চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে অলআউট করে দেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৭৮ রানের লিড পায় টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের কপালে রেখা টেনেছে চিন্তার ভাঁজ। দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৫৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। দিন শেষে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৩ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির পর টেল-এন্ডারদের দৃঢ়তায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন তিন শতাধিক রানের কোটা স্পর্শ করে টাইগাররা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে প্রথম দিন শেষে এ ৮৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৫ করে বাংলাদেশ।
দিনের শেষদিকে এসে বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৩ রানের ব্যবধানে মিডল-অর্ডারে সেরা চার ব্যাটসম্যানকে হারায় টাইগাররা। ফলে ভালোভাবে দিন শেষ করার স্বপ্নে ভাটা পড়ে। কিন্তু নবম উইকেটে ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশের রান দিন শেষে তিন শতাধিক অতিক্রম করেন দুই টেল-এন্ডার নাইম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। নাইমের ২৪ ও তাইজুলের ৩২ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ৩১৫ রানের সংগ্রহ নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিন সকালে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ২৮ বল টিকে তারা। ২৬ রানে থেমে যান নাইম। ৩ বল মোকাবেলা করে শূন্য হাতে আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। দু’টি উইকেটই নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোমেল ওয়ারিকান। ফলে ইনিংসে শ্যানন গাব্রিয়েলের সমান ৪টি করে উইকেট নেন ওয়ারিকান। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৩২৪ রানে।
নিজেদের ইনিংস শুরু করেও বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্কোর বোর্ডে ৩১ রান যোগ হতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। ওপেনার ও অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট ১৩ ও শাই হোপ ১ রান করে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের শিকার হন। আরেক ওপেনার ১৪ রান করা কাইরেন পাওয়েলকে বিদায় দেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন সুনিল অ্যামব্রিস ও রোস্টন চেজ। বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের বেশি দূর যেতে দেননি অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ডান-হাতি অফ-স্পিনার নাঈম হাসান। বল হাতে আক্রমণে এসে নিজের তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে অ্যামব্রিস ও চেজকে শিকার করেন তিনি। অ্যামব্রিস ১৯ ও চেজ ৩১ রান করেন। ফলে ৮৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন হার্ড-হিটার শিমরোন হেটমায়ার। টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে থাকেন তিনি। ফলে লাইন-লেন্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ বোলারদের পরিকল্পনা। এ সুযোগ ৪৩ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ–সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হেটমায়ার। অর্ধশতকের পরও নিজের মারমুখী মেজাজ ধরে রেখেছিলেন তিনি। নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন হেটমায়ার। কিন্তু ব্যক্তিগত ৬৩ রানে থেমে যেতে হয় তাকে। মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হেটমায়ার। ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৭ বলে ৬৩ রান করেন তিনি।
দলীয় ১৮০ রানে হেটমায়ারের বিদায়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন টেল-এন্ডার ব্যাটসম্যানকে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে দেননি বাংলাদেশের নাঈম। দেবেন্দ্র বিশু ৭, কেমার রোচ ২ ও ওয়ারিকান ১২ রান করে নাঈমের শিকার হন। ফলে নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই পাঁচ উইকেট শিকার করে নেন নাইম। বাংলাদেশের অষ্টম বোলার হিসেবে অভিষেক টেস্টে পাঁচ উইকেট নিলেন নাঈম।
নাঈমের কীর্তির মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা-ভরসার প্রতীক হিসেবে ক্রিজে টিকে ছিলেন ডাউরিচ। দলের রানে চাকা ঘুড়াচ্ছিলেন তিনিই। তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ রানে থাকা গাব্রিয়েলকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে আটকে দেন বাংলাদেশের সাকিব। শেষ পর্যন্ত ৬৩ রানেই অপরাজিত থাকেন ডাউরিচ। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০১ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি । বাংলাদেশের নাইম হাসান ৬১ রানে ৫টি ও সাকিব আল হাসান ৪৩ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম ১টি করে উইকেট নেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে প্রথম ইনিংস থেকে ৭৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। সেই লিডকে সাথে নিয়ে দিনের শেষ সেশনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে টাইগাররা। তবে ব্যাট হাতে নেমে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনারদের তোপে দিশেহারা হয়ে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন-আপ। ১৩ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস সৌম্য সরকার। ইমরুল ২ ও সৌম্য ১১ রান করেন।
দুই ওপেনারের মত ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছেন পরের দিকের তিন ব্যাটসম্যানও। এরপর দলীয় ৩২ রানে মুমিনুল হক, ৩৫ রানে সাকিব ও ৫৩ রানে মোহাম্মদ মিথুন আউট হলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপকে দিন শেষে আরও বাড়তে দেননি মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। মুশফিক ১১ ও মিরাজ শূন্য রানে অপরাজিত আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ারিকান-চেজ ২টি করে ও বিশু ১টি উইকেট নেন।