মিরপুরে সিরিজের একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ে জিতলো বাংলাদেশ। সফররত আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের এটি সর্বোচ্চ রানের জয়।
টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে রানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জয় ছিল ২২৬ রানের। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানকে এবার ৫৪৬ রানে হারিয়ে নিজের টেস্ট ইতিহাস নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, টেস্ট ইহিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জয়।
টেস্টে সর্বোচ্চ রানের জয়ের রেকর্ড রয়েছে ইংল্যান্ডের দখলে। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭৫ রানের জয় তুলে নিয়েছেল ইংল্যান্ড। টেস্টে এ রেকর্ডের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নাম। ১৯৩৪ সালে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ৫৬২ রানে জয় তুলে নিয়েছিল তারা।
রানের দিক দিয়ে বড় জয়ের রেকর্ডের তিন নম্বরেও ছিল অস্টেলিয়ার নাম। তবে সেটি আর এখন থাকছে না। ১৯১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৩০ রানে হারিয়ে দেওয়া অস্ট্রেলিয়াকে সরিয়ে দিল বাংলাদেশ। ১১২ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য ৬৬২ রানের টার্গেটে তৃতীয় দিন (শুক্রবার) শেষে ২ উইকেটে ৪৫ রান করেছিল আফগানিস্তান। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ৬১৭ রান দরকার ছিলো আফগানদের। চতুর্থ দিনে (শনিবার) পেসার তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ার সেরা ৩৭ রানে ৪ উইকেট দখলের সুবাদে বাংলাদেশকে খুব বেশি ঘাম ঝড়াতে হয়নি।
দিনের তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার এবাদত হোসেন। ৫ রান নিয়ে শুরু করে এবাদতের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন নাসির জামাল। ৬ রান করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট উপহার দেন পেসার শরিফুল ইসলাম।
রহমত শাহর বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্যাচ আউটের আবেদনে সাড়া দেন আম্পয়ার। তবে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান রহমত। রহমতকে শিকার করতে না পারার দুঃখ দ্রুতই ভুলে যান শরিফুল। আফগানিস্তানের উইকেটরক্ষক আফসার জাজাইকে ৬ রানে বিদায় দেন তিনি। গালিতে মেহেদি হাসান মিরাজকে ক্যাচ দেন জাজাই।
জাজাইর বিদায়ে কনকাশনে যাওয়া আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদির পরিবর্তে খেলতে নামেন বাহির শাহ। আগের দিন পেসার তাসকিনের বাউন্সারে হেলমেটে আঘাত পেয়ে আহত অবসর নিয়েছিলেন শাহিদি। শেষ পর্যন্ত ১৩ রানে থেকেই কনকাশন হলেন শাহিদি।
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নেমে শরিফুলের বলে ব্যক্তিগত ৭ রানে আউট হন বাহির। ২৫তম ওভারে দিনের প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসেন আগের দিন ১ উইকেট নেওয়া তাসকিন। এরপর আফগানিস্তানের তিন ব্যাটারকে শিকার করে বাংলাদেশকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেন তাসকিন।
রহমত শাহকে ৩০, করিম জানাতকে ১৮ ও আহমাদজাইকে ১ রানে শিকার করেন তিনি। মাঝে হামজা ৫ রানে মিরাজের শিকার হলে ১১০ রানে ৯ উইকেটে পরিণত হয় আফগানিস্তান।
তাসকিনের বলে আফগানদের শেষ ব্যাটার জহির খান হাতে ব্যথা পেয়ে আহত অবসর নিলে ১১৫ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। এছাড়া শরিফুল ২৮ রানে ৩টি, মিরাজ-এবাদত ১টি করে উইকেট নেন।
সিরিজের একমাত্র টেস্টের দুই ইনিংসেই জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
২০১৯ সালে টেস্ট ফরম্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দেখায় ২২৪ রানে হারের লজ্জা পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় পর ওই হারের প্রতিশোধ বিশাল ব্যবধানে জয়ের মাধ্যমে নিল টাইগাররা।