ভারতী স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে নাগপুর টেস্টের প্রথম দিনই ১৭৭ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে ৪৭ রানে ৫ উইকেট নেন জাদেজা। জবাবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার অপরাজিত ৫৬ রানে দিন শেষে ১ উইকেটে ৭৭ রান করেছে ভারত। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে প্রথম দিন শেষে ১০০ রানে পিছিয়ে টিম ইন্ডিয়া।
নাগপুরে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার উসমান খাজাকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হন খাজা। পরের ওভারে অস্ট্রেলিয়ার আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করেন পেসার মোহাম্মদ সামি। ওয়ার্নার-খাজা দু’জনেই ১ রান করে করেন।
২ রানে ২ উইকেট পতনের পর অস্ট্রেলিয়াকে লড়াইয়ে ফেরান মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথ। ভারতীয় বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে অবিচ্ছিন্ন থেকে প্রথম সেশন শেষ করেন লাবুশেন ও স্মিথ। ২ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় অস্ট্রেলিয়া।
বিরতির পর লাবুশেন ও স্মিথের জুটি ভাঙেন প্রায় ছয় মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা জাদেজা। দলীয় ৮৪ রানে লাবুশেনকে বিদায় করেন জাদেজা। ৮টি চারে ১২৩ বলে ৪৯ রান করেন টেস্টের এক নম্বর ব্যাটার লাবুশেন।
তৃতীয় উইকেটে স্মিথের সাথে ২০২ বলে ৮২ রান যোগ করেন লাবুশেন। লাবুশেনের বিদায়ে উইকেটে এসে প্রথম ডেলিভারিতেই জাদেজার দ্বিতীয় শিকার হন ম্যাট রেনশ। এরপর পিটার হ্যান্ডসকম্বকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ১শ পার করেন স্মিথ। ইনিংস বড় করার ইঙ্গিত দিলেও জাদেজার তৃতীয় শিকার হন স্মিথ। ৭টি চারে ১০৭ বলে ৩৭ রান করে বোল্ড হন স্মিথ।
১০৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করে সফল হন হ্যান্ডসকম্ব ও উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্নভাবে দ্বিতীয় সেশন শেষ করার পথেই ছিলেন তারা। কিন্তু হ্যান্ডসকম্ব-ক্যারির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান আরেক স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন।
ক্যারিকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪৫০তম উইকেট পূর্ণ করেন অশ্বিন। এর মাধ্যমে স্পিনার অনিল কুম্বলেকে টপকে ভারতের পক্ষে দ্রুততম ৪৫০ উইকেট শিকারের নজির গড়েন অশ্বিন। ক্যারির বিদায়ের পর চা-বিরতির আগে অস্ট্রেলিয়ার আরও ২ উইকেট তুলে নেন অশ্বিন ও জাদেজা।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে ৬ রানে অশ্বিন ও অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা টড মারফিকে খালি হাতে বিদায় করেন জাদেজা। ৮ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে অসিরা।
বিরতি থেকে ফিরে ২৩ বলের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ইতি টানেন অশ্বিন ও জাদেজা। শেষ পর্যন্ত ৬৩ দশমিক ৫ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। হ্যান্ডসকম্বকে ৩১ রানে আউট করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন জাদেজা। ৬১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১১তমবারের মত ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন জাদেজা।
অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটার স্কট বোল্যান্ডকে ১ রানে শিকার করেন অশ্বিন। ২২ ওভারে ৪৭ রানে ৫ উইকেট নেন জাদেজা। ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন অশ্বিন।
দিনের তৃতীয় সেশনে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে ভারতকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও রোহিত। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত।
রোহিতের হাফ-সেঞ্চুরির পর দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৭ বল আগে আউট হন রাহুল। দলীয় ৭৬ রানে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার টড মারফির বলে বিদায় নেন রাহুল। ৭১ বলে ২০ রান করেন তিনি। তিন নম্বরে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামেন অশ্বিন।
রোহিতের সাথে দিনের বাকী অংশ শেষ করেন অশ্বিন। ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৯ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন রোহিত। শূন্য হাতে দিন শেষ করেন অশ্বিন। অস্ট্রেলিয়ার মারফি ১৩ রানে ১ উইকেট নেন।
এ ম্যাচে ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছে টি-টোয়েন্টির এক নম্বর ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব ও উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরতের।