চট্টগ্রামের এমন উইকেটকে প্রথম থেকেই অবিশ্বাস করে আসছিলেন মুমিনুল। টেস্টের প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে এ উইকেটে কোন বিশ্বাস নেই তার। উইকেট নিয়ে কিছু ধারণ করলেও হয়তো মুমিনুলসহ অন্যরা কখনোই ভাবেননি মাত্র ২০৪ রানে লিড দিয়ে ৯ বছর পর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ।
জয়ের লক্ষ্যে ২০৪ রানের টার্গেট পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন মাঠে নামছিল তখন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ও সমর্থকদের শরীরের ভাষা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল হয়তো প্রথম টেস্টটা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে হঠাৎ করেই সাকিব আল হাসান ভয়ংকর ছোবল দিয়ে অতিথিদের জয়ের যাত্রায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
সাকিব পরপর দুই ওভারে তুলে নেন দুই উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাকিবের বলে কায়রন পাওয়েলকে (০) গ্লাভসবন্দি করেন মুশফিক।এক ওভার পরেই শাই হোপকেও (৩) প্যাভিলিয়নে পাঠান সাকিব।
সিনিয়রে এমন ছোবলে হয়তো ঠিক থাকতে পারেননি তাইজুলও। তাই বড় ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে সর্প হয়ে আর্বিভাব হন তিনি। লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও একই ওভারে রোস্টন চেইজকে (০) এলবিডাব্লিউ করে গ্যালারির নিরবতা ভেঙে দেন। এরপর থেকে টাইগারদের শরীরে আর্বিভাব হয় এক অদৃশ্য শক্তি।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরাও এদিন ছাড় দিতে চাননি। বারবার চেষ্টা করেছে জ্বলে উঠার। তাই হঠাৎ করেই মারকুটে ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় দেখা যায় শিমরন হেটমায়াকে। সাকিবের এক ওভারে ২ চার এক ছক্কায় নেন ১৭ রান। শেষ পর্যন্ত এই মারকুটে ব্যাটসম্যান মেহেদী মিরাজের বলে নাঈম হাসানের তালুবন্দী হন।
প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শন ডারউইচকে এলবিডাব্লিউ করেন তাইজুল ইসলাম। রিভিউ নিয়ে নষ্ট করা ছাড়া আর কোনো লাভ হয়নি। দেবেন্দ্র বিশুকে (২) বোল্ড করে তাদের ৭ম উইকেটের পতন ঘটান তাইজুল। তাইজুলের বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে যান কেমার রোচ (১)। ফিল্ড আম্পায়ার নট-আউট ঘোষণা করলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ। ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের জয়। কিন্তু হঠাৎ করেই দাঁত ভাঙা জবার দেওয়ার নবম উইকেটে জন্য দাঁড়িয়ে যান সুনিল অ্যামব্রিস আর ওয়ারিক্যান। দু’জনের ৬৩ রানের জুটি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। এই শঙ্কাও দূর করেন মেহেদী মিরাজ। তার বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ওয়ারিক্যান (৪১)।
পরে ৪৩ রান করা অ্যামব্রিসকে তাইজুল মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করে। এরপর বাইকটা ইতিহাস। ৯ বছর পর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৪ জয় পায় বাংলাদেশে। তবে এ জয়ের কৃতিত্ব হয়তো সবাই শুধু স্পিনারদের দেবে।
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্রগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রানে অল আউট হয় যায় বাংলাদেশ। ফলে ২০৩ রানে লিড দেয় স্বাগতিকরা। এ দিন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৩১ রান।