ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ফলো-অনের মুখে পড়েছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৫০৮ রান করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। জবাবে ৭৫ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়েছে ক্যারিবীয়রা।
দ্বিতীয় দিন শেষে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৩৩ রানে পিছিয়ে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলো-অন এড়াতে আরও ২৩৩ রান করতে হবে ক্যারিবীয়দের।
অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা সাদমান ইসলামের ৭৬ ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৫৫ রানের সুবাদে প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ। দিন শেষে সাকিবের সঙ্গী ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার সংগ্রহ ছিল ৩১ রান।
নিজেদের ইনিংসটি বড় করার লক্ষ্যে নিয়ে দ্বিতীয় দিন খেলতে নামে বাংলাদেশে। দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ লক্ষ্যের দিকেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমার রোচ। ৮০ রানে থাকা সাকিবকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান তিনি। ৬টি চারে ১৩৯ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান সাকিব। ষষ্ঠ উইকেটে দলকে ১১১ রান উপহার দেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব।
সাকিবের বিদায়ে মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে ক্রিজে মাহমুদুল্লাহ’র সঙ্গী হবার সুযোগ ঘটে লিটন দাসের। ব্যাট হাতে নেমেই মারমুখী মেজাজ প্রদর্শন করেন তিনি। এতে রানের গতি বেড়ে যায় বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহ সর্তক থাকলেও রান তোলায় মারমুখী ছিলেন লিটন। তাই নিজের মুখোমুখি হওয়া ৫০তম বলেই হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মাহমুদউল্লাহও। তবে এ জন্য তাকে ৮৮টি বল মোকাবেলা করতে হয়েছে।
অন্যপ্রান্তে যে মেজাজে খেলছিলেন লিটন, তাতে আজ বড় ইনিংস পাবার আভাসই দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু অর্ধশতকের পর বেশি দূর এগোতে দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ও অফ-স্পিনার ক্রেইগ ব্রাফেট। ৫৪ রানে লিটনকে থামিয়ে দেন ব্রাফেট। ৬২ বল মোকাবেলা করে ৮টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন লিটন। সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-লিটনের জুটির রান ছিল ৯২। এরমধ্যে মাহমুদুল্লাহ’র অবদান ছিলো ৬৬ বলে ৩৩ রান।
লিটন যখন ফিরেন তখন মাহমুদউল্লাহর নামের পাশে শোভা পাচ্ছিলো ৮০ রান। সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তিন অংকের স্বাদ নেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে তাকে। মাহমুদউল্লাহর স্বপ্ন পূরণের পথে প্রথম সহযোদ্ধা হন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু মিরাজ উইকেটে থাকা পর্যন্ত নিজের নামের পাশে মাত্র ৪ রান যোগ করতে পারেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮ রান করে আউট হন মিরাজ।
দশ নম্বরে নামা তাইজুলকে নিয়ে নিজের ৪৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। নিজের সেঞ্চুরি করলেও তাইজুলের সাথে নবম উইকেটে দলকে ৫৬ রান এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। তাইজুল ২৬ রানে ফিরলে শেষ ব্যাটসম্যান নাঈম হাসানকে নিয়ে শেষ জুটিতে দলের স্কোর ৫শ’তে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহকে ভালোই সঙ্গ দেন নাঈম।
শেষ পর্যন্ত নিজের উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন মাহমুুদউল্লাহ। ১০টি চারে ২৪২ বলে ১৩৬ রান করে আউট হন তিনি। ১২ রানে অপরাজিত থেকে যান নাঈম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেবেন্দ্র বিশু-কেমার রোচ-জোমেল ওয়ারিকান-ক্রেইগ ব্রাফেট ২টি করে এবং রোস্টন চেজ-শিরমন লুইস ১টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশ গুটিয়ে যাবার পর দিনের শেষ সেশনে ২৪ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ সময় বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণির বিষে দিশেহারা হয়ে পড়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। স্কোর বোর্ডে ২৯ রান উঠতেই ৫ ব্যাটসম্যান ফিরেন প্যাভিলিয়নে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেটকে শূন্য ও সুনীল অ্যামব্রিসকে ৭ রানে থামিয়ে দেন সাকিব। আরেক ওপেনার কাইরেন পাওয়েল ৪, শাই হোপ ১০ ও রোস্টন চেজ শূন্য রানে শিকার হন মিরাজের। আউট হওয়া সব ব্যাটসম্যানই বোল্ড হয়েছেন।
১২ ওভারের মধ্যে উপরের সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন শিমরোন হেটমায়ার ও শেন ডাউরিচ। ফলে দিনের শেষ সময়টাতে আর কোন উইকেট হারাতে হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। হেটমায়ার ৩২ ও ডওরিচ ১৭ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০৮ (সাকিব ৮০, মাহমুদউল্লাহ ১৩৬, লিটন ৫৪, মিরাজ ১৮, তাইজুল ২৬, নাঈম ১২*; রোচ ২৫-৪-৬১-১, লুইস ২০-২-৬৯-১, ওয়ারিক্যান ৩৮-৫-৯১-২, বিশু ২৮-১-১০৯-২, ব্র্যাথওয়েট ১৫-০-৫৭-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৪ ওভারে ৭৫/৫ (ব্র্যাথওয়েট ০, পাওয়েল ৪, হোপ ১০, আমব্রিস ৭, চেইস ০, হেটমায়ার ৩২*, ডাওরিচ ১৭*; সাকিব ৯-৩-১৫-২, মিরাজ ১০-১-৩৬-৩)।