সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফলো-অনে পড়েছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। টেইলরের ১১০ রানের পরও নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০৪ রানে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে।
১৮ রান দূরে থাকায় ফলো-অনে পড়তে হলো সফরকারীদের। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ২১৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১০৭ রানে শিকার করেন ৫ উইকেট।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ ভাগে গতকাল সোমবার ১৮ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ২০ রানে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে হারায় তারা। ১৪ রান করে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের শিকার হন মাসাকাদজা। আরেক ওপেনার ব্রায়ান চারি ১০ ও নাইচওয়াচম্যান ডোনাল্ড ত্রিরিপানো শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। দিন শেষে ১ উইকেটে ২৫ রান সংগ্রহ করেছিল সফরকারীরা।
তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে প্রথম আউট হন ত্রিরিপানো। ৮ রান করে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। দলীয় ৪০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর দলের ইনিংসকে সামনে এগিয়ে নিয়েছেন চারি ও সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। দেখেশুনে খেলে জিম্বাবুয়ের স্কোর বোর্ডকে শক্তিশালী করছিলেন তারা। জুটিতে অর্ধশতকের কোটাও স্পর্শ করেন চারি ও টেইলর। চারি নিজেও দেখা পেয়েছেন হাফ-সেঞ্চুরির। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৫৩ রানে থামেন চারি। তাকে শিকার করেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ।
চারির বিদায়ে মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলের স্কোরে রানের হাওয়া যোগানোর পরিকল্পনা করছিলেন টেইলর। কিন্তু মিডল-অর্ডারের দুই ভরসা সিন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজাকে হতাশায় ডোবান তাইজুল ইসলাম। ১২৯ থেকে ১৩১ রানের মধ্যে উইলিয়ামস ও রাজাকে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। উইলিয়ামস ১১ ও রাজা শূন্য রানে ফিরেন। এমন অবস্থায় ১৩১ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
সেই চাপ দূর করার জন্য পিটার মুরকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন টেইলর। প্রথম দিকে বুঝে-শুনে খেললেও পরে দ্রুতই উইকেটে সেট হয়ে যান তারা। ফলে টেইলর-মুরের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বেশ সহজেই শক্তপোক্ত হচ্ছিল জিম্বাবুয়ের ইনিংসটি। ৫ উইকেটে ১৯৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। এ সময় টেইলর হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিলেও ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন মুর।
দ্বিতীয় সেশনের মত দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনের শুরু থেকেও বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে খেলছিলেন টেইলর ও মুর। হাটি-হাটি করে সেঞ্চুরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। তবে ব্যক্তিগত ৭৫ রানে নিশ্চিত আউট হওয়া থেকে বেঁচে যায় মুর। ৮৮তম ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের বলে কভারে উঁচু ক্যাচ দিয়েছিলেন মুর। কিন্তু লাফ দিয়েও এক হাতে ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ হন একাদশের বাইরে থাকা নাজমুল ইসলাম।
জীবন পেয়েও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি মুর। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আক্রমণে এসেই মুরকে ক্যারিয়ারের প্রথম শিকার বানান বাংলাদেশের মিডিয়াম পেসার আরিফুল হক। লেগ বিফোর হবার আগে ৮৩ রান করেন মুর। তার ১১৪ বলের ইনিংসে ১২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল। টেইলরের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ১৩৯ রান যোগ করেছেন মুর। বাংলাদেশের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মুর না পারলেও একবার জীবন পেয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন টেইলর। সাড়ে পাঁচ বছর পর টেস্ট ফরম্যাটে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন টেইলর। তার সর্বশেষ সেঞ্চুরিটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে হারারেতে।
তিন অংকে পা দিয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি টেইলর। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ১১০ রান নামের পাশে রেখে ফিরেন টেইলর। তবে টেইলরকে ফেরাতে বড় অবদান রাখেন তাইজুল। স্কয়ার লেগে ডান-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নেন তিনি।
টেইলরকে ফেরানোর এক বল পর আরও একটি উইকেট তুলে নেন মিরাজ। ব্রান্ডন মাভুতাকে শূন্য হাতে বিদায় দেন তিনি। এরপর রেগিস চাকাবভা ও কাইল জার্ভিস ফলো-অন এড়ানোর লড়াই শুরু করেন। কিন্তু ইনিংসে ১০৬তম ওভারের তৃতীয় বলে চাকাবভাকে আউট করে জিম্বাবুয়েকে ফলো-অনে ফেলেন তাইজুল। আর ঐ আউটের পরই তৃতীয় দিনের খেলার সমাপ্তি টানেন ম্যাচের দুই অন-ফিল্ড আম্পায়ার। জিম্বাবুয়ের জার্ভিস ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ইনজুরির কারণে ব্যাট হাতে নামেননি তেন্ডাই চাতারা।