সিলেটের অভিষেক টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে পারলো না স্বাগতিক বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সিরিজের প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে টাইগাররা।
১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারের স্বাদ নিতে হলো মাহমুদুল্লাহর দলকে। জয়ের জন্য ৩২১ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ২৮২ ও বাংলাদেশ ১৪৩ রান করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ছিল ১৮১ রান।
জয়ের জন্য টার্গেট ছিল ৩২১ রান। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতা ও অতীত রেকর্ড এ টার্গেট বাংলাদেশের সামনে পাহাড় সমান। প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া। তারওপর নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটে রান চেজ করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছিল ২১৫ রানের। ২০০৯ সালে গ্রেনাডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেটে ৪ উইকেটে ২১৭ রান করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
রানের পাহাড় মাথায় নিয়ে গতকাল (সোমবার), অর্থাৎ তৃতীয় দিন শেষে বিনা উইকেটে ২৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ১৪ ও ইমরুল কায়েস ১২ রান নিয়ে দিন শেষ করেন। দুই ওপেনারের ব্যাটিং দৃঢ়তায় আশার আলো দেখছিলেন কোচ স্টিভ রোডস। তাই তো আশার বেলুন ফুলিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার তিন সেশনেই জিম্বাবুয়ের বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলার স্বপ্ন দেখেন রোডস।
গুরুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট হাতে নামেন লিটন ও ইমরুল। দিনের ১৩তম বলেই জীবন পান ইমরুল। জীবন পেয়েছেন লিটনও। সেটি ১৫তম ওভারের শেষ বলে। তখন নামের পাশে ২১ রান।
একবার জীবন পাবার পর আবারও স্লিপে ক্যাচ দেন ইমরুল। এবারও নিশ্চিত আউট থেকে বেঁচে যান তিনি। তাই দিনের প্রথম ১২ ওভারে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যানের নিশ্চিত আউট থেকে রক্ষা পাওয়া। এতে আজ নিজেদের ভাগ্যকে সুপ্রসন্নই মনে করেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু ২৩তম ওভারের শেষ বলে লিটনের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। জিম্বাবুয়ের অফ-স্পিনার সিকান্দার রাজার শর্ট-পিচ ডেলিভারিকে মিড-উইকেট দিয়ে মারতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বল গিয়ে লাগে লিটনের পায়ে। জিম্বাবুয়ের বোলারদের আউটের আবেদন নাকচ করে দেন স্ট্রাইকে থাকা অন-ফিল্ড আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ’র সহায়তায় নেয় জিম্বাবুয়ে। রিভিউ’তে দেখা যায়, নিশ্চিতভাবে আউট ছিলেন লিটন। ৩টি চারে ৭৫ বলে ২৩ রান করেন লিটন।
লিটনের আউটে ক্রিজে আসেন মোমিনুল হক। উইকেট দ্রুত সেট হবার চেষ্টা করেন তিনি। রাজাকে চার মেরে নিজের ইনিংসের খাতা খুলেন মোমিনুল। এরপর উইকেটে ছেড়ে এসে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে নিজেকে ঝালিয়ে নেয়া চেষ্টা করেন তিনি। কিছুক্ষণ বাদে রাজার মাথার উপর দিয়ে নিজের দ্বিতীয় বাউন্ডারি তুলে নেন মোমিনুল। এতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন মোমিনুল।
কিন্তু পরের ওভারেই মোমিনুলের উইকেট ভেঙে দেন জিম্বাবুয়ের পেস অ্যাটাকের সেরা তারকা কাইল জার্ভিস। ২টি চারে ১৩ বলে ৯ রান করেন মোমিনুল।
দলীয় ৬৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পরও চাপ অনুভব করেনি বাংলাদেশ। ততক্ষণ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে বোলারদের ডেলিভারিগুলো খুব বেশি সমস্যায় ফেলতে পারেনি টাইগারদের। তাই হয়তো খারাপ ফর্মে থাকার পরও ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে উপরের দিকে তুলে আনেন অধিনায়ক মাহমুুদউল্লাহ রিয়াদ। পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে চার নম্বরে খেলা নাজমুল হোসেন ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই শান্তকে টপকিয়ে চার নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন মাহমুদউল্লাহ।
বেশ ধীরলয়ে সর্তকতার সাথেই জিম্বাবুয়ে বোলারদের মোকাবেলা করছিলেন টাইগার দলপতি। উইকেটে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য ছিল তার। তাই বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির চাইতে সিঙ্গেলসের উপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ভুল শট খেলেই আউট হন তিনি।
রাজার ডেলিভারিকে সুইপ করবেন নাকি ডিফেন্ড করবেন ভাবতে-ভাবতে টাইমিং মিস করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। ৪৫ বলে ১৬ রান করেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট থেকেই ফর্মহীনতায় ভুগছেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ৯ ইনিংসে কোন হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে পারেননি টাইগার নেতা।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে উইকেটে আসেন প্রথম ইনিংসে ৫ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত। এবারও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬টি সেঞ্চুরি ও ৯টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২০৮৮ রান করা শান্ত। ৩২ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
দলীয় ১১১ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথ দেখে ফেলে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। বিরতি থেকে ফিরেই ধীরে ধীরে ম্যাচ হারের দিকে ঝুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। বিরতির পর মুশফিকুর রহিমকে হারাতে হয় টাইগারদেরকে। বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি ছাড়া ৪৪ বলে ১৩ রান করেন মুশি। তাকে শিকার করেন ব্র্যান্ডন মাভুতা।
এরপর জিম্বাবুয়ের জয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বাকি চার উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মাভুতা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। তবে জিম্বাবুয়ের জয়কে বিলম্বিত করেছেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরিফুল। সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝেও এক প্রান্ত আগলে ওয়ানডে স্টাইলে খেলেছেন আরিফুল। তাই বাংলাদেশের রান দেড়শ’ ছাড়িয়ে যায়। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আরিফুল আউট হলে দলীয় ১৬৯ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৩৮ রান করেন আরিফুল।
আরিফুলের পর বাংলাদেশের চার ব্যাটসম্যানের কেউই দু’অংকের কোটা পেরোতে পারেনিন। এর মধ্যে তিনজন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। মেহেদি হাসান মিরাজ ৭, তাইজুল ইসলাম-নাজমুল ইসলাম শূন্য রানে ফিরেন, আবু জায়েদ শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন। বল হাতে জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন ব্র্যান্ডন মাভুতা। ২১ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি।
এছাড়া রাজা ৪১ রানে ৩, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ৩৩ রানে ২টি ও কাইল জার্ভিস ২৯ রানে ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন জিম্বাবুয়ের সিন উইলিয়ামস। প্রথম ইনিংসে ৮৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ রান এবং বল হাতে ম্যাচে ১ উইকেট নেন উইলিয়ামস।