রাওয়ালপিন্ডিতে ইতিহাসের জন্ম দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জয়ের ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়লো টাইগাররা। বাবর আজমদের ১০ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের। নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বের রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পুরোটা সময় নিজেদের দখলে রেখে খেলেছে টাইগাররা।
দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে জাকির হাসান (১৫) এবং সাদমান ইসলাম (৯) অপরাজিত থেকে দেশকে এক ঐতিহাসিক জয় উপহার দেন।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাবে চার ব্যাটারের ফিফটি এবং মুশফিকুর রহীমের ১৯১ রানের ইনিংসে লিড নেয় বাংলাদেশ। জবাবে লিড শেষ করে মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে পাকিস্তান।
টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের এটাই প্রথম ১০ উইকেটে জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল ২০১৫ সালে খুলনা টেস্ট ড্র। দেশটির বিপক্ষে ১৪তম টেস্টে এসে ঐতিহাসিক জয় পেল বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ১৩ বারের মোকাবেলা ১২টি হার ও ১টি ম্যাচ ড্র করেছিলো টাইগাররা। এখন পর্যন্ত নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ১৪৩ টেস্টে ২০তম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।
দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ফলে ম্যাচ জিততে মাত্র ৩০ রান টার্গেট পায় বাংলাদেশ। মিরাজ ৪টি ও সাকিব ৩টি উইকেট নেন। ৩০ রানের সহজ টার্গেট সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলেই স্পর্শ করে ফেলে টাইগাররা।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের করা ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানের জবাবে মুশফিকুর রহিমের অসাধারন সেঞ্চুরিতে ৫৬৫ রানের বড় স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। মুশফিক ১৯১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিক।
প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেটে ২৩ রান করেছিলো পাকিস্তান। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৯৪ রানে পিছিয়ে ছিলো তারা।
রোববার (২৫ আগষ্ট) পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ১৪ রানে সাজঘরে ফিরেন পাকিস্তানের অধিনায়ক শান মাসুদ। মাসুদের বিদায়ে ক্রিজে এসে পেসার শরিফুল ইসলামের ডেলিভারিতে প্রথম বলেই লিটনকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান বাবর আজম।
জীবন পেয়ে ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিকের সাথে ৩৮ রান যোগ করেন বাবর। দলীয় ৬৬ রানে বাবরকে ২২ রানে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন টাইগার পেসার নাহিদ রানা। বাবর ফেরার ৮ বল পর সাকিবের বলে স্টাম্পড আউট হন প্রথম ইনিংসে ১৪১ রান করা সৌদ শাকিল। এই ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি শাকিল। ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান।
পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রানের জুটিতে পাকিস্তানকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন শফিক ও উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান। উইকেটে সেট হয়ে সাকিবের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাদমান ইসলামকে ক্যাচ দেন ৩৭ রান করা শফিক।
সাকিবের ব্রেক-থ্রুর পর পাকিস্তানের বিপদ বাড়ান আরেক স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। স্লিপে সাদমানকে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন আঘা সালমান। এতে ১০৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পরও পাকিস্তানের উপর আধিপত্য ধরে রাখে বাংলাদেশের বোলাররা। ২ রানে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। এরপর রিজওয়ানের সাথে দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেন নতুন ব্যাটার নাসিম শাহ। তাদের ৭ রানের জুটিতে লিড নেয় পাকিস্তান।
২১ বল খেলার পর সাকিবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মুশফিককে ক্যাচ দেন ৩ রান করা নাসিম। ১১৮ রানে অষ্টম উইকেট পতনের পর দ্রুত রান তুলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন বাংলাদেশের পথের কাঁটা রিজওয়ান। তবে অর্ধশতকের পর মিরাজের বলে বোল্ড হন রিজওয়ান। ৬টি চারে ৮০ বলে ৫১ রান করেন রিজওয়ান।
১৪২ রানে নবম ব্যাটার হিসেবে রিজওয়ান ফেরার পর ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনিম্ন স্কোর পাকিস্তানের। ২০০৩ সালে মুলতানে ১৭৫ রান ছিলো এতদিন পর্যন্ত সর্বনিন্ম। বল হাতে মিরাজ ২১ রানে ৪টি, সাকিব ৪৪ রানে ৩টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ৩০ রানের সহজ টার্গেট স্পর্শ করতে ৩৯ বল খেলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে স্পিনার সালমানকে চার মেরে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ দেন জাকির। ৩টি চারে অপরাজিত ১৫ রান করেন জাকির। ১টি বাউন্ডারিতে ৯ রান করেন প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করা সাদমান।
এই জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে দুই ধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠলো বাংলাদেশ। ৫ ম্যাচে ২ জয় ও ৩ হারে ৪০ শতাংশ পয়েন্ট অর্জিত হয়েছে টাইগারদের। টেস্ট হেরে এক ধাপ পিছিয়ে অষ্টম স্থানে নেমে গেল পাকিস্তান। ৬ ম্যাচে ২ জয় ও ৪ হারে ৩০.৫৬ শতাংশ পয়েন্টে আছে পাকিস্তান। টেবিলের শীর্ষে আছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।