পার্থে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ডকে ইনিংস ও ৪১ রানের ব্যবধানে হারালো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এ জয়ে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই অ্যাশেজ সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো অসিরা।
সিরিজ জয়ের পাশাপাশি শিরোপা পুনরুদ্ধারও করলো অস্ট্রেলিয়া। গতবার নিজেদের মাটিতে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এ নিয়ে ৯বার অ্যাশেজে প্রথম তিন টেস্ট জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো অসিরা। এর মধ্যে সাতবারই দেশের মাটিতে এমন কীর্তি গড়লো অস্ট্রেলিয়া। তবে অ্যাশেজের ইতিহাসে মাত্র একবার এমন কীর্তি করতে পেরেছে ইংল্যান্ড।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জয়ের পথ চতুর্থ দিন শেষেই তৈরি করে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৪০৩ রানের জবাবে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ২৩৯ ও মিচেল মার্শের ১৮১ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ৬৬২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে অসিরা। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ২৫৯ রানের বড় লিড পায় স্বাগতিকরা।
এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে চতুর্থ দিন শেষে ৪ উইকেটে ১৩২ রান করে ইংল্যান্ড। ইনিংস হার এড়াতে টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে ৬ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ১২৭ রান করতে হতো ইংলিশদের।
কিন্তু পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরু থেকেই বাগড়া বাধায় বৃষ্টি। তাই দিনের প্রথম সেশনের খেলা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বৃষ্টির টেস্ট বাঁচানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে দ্রুতই ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট তুলে নেয়ার চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা।
মধ্যাহ্ন বিরতির বেশ কিছুক্ষণ পর মাঠে গড়ায় দিনের খেলা। দিনের পঞ্চম বলেই উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দেন আগেই ২ উইকেট শিকার করা অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউড। আগের দিনের ১৪ রানের সাথে কোন স্কোরই যোগ করতে পারেননি বেয়ারস্টো।
এরপর উইকেটে গিয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন মঈন আলী। ৫৬ বল মোকাবেলা করে ১১ রান করে থামেন তিনি। তাকে শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ার অফ-স্পিনার নাথান লিঁও। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের যাওয়া আসায় কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েন ২৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা ডেভিড মালান। হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৪ রান নামের পাশে রেখে হ্যাজেলউডের চতুর্থ শিকার হন মালান।
৬৪তম ওভারে দলীয় ১৯৬ রানে মালানের বিদায়ে নিশ্চিত জয়ের পথ পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কারণ এরপর বড় ইনিংস খেলার মত আর কোন ব্যাটসম্যানই ছিল না ইংল্যান্ডের। তারপরও ছোট ছোট দু’টি ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে সময়ক্ষেপণ করেন ক্রিস ওকস ও ক্রেইগ ওভারটন।
ওভারটন ১২ রান ও ওকস ২২ রান করেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ওকসকে তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডের যাত্রা ২১৮ রানেই থামিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেসার প্যাট কামিন্স। আর ওভারটনের উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মত ৫ বা ততোধিক উইকেট শিকারের স্বাদ নেন হ্যাজেলউড। এই ইনিংসে ১৮ ওভারে ৪৮ রানে ৫ উইকেট নেন হ্যাজেলউড।
প্রথম ইনিংসে ২৩৯ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দলপতি স্টিভেন স্মিথ। ম্যাচ শেষে বেশ উৎফুল্ল স্মিথ বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে অ্যাশেজ সিরিজ জিতে দারুন অনুভব করছি। প্রথম ইনিংসে বড় লিড ম্যাচ জয়ে দারুণ কাজে দিয়েছে। এরপর বোলারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্স ম্যাচ ও সিরিজ জয় উপহার দিল দলকে। হ্যাজেলউড, লিঁও, স্টার্ক সবার পারফরমেন্স ছিল দারুণ। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করলাম, আমি সত্যিই গর্বিত।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে ম্যাচ হারের ব্যাখ্যা দেয়া সত্যিই কঠিন। তিন টেস্টেই দুর্দান্ত খেলেছে অস্ট্রেলিায়া। কোন ম্যাচেই আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি তারা। সত্যি তাদের এমন পারফরমেন্স প্রশংসনীয়। এমন অবস্থায় আমরা মেলবোর্ন যাচ্ছি। সেখানে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেবো এবং বাকী দু’টেস্টে সেরা পারফরমেন্স দেয়ার চেষ্টা করব।’
আগামী ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে শুরু হবে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ইংল্যান্ড : ৪০৩ ও ২১৮/১০, ৭২.৫ ওভার (ভিন্স ৫৫, মালান ৫৪, হ্যাজেলউড ৫/৪৮)।
অস্ট্রেলিয়া : ৬৬২/৯ডি, ১৭৯.৩ ওভার (স্মিথ ২৩৯, মার্শ ১৮১, এন্ডারসন ৪/১১৬)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৪১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।