গত কয়েকদিনে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ইংলিশদের টেস্ট খেলার ধরণ। ক্রিকেট বিশ্বকে যেন তারা নতুন করে শেখাচ্ছে টেস্ট কিভাবে খেলতে হয়! ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে একইভাবে উড়িয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস বলছেন, টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন জীবন দিতে চান।
শেষ এক দশক ধরে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে বা হচ্ছে। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই বলেছেন টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তবে তাদের সেইসব আলোচনায় পানি ঢেলে দিয়েছে বর্তমান ইংল্যান্ড দল।
চলতি বছরের জুনে নতুন টেস্ট কোচ ও অধিনায়ক পেয়েছে ইংল্যান্ড। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকস ইংল্যান্ডের টেস্ট কোচ-অধিনায়ক হয়েই টেস্ট খেলার ধরণে পরিবর্তন এনেছেন। প্রথম দুই সিরিজেই ইংলিশদের এমন দাপট দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বে।
সদ্যই ভারতের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছেড়েছেন দুই ইংলিশ ব্যাটার, জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো।
রুট-বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ ড্র
এজবাস্টনে ভারত বধের পর ইংলিশ অধিনায়ক বলেছেন তারা টেস্টের ধরণটাই পাল্টে দিতে চান। বলেন, “ইংল্যান্ডে যেভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়েছে, সেই ধরনটা আমরা নতুন করে লেখার চেষ্টা করছি। গত চার-পাঁচ সপ্তাহে আমরা যে সব পরিকল্পনা করেছি, তা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।”
শুধু ইংল্যান্ডে নয় টেস্ট ফরম্যাটটাকেই নতুন করে জীবন দিতে চান তিনি। “আমরা জানি, টেস্ট ক্রিকেটকে আমরা নতুন জীবন দিতে চাই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে যে সমর্থন আমরা পেয়েছি, তা ছিল দুর্দান্ত। পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা অনুপ্রাণিত করতে চাই। আমরা নতুন সমর্থক আনতে চাই, টেস্ট ক্রিকেটে আমরা ছাপ রেখে যেতে চাই” যোগ করেন ইংলিশ অধিনায়ক।
ইংল্যান্ড যেভাবে আগাচ্ছে তাতে করে বিপক্ষ দল চতুর্থ ইনিংসে তাদের ব্যাট করতে দিতে চাইবে কিনা প্রশ্ন উঠতে পারে! কেননা এই ইংল্যান্ড কোনো লক্ষ্য তাড়া করতেই ভয় পায় না। খেলোয়াড়ী জীবনে যেমন চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পেতেন না, সেই একই দর্শন এই ইংল্যান্ড দলেও ছড়িয়ে দিয়েছেন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম।
টেস্ট ইতিহাসে রান তাড়ায় ইংল্যান্ডের শীর্ষ পাঁচ জয়
পুরো ইংলিশ ড্রেসিংরুমের মানসিকতায় পাল্টে গিয়েছে। স্পিনার জ্যাক লিচের এই কথাই তার প্রমাণ, তাদের চেয়ে ভালো দল হতে পারে কিন্তু তাদের মতো সাহসী কেউ হতে পারবে না।
লিচের উদ্ধৃতি দিয়ে স্টোকস বলেন, “যখন ড্রেসিংরুমে আমাদের চিন্তাভাবনা পরিষ্কার থাকে, মাঠে তখন কাজটা সহজ হয়ে যায়। পাঁচ সপ্তাহ আগেও ৩৭৮ রানের লক্ষ্য থাকলে সেটা হতো ভীতিকর। কিন্তু এখন সবকিছু ভালো। কখনও কখনও দলগুলো আমাদের চেয়ে ভালো হতে পারে, কিন্তু কেউই আমাদের চেয়ে সাহসী হবে না, জ্যাক লিচ যেটা বলেছিল।”
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫.৯৮ ওভারপ্রতি রান তুলে ২৯৯, ৫.৪৪ ওভারপ্রতি রান তুলে ২৯৬, ভারতের বিপক্ষে ওভারপ্রতি ৪.৯৩ রান তুলে ৩৭৮ রান তাড়া করে জিতেছে ইংল্যান্ড। এর আগের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ২৭৭ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।
এরকম আগ্রাসী ব্যাটিং করে টানা চার ম্যাচে আড়াইশোর বেশি রান তাড়া করে জেতার পর টেস্ট ক্রিকেটেকে নতুন জীবন দিতে চাইতেই পারেন যে কোনো অধিনায়ক! আসলেই তো এই ইংল্যান্ড দলটা টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিচ্ছে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি