮ রান
৩৭ ম্যাচে ৬৩ ইনিংসে ৫০২৮ রান করে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৩৩৪। আর গড় রান ছিল ৮৯.৭৮। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে- এ তালিকায় থাকা অন্যদের তুলনায় অনেক কম সংখ্যক ম্যাচ খেলেছেন ব্রাডম্যান।
অস্ট্রেলিয়ার এ কিংবদন্তী মাত্র ৩৭টি ম্যাচ খেলেছেন। তবে সংগ্রহ করেছেন ৫০২৮ রান। যার ৮৯.৭৮ রানের গড়টি অনেকটাই অবিশ্বাস্য। ডন নামে পরিচিত ব্র্যাডম্যানের অ্যাশেজে সেরা স্কোর ৩৩৪ রান।
তার সম্পর্কে আরেকটি বিষ্ময়কর পরিসংখ্যান হচ্ছে- অ্যাশেজ ক্যারিয়ারে ছয়বার তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছেন। বিদায়ী ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার কারণে টেস্টে ১০০ রানের গড় নিয়ে অবসরে যেতে পারেননি এ কিংবদন্তী। তবে ডান হাতি এ ব্যাটসম্যান এখনো ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার ক্যারিয়ার আজও নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাছে অনুস্মরণীয়।
স্যার জ্যাক হবস -৩৬৩৬ রান
মোট ৪১ ম্যাচে ৭১ ইনিংসে ৩৬৩৬ রান করেছেন স্যার জ্যাক হবস। তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮৭ এবং গড় রান- ৫৪.২৬। কিংবদন্তী ক্রিকেটার স্যার জ্যাক হবস ১৯০৫-১৯৩৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৯ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সংগ্রহ করেছেন ৬১ হাজারেরও বেশি রান।
ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। তিনি সর্বমোট ৬১টি টেস্ট খেলেছেন, যার ৪১টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে।
অ্যাশেজ ইতিহাসে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রান করা দুই ব্যাটসম্যানের একজন হবস। অপরজন ব্র্যাডম্যান। চোখ ধাঁধানো অ্যাশেজ ক্যারিয়ারে তিনি ১২টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তার ৫৪.২৬ রানের ব্যাটিং গড়টিও উল্লেখ করার মতো। অসিদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের অধিকাংশ জয়েই তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী।
অ্যালান বোর্ডার-৩২২২ রান
৪২ ম্যাচে ৭৩ ইনিংসে ৩২২২ রান করেন অ্যালান বোর্ডার। তার সর্বোচ্চ রান-২০০* এবং গড়-৫৫.৫৫।অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক বোর্ডার ৪২টি অ্যাশেজ ম্যাচে অংশ নিয়ে রান করেছেন ৩২২২।
‘এবি’ নামে পরিচিত বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান টেস্টে অভিষিক্ত হয় ১৯৭৮-৭৯ অ্যাশেজে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নিজের টেস্ট ইনিংসে তরুণ বোর্ডার সংগ্রহ করেছিল ২৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য হাতে সাজঘরে ফিরেন তিনি। তবে পরবর্তীতে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন।
৪১ ম্যাচে অংশ নিয়ে পেরিয়ে গেছেন ৩ হাজার রান। ১৫ বছরের অ্যাশেজ ক্যারিয়ারে এ অস্ট্রেলীয় ৭টি সেঞ্চুরি এবং ১৯টি হাফ সেঞ্চুরির মালিক বনেছেন।
স্টিভ ওয়াহ-৩১৭৩ রান
৪৫ ম্যাচে ৭২ ইনিংসে ৩১৭৩ করেছেন স্টিভ ওয়াহ। তার সর্বোচ্চ রান ১৭৭* এবং গড়-৫৮.৭৫। ১৯৮৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারে অভিজাত তালিকায় নাম লিখিয়েছেন সিডনিতে জন্ম নেওয়া এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
ডেভিড গাওয়ারের ন্যায় ওয়াহও একই প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শুরু ও সমাপ্তি টেনেছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৬৮টি টেস্টে অংশ নেওয়া ওয়াহ অ্যাশেজে খেলেছেন ৪৫টি ম্যাচ। ৭২ ইনিংস থেকে ৫৮.৭৫ গড়ে ৩১৭৩ রান সংগ্রহ করা ওয়াহ তার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ১০টি সেঞ্চুরি ও ১৪টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। অবশ্য ছয় বার শূন্য হাতে ফেরা ওয়াহ ১৮টি ইনিংসে ছিলেন অপরাজিত।
ডেভিড গাওয়ার-৩০৩৭ রান
ম্যাচ-৩৮, ইনিংস-৬৯, রান-৩০৩৭, সর্বোচ্চ রান ২১৫, গড়-৪৬.০১। ইংল্যান্ডের সাবেক এ বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান তার গোটা টেস্ট পরিসংখ্যানের মধ্যে অ্যাশেজেই বেশি ভালো করেছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে গাওয়ার ১৩ বছরের কারিয়ারে ৩৮টি ম্যাচে অংশ নিয়ে অভিজাত এ সিরিজে ৬৯ ইনিংস থেকে সংগ্রহ করেছেন ৪৬.০১ গড়ে ৩০৩৭ রান।
সিরিজে তিনি ৯টি সেঞ্চুরি ও ১১টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এক ইনিংসে গাওয়ার সর্বাধিক সংগ্রহ ২১৫ রান। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে অবসর গ্রহণ করা গাওয়াড়ের কাকতালীয়ভাবে লংগার ভার্সনের অভিষিক্তও হয়েছিলেন একই দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।