হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তিন টেস্ট সিরিজে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে সফরকারী টাইগাররা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট হারলে নিউজিল্যান্ডের কাছে আবারো হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পাবে টাইগাররা।
সেটা হলে নিউজিল্যান্ডের কাছে এই প্রথম তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেতে হবে বাংলাদেশকে। অবশ্য দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এই প্রথমবার তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। তাই তিন ম্যাচের প্রথম সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেতে রাজি নয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড সফরে শেষ ম্যাচটি ভালো খেলে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে মরিয়া টাইগাররা। আগামী ১৬ মার্চ (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৪টায়) ক্রাইস্টচার্চে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি।
ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের পর টেস্ট সিরিজে ভালো করার লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের। নিয়মিত অধিনায়ক ইনজুরিতে থাকা সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ভাল করার চেস্টা করেছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বধীন টাইগার দল। ইনজুরির কারণে ওয়ানডের মত টেস্ট সিরিজের শুরু থেকে সাকিবকে থাকবেন না তা নিশ্চিতই ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কা খাওয়ার জন্য তৈরি ছিলো না টাইগাররা। আর সেটি হলো, মুশফিকুর রহিমকে হারানো। ইনজুরির কারণে প্রথম টেস্ট তো বটেই দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলতে পারেননি তিনি। তৃতীয় টেস্টের একাদশে মুশফিকের ফেরা বলতে গেলে নিশ্চিত।
সাকিব-মুশফিকের না থাকাটা টেস্ট সিরিজে কতটা ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা খুবই সহজ। হ্যামিল্টনে সিরিজের প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ৫২ রানে হারে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল ছাড়া ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ছিলো চোখে পড়ার মত। তামিমের ১২৬ রান সত্ত্বেও ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর জিত রাভালের ১৩২, টম লাথামের ১৬১ ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ২০০ রানে ৬ উইকেটে ৭১৫ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। এতে প্রথম ইনিংসে ৪৮১ রানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়ানোর জন্য ৪৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ টপকানো প্রয়োজন ছিলো টাইগারদের।
এ ইনিংসে তামিমের ৭৪ রানের পর ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে সেঞ্চুরি করেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সৌম্য ১৪৯ ও মাহমুদুুল্লাহ ১৪৬ রান করেন। কিন্তু তাতেও ইনিংস হারের লজ্জা থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় টেস্টেও ইনিংস হার সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। এবার ইনিংস ও ১২ রানে হার। তবে প্রথম দুই দিন বৃস্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় এ ম্যাচে হার এড়ানোর ভালো সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আড়াই দিনেই এ ম্যাচেও ইনিংস ব্যবধানে হারতে হয় বাংলাদেশকে। দুই ইনিংসে বাংলাদেশ দলের স্কোর ছিল যথাক্রম ২১১ ও ২০৯ রান।
আড়াই দিনে দ্বিতীয় টেস্ট হেরে হতাশা ঝড়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর কন্ঠে। দ্বিতীয় টেস্ট শেষে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘খুবই হতাশ। আমরা আরও ভালো করতে পারতাম, ভাল করার সুযোগ ছিল। যে পারফরমেন্স করেছি আমরা তার চেয়ে এ ভালো দল।’
হতাশ হলেও তৃতীয় টেস্টে ভালো করার কথা বলেন মাহমুদুল্লাহ, ‘পরের টেস্টে আমাদের আরও দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে এবং ভালো খেলতে হবে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতে রেকর্ড গড়ে নিউজিল্যান্ড। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত টানা পাঁচটি টেস্ট সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে কিউইরা। নিউজিল্যান্ডের মত এমন রেকর্ড আগেই করেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২০১৭ সালের মার্চে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে নিউজিল্যান্ড। এরপর পাঁচটি টেস্ট সিরিজের সবক’টিতেই জিতে নেয় কিউইরা। এরমধ্যে চারটিই দেশের মাটিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড-শ্রীলংকা-বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিউজিল্যান্ড। অন্যটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ।
তাই রেকর্ড গড়া সিরিজের শেষটা জয় দিয়ে করতে চায় নিউজিল্যান্ড। দলের ওপেনার টম লাথাম তেমনই ইঙ্গিত দিলেন, ‘দুই টেস্টেই আমরা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছি। সিরিজের শেষটাও জিততে চাই। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
২০০১ সালে প্রথমবারের মত দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড।
এরপর ছয়টি সিরিজে অংশ নেয় দু’দল। সবগুলোই ছিলো দুই ম্যাচের। এবারই প্রথম তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। এছাড়া এখন পর্যন্ত ১৫বার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। ১২টিতে জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ৩টি ম্যাচ হয় ড্র। কিউইদের বিপক্ষে কোন জয় নেই বাংলাদেশের। ৩টি ড্র বাংলাদেশ করেছে নিজ দেশের মাটিতে।
বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য) :
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেন।
নিউজিল্যান্ড দল (সম্ভাব্য) :
কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টড অ্যাস্টল, ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, ম্যাট হেনরি, লম লাথাম, হেনরি নিকোলস, জিত রাভাল, টিম সাউদি, রস টেইলর, নিল ওয়াগনার, বিজে ওয়াটলিং, টম ব্লানডেল ও উইল ইয়ং।