ঢাকা টেস্ট আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় দিন শেষেই জয়ের স্বপ্ন দেখছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির পর শেষ বিকেলে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিন ভেল্কিতে চাপে পড়েছে সফরকারীরা।
প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের ২১৪ রানের জবাবে মুশফিকের সেঞ্চুরিতে (১২৬) সবগুলো উইকেট হারিয়ে ৩৬৯ রান করে বাংলাদেশ। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ১৫৫ রানের লিড পায় টাইগাররা। পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ২৭ রান করেছে আয়ারল্যান্ড। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১২৮ রানে পিছিয়ে আইরিশরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনই ২১৪ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। জবাবে দিন শেষে ২ উইকেটে ৩৪ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮০ রানে পিছিয়ে ছিল টাইগাররা। বাংলাদেশের তামিম ২১ ও নাজমুল হোসেন শান্ত শূন্যতে ফিরেন। ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন মমিনুল হক।
বুধবার (৫ এপ্রিল) ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মমিনুল। তবে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। দিনের তৃতীয় ওভারেই মমিনুলকে ১৭ রানে বোল্ড করেন পেসার মার্ক অ্যাডায়ার। ৩৪ বল খেলে ৪টি চার মারেন সাবেক এই অধিনায়ক।
৪০ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে মমিনুলের বিদায়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপ মুক্ত করতে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন উইকেটে নতুন ব্যাটার সাকিব। মুশফিকের সাথে জুটির শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেন সাকিব। এতে ৫৪ বলেই জুটিতে ৫০ রান ওঠে যায়। মারমুখী ব্যাটিং অব্যাহত রেখে ৪৫ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব।
৩১তম ওভারে ১০৯ বলে জুটিতে ১শ পূর্ণ করেন মুশফিক-সাকিব। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো জুটিতে ১শ করলেন মুশফিক ও সাকিব। জুটিতে সর্বোচ্চ পাঁচবার সেঞ্চুরি করেছেন হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমরও। সাকিব-মুশফিক ৬৫তম ইনিংসে ও হাবিবুল-জাভেদ ৩২ ইনিংসে পাঁচবার সেঞ্চুরির জুটি গড়েন।
দ্রুত রান তুলতে না পারলেও সাকিবকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে ৬৯ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। দারুণ ব্যাটিং অপরাজিত থেকেই প্রথম সেশন শেষ করেন মুশফিক ও সাকিব।
বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনের সপ্তম ওভারে হতাশায় পুড়তে হয় সাকিবকে। অফ-স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। ১৪টি চারে ৯৪ বলে ৮৭ রান করেন টাইগার দলপতি। চতুর্থ উইকেটে ১৮৮ বলে ১৫৯ রান যোগ করেন সাকিব-মুশফিক।
দলীয় ১৯৯ রানে সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন লিটন দাস। উইকেটে এসেই দ্রুত রান তুলেন লিটন। সাথে রানের গতি বাড়ান মুশফিকও। ৫৬ বলে জুটিতে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তারা। ৫৫তম ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম সেঞ্চুরির তুলে নেন মুশফিক।
সেঞ্চুরির পথে ১৩৫ বল খেলেন মুশি। এ ইনিংসের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে তামিম ইকবালের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক হলেন মুশফিক। মুশফিক সেঞ্চুরি হাঁকালেও হাফ-সেঞ্চুরি সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪১ বলে ৮টি চারে ৪৩ রান করে আউট হন লিটন। মুশফিকের সাথে ৮৪ বলে ৮৭ রান যোগ করেন লিটন।
লিটনের বিদায়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ৩শ ও লিডকে ১শ পার করেন মুশফিক। ৬৮তম ওভারে ম্যাকব্রিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মারে কমিন্সকে ক্যাচ দেন মুশফিক। ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬৬ বলে ১২৬ রান করেন মুশি।
দলীয় ৩৩১ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে মুশফিক আউটের পর বাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডারে ধ্বস নামান ম্যাকব্রিন। তাইজুল ইসলাম-শরিফুল ইসলামকে ৪ রান করে এবং এবাদতকে খালি হাতে ফেরান ম্যাকব্রিন। ৩৫৪ রানে নবম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদকে নিয়ে টেস্টে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন মিরাজ।
স্পিনার বেন হোয়াইটের বলে মিরাজের আউটে ৮০ দশমিক ৩ ওভারে ৩৬৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮০ বলে ৫৫ রান করেন মিরাজ। ৪ রানে অপরাজিত থাকেন খালেদ।
বল হাতে ২৮ ওভারে ১১৮ রানে ৬ উইকেট নেন ম্যাকব্রিন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে এসে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৬ উইকেট নিলেন তিনি। এছাড়া মার্ক অ্যাডায়ার-বেন হোয়াইট ২টি করে উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেই মহাবিপদে পড়ে আয়ারল্যান্ড। সাকিব-তাইজুলের ঘূর্ণিতে ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ওভারেই আইরিশ ওপেনার জেমস ম্যাককলামকে খালি হাতে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সাকিব।
দলের আরেক ওপেনার মারে কমিন্সকে ১ রানের বেশি করতে দেননি তাইজুল। অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নিকে ৩ রানে বোল্ড করেন তাইজুল। কার্টিস ক্যাম্ফারকে ১ রানে থামান সাকিব।
পঞ্চম উইকেটে ১৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন শেষ করেছেন হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর। টেক্টর ৮ ও মুর ১০ রানে অপরাজিত আছেন। সাকিব ১১ রানে ও তাইজুল ৭ রানে ২টি করে উইকেট নেন।