ফলো-অনে পড়েও ওয়েলিংটন টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১ রানের রোমাঞ্চকর জয়ের স্বাদ পেয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ১ রানে জয়ের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় নজির। প্রথমটি ছিল ৩০ বছর আগে।
১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ রানে টেস্ট জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলো-অনে পড়ে নিউজিল্যান্ডের এই ম্যাচ জয় টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ কীর্তি। এর আগে ইংল্যান্ড দু’বার ও ভারত একবার ফলো-অনে পড়ে টেস্ট জিতেছিল।
২২৬ রানে পিছিয়ে ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮৩ রান করে ইংল্যান্ডকে ২৫৮ রানে টার্গেট দেয় নিউজিল্যান্ড। ২৫৮ রানের টার্গেটে চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেটে ৪৮ রান করে ইংলিশরা। এতে টেস্ট জিততে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন ৯ উইকেট দরকার পড়ে নিউজিল্যান্ডের। সফরকারী ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২১০ রান।
এমন সমীকরণ নিয়ে পঞ্চম দিনের তৃতীয় ওভারে দলীয় ৫৩ রানে নাইটওয়াচম্যান ২ রান করা ওলি রবিনসনকে ফেরান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ও পেসার টিম সাউদি। রবিনসনের আউটের পর দ্রুত আরও ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
ওপেনার বেন ডাকেটকে ৩৩ রানে আউট করেন পেসার ম্যাট হেনরি। ১৪ রান করে নিল ওয়াগনারের শিকার হন ওলি পোপ। কোন বল না খেলেই রান আউটের ফাঁদে পড়েন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা হ্যারি ব্রুক। ৮০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ইংলিশরা।
দলের এ অবস্থায় হাল ধরেন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা জো রুট ও অধিনায়ক বেন স্টোকস। প্রথম সেশনের শুরুর ধাক্কা সামলে দলের রান ১৬৮তে নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান রুট ও স্টোকস।
বিরতি থেকে ফিরে ইংল্যান্ডের রান ২শতে নিয়ে যান এ জুটি। এতে ইংল্যান্ডের জয়ের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে পড়ে। শেষ ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৫৭ রানের প্রয়োজন পড়ে ইংল্যান্ডের। তখনি বল হাতে জ¦লে উঠেন ওয়াগনার। ১ রানের ব্যবধানে স্টোকস ও রুটকে শিকার করেন তিনি।
ইনিংসের ৫৭তম ওভারে স্টোকসকে ও ৫৯তম ওভারে রুটকে ফিরিয়ে দারুণভাবে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরান ওয়াগনার। স্টোকস ৬টি চারে ১১৬ বলে ৩৩ ও রুট ১১৩ বলে ৯৫ রানে আউট হন। ৮টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন রুট। ষষ্ঠ উইকেটে ২১৩ বলে ১২১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি দলকে উপহার দেন স্টোকস-রুট জুটি।
স্টোকস-রুটকে হারিয়ে ইংল্যান্ড যখন বিপদে তখন স্টুয়ার্ট ব্রুডকে ১১ রানে বিদায় করে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের পথে টেনে তোলেন হেনরি। ২১৫ রানে অষ্টম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ জয় যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু টেস্টের রোমাঞ্চ যেন তখনও বাকি।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের তোপ সামলে নবম উইকেটে লড়াই শুরু করেন ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক বেন ফোকস ও দশ নম্বর ব্যাটার জ্যাক লিচ। দলের রান আড়াইশ স্পর্শ করেন তারা। ফোকস ও লিচের জুটিতে জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকে ইংল্যান্ড। তখনি ইংল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন সাউদি।
দলীয় ২৫১ রানে সাউদির বলে শেষ হয় ফোকস ও লিচের ৬৪ বলে ৩৬ রানের লড়াকু জুটি। ৪টি চারে ৩৫ রান করা ফোকসকে শিকার করেন সাউদি। শেষ উইকেটে জেমস এন্ডারসনকে নিয়ে দলের জয়ের আশা ধরে রাখেন লিচ। ১৫ বলে ৫ রান যোগ করেন তারা। ২৫৬ রানে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
সমতা থেকে ১ ও জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে ইংলিশরা। ৭৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইংল্যান্ডের স্বপ্নকে চুরমার করে নিউজিল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন ওয়াগনার। ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটার এন্ডারসনকে ৪ রানে শিকার করেন ওয়াগনার। ২৫৬ রানেই শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস।
ওয়াগনার-সাউদি-হেনরির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১ রানের জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে নিউজিল্যান্ড। প্রথম টেস্ট ২৬৭ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। ৩১ বল খেলে ১ রানে অপরাজিত থেকে যান লিচ। ওয়াগনার ৬২ রানে ৪টি, সাউদি ৪৫ রানে ৩টি ও হেনরি ৭৫ রানে ২ উইকেট নেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রান করায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। ৩২৯ রান ও ১ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন ইংল্যান্ডের ব্রুক।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস