বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে দেশের অষ্টম ও বিশ্বের ১১৬তম ভেন্যু হিসেবে টেস্ট অভিষেক হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। সিলেটে টেস্ট অভিষেকের দিনে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। প্রথম দিন শেষে ৯১ ওভারে ৫ উইকেটে ২৩৬ রান করেছে জিম্বাবুয়ে।
ওপেনার ব্রায়ান চারিকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস শুরু করেন মাসাকাদজা। তবে তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে মাসাকাদজার বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন জানান বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদ ও ফিল্ডাররা। তাতে সাড়া দেননি নন-স্ট্রাইকে থাকা আম্পায়ার। ফলে রিভিউ নেন বাংলাদেশ দলপতি মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ। রিভিউতে বেঁচে যান মাসাকাদজা।
এরপর জিম্বাবুয়ের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মাসাকাদজা। তাকে ভালোভাবেই সঙ্গ দেন চারি। ফলে ১০ ওভার শেষে ৩৩ রানের সংগ্রহ পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ১১তম ওভারের চতুর্থ বলেই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তিনি চারির উইকেট উপড়ে ফেলেন। সমাপ্তি ঘটে ৩১ বলে ২টি চারে ১৩ রান করা চারির।
দলীয় ৩৫ রানে চারিকে হারানোর পর ক্রিজে ব্রেন্ডন টেইলরকে সঙ্গী হিসেবে পান মাসাকাদজা। দুুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে বড় জুটির প্রত্যাশায় ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু সেটি হতে দেননি তাইজুল। দলীয় ৪৭ রানে শর্ট লেগে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন ৬ রান করা টেইলর।
এরপর সিন উইলিয়ামসকে নিয়ে জুটি বাঁধেন মাসাকাদজা। দেখে-শুনে খেলে দলকে সামনের দিকে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মাসাকাদজা ও উইলিয়ামস। মধ্যাহ্ন বিরতির আগ মূর্হুতে টেস্ট ক্যারিয়াারের অষ্টম ও বালাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মাসাকাদজা।
চারটি হাফ-সেঞ্চুরিই বাংলাদেশের মাটিতে করেছেন মাসাকাদজা। তাই মাসাকাদজার হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩১ ওভারে ২ উইকেটে ৮৫ রান তুলে প্রথম দিনের প্রথম সেশন শেষ করতে পারে জিম্বাবুয়ে।
মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরেই উইকেট হারানোর ধাক্কা সইতে হয় জিম্বাবুয়েকে। ৩২তম ও দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারের শেষ বলে মাসাকাদজাকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশের আবু জায়েদ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৫ বলে ৫২ রান করেন মাসাকাদজা।
মাসাকাদজার বিদায়ে জুটি বাঁধেন সিন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা। বড় জুটি গড়ার আভাসই দিচ্ছিলেন তারা। তবে ব্যাট হাতে বেশ সর্তকই ছিলেন এ জুটি। তাই এই জুটি ভাঙতে চিন্তিত হয়ে পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ।
তবে টাইগার দলপতির দুঃশ্চিন্তা দূর করেন আরিফুল হকের সাথে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। ১৯ রানে থাকা রাজাকে বোল্ড করেন নাজমুল। ২টি চারে ৫২ বলে ১৯ রান করেন রাজা।
দলীয় ১২৯ রানে রাজাকে হারানোর পর ব্যাকফুটে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে এতে ভড়কে যাননি উইলিয়ামস। পিটার মুরকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন। চা-বিরতির আগে আর কোন উইকেট হারায়নি জিম্বাবুয়ে। তাই ৪ উইকেটে ১৪৯ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।
দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ৬৪ রান যোগ করতে পারে জিম্বাবুয়ে। চা-বিরতির আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান উইলিয়ামস। তার প্রথম অর্ধশতক ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
চার-বিরতির পরও বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন উইলিয়ামস ও মুর। এতে দলীয় স্কোর ২শ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশের। সেই সাথে টেস্ট ক্যারিয়ারের শতক দেখার অপেক্ষায় ছিলেন উইলিয়ামস। কিন্তু উইলিয়ামসের স্বপ্নে পানি ঢেলে দেন বাংলাদেশ দলপতি মাহমুুদুল্লাহ।
ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। স্লিপে বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে দলনেতাকে উইকেট শিকারের স্বাদ দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ফলে ৮৮ রানে থেমে যায় উইলিয়ামসের ইনিংসটি। তার ১৭৩ বলের ইনিংসে ৯টি চার ছিল। পঞ্চম উইকেটে মুরের সাথে ৭২ রান যোগ করেন উইলিয়ামস।
দলীয় ২০১ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে উইলিয়ামসকে হারিয়ে দিনের শেষভাগ নিয়ে চিন্তা পড়ে জিম্বাবুয়ে। ভালোভাবে দিন শেষ করার ইচ্ছায় ছিল সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত দিনের শেষভাগটা ভালোভাবেই শেষ করেন মুর ও রেজিস চাকাভা।
ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৫ রান যোগ করেন তারা। এ সময় স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটে ২৩৬ রান ছিলো জিম্বাবুয়ের। মুর ৩৭ ও চাকাভা ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের তাইজুল ২টি, আবু জায়েদ-নাজমুল-মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।