পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি রেখেই টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সফরকারী পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে দিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এ জয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো অসিরা।
জয়ের পথে ৩১৭ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে পাকিস্তানকে ২৩৭ রানে গুটিয়ে দিতে বড় ভূমিকা রাখেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স ও স্টার্ক। কামিন্স ৫টি ও স্টার্ক ৪ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসেও ৫টিসহ ১০ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন কামিন্স।
বক্সিং ডে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে হাতে নিয়ে ২৪১ রানে এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংস থেকে ৫৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৮৭ রান করেছিল অসিরা। ১৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি।
শেষ ব্যাটার হিসেবে পাকিস্তানের পেসার মির হামজার বলে ক্যারি আউট হলে ২৬২ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ৮টি চারে ১০১ বলে ৫৩ রান করেন ক্যারি। তার আগে স্টার্ক ৯, কামিন্স ১৬, নাথান লিঁও ১১ ও জশ হ্যাজেলউড ১ রানে আউট হন। পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হামজা ৪টি করে উইকেট নেন।
সিরিজে সমতা ফেরাতে ৩১৭ রানের টার্গেট পায় পাকিস্তান। দলীয় ৮ রানে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন স্টার্ক। আব্দুল্লাহ শফিককে ৪ রানে শিকার করেন তিনি। শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে ৪১ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার ইমাম উল হক ও অধিনায়ক শান মাসুদ। ১২ রান করা ইমামকে আউট করে জুটি ভাঙেন কামিন্স।
তৃতীয় উইকেটে বাবর আজমকে নিয়ে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন মাসুদ। তাদের ৭২ বলে ৬১ রানের জুটিতে ব্যাঘাত ঘটান কামিন্স। নবম টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরি করা মাসুদকে ৬০ রানে থামিয়ে দেন কামিন্স। দলীয় ১১০ রানে মাসুদ ফেরার পর পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন জশ হ্যাজেলউড ও স্টার্ক। বাবরকে ৪১ রানে হ্যাজেলউড ও সৌদ শাকিলকে ২৪ রানে শিকার করেন স্টার্ক। এতে ১৬২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এমন অবস্থায় শক্ত হাতে জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আঘা সালমান। দু’জনের হাফ-সেঞ্চুরির জুটিতে পাকিস্তানের দলীয় রান ২শ অতিক্রম করে। তাতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পাকরা। কারন উইকেটে সেট হয়ে দলীয় ২১৯ রানে পৌঁছে পাকিস্তানের জয়ের সমীকরণ ৯৮তে নামিয়ে আনেন রিজওয়ান ও সালমান।
কিন্তু ৬১তম ওভারের চতুর্থ বলে রিজওয়ানের বিপক্ষে ক্যাচ আউটের আবেদন করে অস্ট্রেলিয়া। তাতে সাড়া দেননি নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। হটস্পটে পরিষ্কার বোঝা না গেলে স্নিকোমিটার দেখে রিজওয়ানকে আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ। কারন রিজওয়ানের রিস্ট ব্যান্ডে বলের স্পর্শ দেখা গেছে। তৃতীয় আম্পায়ারের আউটের সিদ্বান্তে সন্তুস্ট হতে পারেননি ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করা রিজওয়ান। সালমানের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৭ রান যোগ করেন তিনি।
দলীয় ২১৯ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে রিজওয়ান ফেরার পর তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে পাকিস্তান। ২৩৭ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারে পাকরা। ১৮ রানে শেষ ৫ উইকেট পতন হয় তাদের। গত ২৮ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এই নিয়ে টানা ১৬ টেস্ট হারলো পাকিস্তান। ৬টি চারে ৫০ রান করেন সালমান। অস্ট্রেলিয়ার কামিন্স ৪৯ রানে ৫টি ও স্টার্ক ৫৫ রানে ৪টি উইকেট নেন।
ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে অধিনায়ক হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন কামিন্স। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টেস্টে ১০ উইকেট নিলেন তিনি। ১২১ বছর ধরে অধিনায়ক হিসেবে এই ভেন্যুতে ৮ উইকেট নিয়ে সেরা পারফরমার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার হিউ ট্রাম্বল।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩১৮ রানের জবাবে ২৬৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ৩ জানুয়ারি সিডনিতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।