সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতায় মিরপুর টেস্টে ৭ উইকেটে হারার পর চট্টগ্রাম টেস্টে আরও বাজে পারফর্ম করলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় চট্টগ্রাম টেস্টে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরে দুই ম্যাচ টেস্টে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শুরু হওয়া টেস্টের তৃতীয় দিনেই হেরে গেল বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের করা প্রথম ইনিংসের ৫৭৫ (৬ উইকেটে ডিক্লেয়ার) জবাবে দুই ইনিংস মিলে ৩০২ রান করতে পারে বাংলাদেশ।
সাবেক অধিনায়ক মমিনুল হকের ফিফটি রানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ১৫৯ করলেও ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে আসে ১৪৩ রান। ফলে ইনিংস ব্যবধানের পাশাপাশি ২৭৩ রানেও হারের লজ্জা পায় নাজমুল হোসেন শান্ত নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ টেস্ট দল।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ ম্যাচ নিয়ে ১৬ বার টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। তবে কোন ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। ২০১৫ সালে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচ সিরিজের দুটি ম্যাচও বৃষ্টির কারণে ড্র হয়েছিল। বাকি ১৪টি টেস্টেই হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের জবাবে ১৫৯ রানে গুটিয়ে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ। ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং ব্যর্থতা অব্যাহত রাখে ব্যাটাররা। ৪৩.৪ ওভারে ১৪৩ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের মাত্র তিনজন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে চারজন ব্যাটার দুই অংকে পা রাখতে পারে। তৃতীয় দিনই বাংলাদেশের ১৬ উইকেটের পতন হয়েছে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামে বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৫৩৭ রানে পিছিয়ে ছিলো টাইগাররা। এ অবস্থায় ফলো-অন এড়াতে ৩৩৮ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের।
তৃতীয় দিনের প্রথম ৩ ওভার ভালোভাবে পার করে বাংলাদেশ। চতুর্থ ওভারে এসে প্রথম উইকেট হারায় টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৪ রান নিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ২টি চারে ৯ রান করেন তিনি।
শান্ত ফেরার পর ১০ বলের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ড্যান প্যাটেরসনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে বিদায় নেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ৯৪তম টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩তমবার শূণ্যতে ফিরলেন মুশি।
এরপর গতকালই বিশ্ব সেরা টেস্ট বোলার হওয়া রাবাদার কাছে আত্মসমর্পন করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। মিরাজ ১ রানে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেন। রানের খাতা খোলার আগেই ২ বল খেলে রাবাদার বলে লেগ বিফোর হন অঙ্কন।
বাংলাদেশের ২৯তম ব্যাটার এবং তৃতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে অভিষেক টেস্টে শূন্য রানে আউট হলেন অঙ্কন। এর আগে ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে মোহাম্মদ সেলিম এবং ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নুরুল হাসান সোহান উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে শূন্যতে বিদায় নিয়েছিলেন।
অঙ্কনকে শিকার করে ৬৬তম টেস্টে ১৬তমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন রাবাদা। এর মাধ্যমে সাবেক পেসার ও অধিনায়ক শন পোলককে স্পর্শ করেছেন তিনি। ১০৮ টেস্টে ইনিংসে ১৬বার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন পোলক। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ২৬বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন পেসার ডেল স্টেইন।
৪৮ রানে অষ্টম উইকেট পতনে ঘরের মাঠে টেস্টে সর্বনিম্ন স্কোরে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল টাইগাররা।
কিন্তু নবম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মমিনুল হক ও তাইজুল ইসলাম। দু’জনের ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এ সময় টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬ রানে দিন শুরু করা মমিনুল।
বিরতি থেকে ফিরে ৫ ওভার পর সাজঘরের পথ ধরেন মমিনুল। মুতুসামির বলে লেগ বিফোর হন তিনি। ১১২ বল খেলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮২ রান করেন মোমিনুল।
তাইজুলের সাথে নবম উইকেট জুটিতে ১০৩ রান যোগ করেন মোমিনুল। নবম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ জুটি। বাংলাদেশের পক্ষে নবম উইকেটে চতুর্থ এবং চট্টগ্রামের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো শতরানের জুটি গড়লো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার হিসেবে তাইজুলকে ব্যক্তিগত ৩০ রানে থামিয়ে দেন স্পিনার কেশব মহারাজ। এতে ১৫৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৩৭ রানে ৫ উইকেট নেন রাবাদা। এছাড়াও ডেন প্যাটারসন ও কেশব মহারাজ ২টি করে উইকেট নেন।
৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো-অনে পড়ে ব্যাট হাতে নেমে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে উইকেট না হারালেও ষষ্ঠ ওভার থেকে যাওয়া আসার মিছিল শুরু করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
পেসার ডেন প্যাটারসনের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেন ৬ রান করা ওপেনার সাদমান ইসলাম। সিরিজের আগের তিন ইনিংসে সাদমানের স্কোর ছিলো- ০, ১, ০।
দুই অংকে পা দিয়ে আউট হন আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। মুতুসামির বলে স্লিপে আইডেন মার্করামকে ক্যাচ দেন ১১ রান করা জয়।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা হাত থেকে রক্ষা করা মমিনুল এবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি। মহারাজার বলে ডিপ স্কয়ার লেগে মুতুসামিকে ক্যাচ দেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি শূন্যতে আউটে মোহাম্মদ আশরাফুলকে স্পর্শ করেছেন মোমিনুল। আশরাফুল ৬১ টেস্টে ও মমিনুল ৬৭ টেস্টে ১৬বার শূন্যতে ফিরেছেন।
একবার জীবন পেয়েও মুতুসামির শিকার হয়ে ৭ রানে থেমে যান তিন নম্বরে নামা জাকির হাসান। প্রথম ইনিংসে খালি হাতে ফিরলেও এবার ২ রান করেছেন দলের অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। মুতুসামির চতুর্থ শিকার হন তিনি।
মুশফিকের মত ব্যাট হাতে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ হয়েছেন মিরাজ। মহারাজার বলে সুইপ শট খেলে আকাশে বল তুলে দেন তিনি। ট্রিস্টান স্টাবসের ক্যাচে ৬ রানে আউট হন মিরাজ।
সতীর্থদের যাওয়া আসার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা সচল রেখে উইকেটে সেট হয়েছেন অধিনায়ক শান্ত। কিন্তু ব্যাট হাতে লড়াইটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
মুতুসামির বলে লেগ গালিতে টনি ডি জর্জিকে ক্যাচ দেন টাইগার দলনেতা। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ রান করেন তিনি। ৭৮ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর লোয়ার অর্ডারে শেষ তিন ব্যাটারকে নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেছেন অঙ্কন। অষ্টম উইকেটে তাইজুলকে নিয়ে ১৬ ও নবম উইকেটে হাসান মাহমুদের সাথে ৩৭ রান জড়ো করেন তিনি।
তাইজুল ১ ও অঙ্কন ২৯ রানে আউট হলেও ৩০ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান। শেষ ব্যাটার নাহিদ রানা শূন্যতে আউট হলে ১৪৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
মহারাজ ৫৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ৫৪ টেস্টে ১০বারের মত ইনিংসে ৫ উইকেট নেন মহারাজ। আরেক স্পিনার মুতুসামি ৪৫ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।