টেস্টে প্রথম নেতৃত্বের ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত সেঞ্চুরি এবং মুশফিক-মিরাজের জোড়া ফিফটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় লক্ষ্যই ছুড়ে দেওয়ার পর তাইজুলের ঘূর্ণি। সিলেট টেস্টে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ দিন শেষে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। শেষ দিনে সফরকারীদের সামনে এখনো ২১৯ রান, হাতে রয়েছে মাত্র ৩টি উইকেট।
৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ১১৩ রান করতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছে নিউজিল্যান্ড। বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসেও এখন পর্যন্ত শিকার করেছেন ৪টি উইকেট। বাকি তিনটির মধ্যে একটি করে নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং নাঈম হাসান।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ২১২ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ২০৫ রানে এগিয়ে ছিলো টাইগাররা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৪ ও মুশফিকুর রহিম ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
চতুর্থ দিনের শুরুতেই সাফল্য পায় নিউজিল্যান্ড। দিনের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্তকে থামান নিউজিল্যান্ডের পেসার অধিনায়ক টিম সাউদি। লেগ স্টাম্পের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১৯৮ বল খেলে ১০টি চারে ১০৫ রান করেন শান্ত। মুশফিকের সাথে ১৭০ বল খেলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন শান্ত।
শান্ত ফেরার পর শাহাদাত হোসেনের সাথে ৩৪ ও মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে ৩০ রান যোগ করেন মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে প্রথম সেশনেই বিদায় নেন ৭টি চারে ৬৭ রান করা মুশফিক। স্পিনার আজাজ প্যাটেলের বলে লেগ বিফোর শিকার হন মুশফিক। আরেক স্পিনার ইশ সোধির বলে লেগ বিফোর আউট হবার আগে ১৮ রান করেন অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা শাহাদাত।
দু’বার জীবন পেয়ে গ্লেন ফিলিপসের শিকার হয়ে ১০ রানে আউট উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান আউট হলে দলীয় ২৯১ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় টেল-এন্ডারদের নিয়ে লড়াই শুরু করেন মিরাজ। অষ্টম উইকেটে নাইম হাসানের সাথে ২০ রান যোগ করে দলের রান ৩শ পার করেন মিরাজ। জুটিতে মাত্র ৪ রান করেন নাইম। শেষ উইকেটে শরিফুলকে সাথে নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি করেন মিরাজ।
১০১তম ওভারে প্যাটেলের বলে শরিফুল স্টাম্প আউট হলে ৩৩৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ১০ রানে আউট হন শরিফুল। ৫টি চারে ৭৬ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ। ১৪৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সফল বোলার প্যাটেল।
৩৩৮ রানে অলআউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে জয়ের জন্য ৩৩২ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে রানের খাতা সচল হবার আগেই শরিফুলের প্রথম ওভারেই হোচট খায় নিউজিল্যান্ড। অফ-স্টাম্পের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন টম লাথাম।
ক্রিজে এসে ২টি চারে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে আবারও লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু স্পিনার তাইজুলের বলে লেগ বিফোর আউট হন ১১ রান করা উইলিয়ামসন। শরিফুল-তাইজুলের সাথে উইকেট শিকারে মাতেন মিরাজও। ২ রান করা হেনরি নিকোলসকে বিদায় দেন মিরাজ। এতে ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে চা-বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় সেশন শুরুর পর নিউজিল্যান্ডের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন তাইজুল। এক প্রান্তে আগলে উইকেটে সেট হওয়া কনওয়ের প্রতিরোধ ভাঙ্গেন তাইজুল। শাহাদাতকে ক্যাচ দিয়ে ৭৬ বল খেলে ২২ রান তুলে থামেন কনওয়ে। কনওয়েকে শিকারের কিছুক্ষণ পর উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকে ৬ রানে থামিয়ে নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান তাইজুল। ৬০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে হারের মুখে ছিটকে পড়ে কিউইরা।
এরপর গ্লেন ফিলিপসকে ১২ রানে নাইম এবং কাইল জেমিসনকে ৯ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন তাইজুল। ১০২ রানে ৭ উইকেট হারায় কিউইরা। কিন্তু দিনের বাাকী সময় নিউজিল্যান্ডের আর কোন উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। এতে ৭ উইকেটে ১১৩ রানে দিনের খেলা শেষ করে কিউইরা।
মিচেল ৪৪ ও ইশ সোধি ৭ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাইজুল ৪০ রানে ৪টি, শরিফুল-মিরাজ ও নাইম ১টি করে উইকেট নেন।