ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি ইনিংস ও ১২৩ রানের ব্যবধানে জিতে নিয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। আর এতে পাঁচ ম্যাচের ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজ সিরিজ ঘরের মাটিতে ৪-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করলো অসিরা।
চতুর্থ দিন ৩০৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে ৯৩ রান করে দিন শেষ করেছিল। তখনই অনেকা অনুমেয় ছিল আরেকটি পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেতে যাচ্ছে সফরকারীরা। পঞ্চম দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই ইংল্যান্ডের ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান প্রথম ইনিংসে ৬৪৯ রানের বিশাল রানের জবাবে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস ১৮০ রানেই শেষ হয়ে যায়। যদিও অধিনায়ক জো রুটের ওপরই শেষ ভরসা ছিল ইংলিশদের।
আগেরদিন ৪২ রানে অপরাজিত থাকা রুট অসুস্থতার কারণে ৫৮ রানের বেশি করতে পারেননি। পানি স্বল্পতা জনিত জটিলতায় হাসপাতালে পর্যন্ত রুটকে যেতে হয়েছে।
এদিকে দারুন একটি সিরিজে সফলভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। তিনি বলেন, ‘গত দুই মাস আমাদের দারুন কেটেছে। এই দুই মাসে আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি তা এককথায় অসাধারণ। মোট কথা আমরা শীর্ষে থাকতে চেয়েছি। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে পারফর্ম করে ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাদেরকে খেলায় ফিরতে না দিয়েই আমরা একের পর এক জয় ছিনিয়ে নিয়েছি।’
সিডনিতে আক্রমণাত্মক অস্ট্রেলিয়াকে বল হাতে সাফল্য এনে দিয়েছেন পেসার প্যাট কামিন্স। ম্যাচ সেরা এই বোলারের ৩৯ রানে চার উইকেট প্রাপ্তিই অস্ট্রেলিয়ান সিডনিতে বড় জয়ের পথ দেখিয়েছে। ২৩ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীও কামিন্স।
পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সারির চার বোলার ২০ কিংবা তার বেশি উইকেট দখলের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। স্মিথ বলেন, আমি মনে করি সব বোলারই অসাধারণ পারফর্ম করেছে। এই বোলাররা একটি দল হিসেবে একসাথে দলের জন্য খেলে থাকে, জুটি বেধে বোলিং করে, একে অপরকে বোলিংয়ে সহযোগিতা করে। আর এভাবেই তাদের উইকেট পেতে সহজ হয়।
৮৮.১ ওভাবে ইংল্যান্ডের ইনিংস ৯ উইকেটে ১৮০ রানে থেকে গেলে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ১২৩ রানের জয় ছিনিয়ে নেয়। এর মাধ্যমেই ব্রিসবেন, এডিলেড ও পার্থের পরে পঞ্চম টেস্টেও অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত হয়। মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্টটি ড্র হয়েছিল।
আগের রাতে পেটের সমস্যায় ভোগা রুট মধ্যাহ্ন বিরতির পরে আর ব্যাট হাতে নামতে পারেননি। প্রচন্ড গরমে রুট অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে সহ-অধিনায়ক জিমি এন্ডারসনে জানিয়েছেন। এন্ডারসন বলেন, প্রতিটি ম্যাচেই সে আমাদের দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিল। তার কারণেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা ম্যাচে টিকে ছিলাম। কিন্তু তারপর আর কোন সুযোগই কাজে লাগাতে পারিনি।
মধ্য বিরতির পরে কামিন্স তিন বলে দুই উইকেট তুলে নেন। প্রথমে জনি বেয়ারস্ট্রোকে (৩৮) এলবিডাবব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন। এরপর স্টুয়ার্ট ব্রডকে ৪ রানে বাউন্সারের সহযোগিতায় কট বিহাইন্ডে পরিণত করেন। কামিন্সের আরেকটি বিশাল বাউন্সারে বিপর্যস্ত মেসন ক্রেন ২ রানে উইকেটরক্ষক টিম পেইনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। এন্ডারসনকে ২ রানে কট বিহাইন্ড করে ইনিংস শেষ করেন আরেক পেসার জোস হ্যাজেলউড।
আগের রাতে হাসপাতালে কাটানো রুটকে নিয়ে ইংল্যান্ড চিন্তিত থাকলেও ১৩ রানে মঈন আলীর আউটের পরে রুট ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ব্যাটিং করে রুট সিরিজের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে বিরতির পরে রুট আর খেলতে না পারায় ইংল্যান্ডের ম্যাচ বাঁচানোর আশা শেষ হয়ে যায়।
৩৪ ওভারে ৫৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ক্রিস লিন। পুরো সিরিজে তিনি পেয়েছেন ২১টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ইংল্যান্ড : প্রথম ইনিংস ৩৪৬ (রুট ৮৩, মালান ৬২: কামিন্স ৪-৮০)
অস্ট্রেলিয়া : প্রথম ইনিংস ৭ উইকেটে ৬৪৯ ইনিংস ঘোষণা (খাজা ১৭১, শন মার্শ ১৫৬, মিশেল মার্শ ১০১, ওয়ার্নার ৫৬ : আলী ২-১৭০, এন্ডারসন ১-৫৬)
ইংল্যান্ড : দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৪ উইকেটে ৯৩) অল আউট, ১৮০ (রুট ৫৮, বেয়ারস্টো ৩৮ : কামিন্স ৪-৩৯, লিন ৩-৫৪)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ১২৩ রানে জয়ী
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৪-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)
ম্যান অব দ্য সিরিজ : স্টিভ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)।