ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে ৩৭৮ টপকে জিততে ইতিহাস তৈরি করতে হতো ইংল্যান্ডকে। কেননা এর আগে এর আগে সর্বশেষ সর্বোচ্চ ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৫৯ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল তারা। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পারফর্মেন্স অনুযায়ী হয়তো ইংলিশ শিবির আত্মবিশ্বাসীই ছিল।
তার প্রমাণ দেখা গেছে মাঠের ক্রিকেটে। ইংলিশ ব্যাটারদের দেখে একবারও মনে হয়নি তারা এত বড় রানের লক্ষ্য তাড়া করছে। শেষ পর্যন্ত জো রুট ও জনি বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়েই ম্যাচ জিতেছে ‘নতুন’ ইংল্যান্ড।
তবে এর আগেও রান তাড়া করে একাধিক ম্যাচ জিতেছে ইংলিশরা। সেখান থেকেই শীর্ষ পাঁচ ম্যাচের আদ্যোপান্ত পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম।
লক্ষ্য ৩০৫, বিপক্ষ দল নিউজিল্যান্ড, ক্রাইস্টার্স ১৯৯৭
১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টার্সে স্বাগতিকদের বিপক্ষে পুরো ম্যাচটাই ছিল ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটনময়। প্রথম ইনিংসে ৩৪৬ বলে আথারটনের ৯৪ রানের ইনিংসেই ম্যাচে টিকে ছিল ইংলিশরা।
নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ৩৪৬ রানের জবাবে ২২৮ রানে শেষ হয় ইংলিশদের প্রথম ইনিংস। ১১৮ রানের লিডের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ১৮৬ রান যোগ করের কিউইরা। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০৫ রানের।
চতুর্থ ইনিংসেও ইংলিশদের টপ ও মিডল অর্ডারের কোনো ব্যাটারই উইকেটে টিকতে পারেননি। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ইংলিশ ব্যাটারদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যান ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটন।
রুট-বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ ড্র
তার দুর্দান্ত ১১৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ম্যাচ জয়ের রাস্তা তৈরি হয় ইংলিশদের। শেষ দিকে আথারটন ফিরে গেলেও লোয়ার মিডল অর্ডারে জন ক্রাউলির ৪০ ও ডমিনিক কর্কের ৩৯ রানের সৌজন্যে ৩০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতে ইংলিশরা। বলা বাহুল্য, সেই সময়ে ৩০৫ রান খুব বড় লক্ষ্যমাত্রা ছিল দলগুলোর জন্য।
লক্ষ্য ৩১৫, বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, লিডস, ২০০১
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সিরিজ মানেই উত্তাপ ছড়ানো ক্রিকেট। দুই দলের বিখ্যাত অ্যাশেজ সিরিজে ২০০১ সালে লিডসে ৩১৫ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ইংলিশরা।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ হেরে ততক্ষণে সিরিজ খুইয়ে মানসিক ভাবে পিছিয়ে ইংলিশরা। এমন সময়ই এরকম অঘটন ঘটিয়ে বসে তারা। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে করা ৪৪৭ রানের জবাবে ৩০৯ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশদের প্রথম ইনিংস। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স স্টুয়ার্টের ৭৬ রান ছিল ইনিংস সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ১৭৬ রান যোগ করে ইনিংস ঘোষণা করে অজিরা। ৩১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৩ রানেই ফিরে যান দুই ইংলিশ ওপেনার।
এরপরেই দারুণ দৃঢ়তা দেখান ইংলিশ ব্যাটার নাসির হুসাইন ও মার্ক বাউচার। ১৭৩ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে জয়ের রাস্তা দেখান তিনি। অন্যপ্রান্তে নাসিরের ৫৫ রানের ইনিংসও ইংলিশদের জয়ের গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
নাসির ফিরে গেলেও শেষ দিকে মার্ক রামপ্রকাশকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন বাউচার। এই ইনিংসের আগে তিন বছর কোনো সেঞ্চুরি ছিল না বাউচারের। এমনকি দল থেকে বাদ পড়ার গুঞ্জনও শোনাক যাচ্ছিল। তখন এরকম কালজয়ী ইনিংস খেলেন তিনি।
লক্ষ্য ৩৩২, বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, মেলবোর্ন, ১৯২৮
৯৪ বছর আগের ম্যাচ এটি। প্রথম ইনিংসে দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ৩৯৭ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। এই তালিকায় একমাত্র এই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে লিড পেয়েছিল ইংলিশরা।
জবাবে ওয়ালি হ্যামমন্ডের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৪১৭ রানে শেষ হয় ইংলিশদের প্রথম ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ডন ব্রাডমানের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া ৩৫১ রান করলে জয়ের জন্য ইংলিশদের লক্ষ্য দাড়ায় ৩৩২ রান।
তাড়া করতে নেমে হারবার্ট স্টাকলিফের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩৩২ রান টপকে তিন উইকেটে জয় নিশ্চিত করে ইংলিশরা।
লক্ষ্য ৩৫৯, বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, লিডস, ২০১৯
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৯ রানে অলআউট করে ব্যাটিং নেমে বড়সড় লজ্জ্বায় পড়ে ইংলিশরা। মাত্র ৭৯ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা, একমাত্র জো ডেনলির ব্যক্তিগত স্কোরই (১২) ছিল ডাবল সংখ্যার!
দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৬ রান যোগ করলে লিড দাঁড়ায় ৩৫৮! প্রথম ইনিংসে একশোর নীচে অলআউট হওয়া ইংল্যান্ডের সামনে এই লক্ষ্য ছিল পাহাড়সম।
এই টেস্টেই টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন বেন স্টোকস। ১৩৫ রানের ইনিংসে ক্রিকেট বিশ্বে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
জো রুট ছাড়া আর কোনো ইংলিশ ব্যাটারই বলার মতো লড়াই করতে পারেননি। শেষদিকে তো ৯ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই অবিশ্বাভাবে একা হাতে ম্যাচ বের করে আনেন স্টোকস।
লক্ষ্য ৩৭৮, বিপক্ষ ভারত, এজবাস্টন, ২০২২
প্রথম ইনিংসে ভারতের ৪১৬ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৮৪ রানে শেষ হয় ইংলিশদের প্রথম ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রানের লিডের সঙ্গে আরও ২৪৫ রান যোগ হলে ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭৮ রান।
৩৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের সৌজন্যে আক্রমণাত্মক শুরু পেয়েছিল ইংল্যান্ড। শুরু থেকেই সাড়ে চার করে রান তুলে ভারতীয় বোলারদের আগাম বার্তা দিয়েই রেখেছিলেন ইংলিশ দুই ওপেনার জ্যাক ক্রাউলি ও অ্যালেক্স লিচ।
জো রুট তো রীতিমতো এই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছেড়েছেন। জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে বুমরাহ, শামীদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছিলেন।
৩১৬ বলে ২৬৯ রানের জুটি গড়েছেন রুট ও বেয়ারস্টো। দুজনে যেন রান করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন এই ম্যাচে। দুইজনের পাল্লায় ভুক্তভোগী হয়েছেন ভারতের বোলাররা। তারা যেন এদিন বুঝতেই পারছিলেন না ঠিক কোন জায়গায় বল করলে থামানো যাবে দুই ইংলিশ ব্যাটারকে!
৭১ বলে প্রথম হাফসেঞ্চুরি করা রুট সেঞ্চুরি করেন ১৩৬ বলে। তাকে বল করলেই সেটা অবলীলায় রানে পরিণত করছিলেন তিনি।
অন্যপ্রান্তে এই অবিশ্বাস্য জুটির আরেক পিলার জনি বেয়ারস্টো গতকাল হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ৭৫ বলে, আজ সেঞ্চুরি করেছেন ১৩৮ বলে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি