জেতার জন্য টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ৩৭৭ রান টপকাতে হবে। অন্য কোনো দল বা সময় হলে হয়তো বলা যেত তাড়া করা দল হারবে আর না হয় ম্যাচ ড্র হবে। কিন্তু এই ইংল্যান্ড দল যেন সাম্প্রতিক সময়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশনে নেমেছে। শুধুমাত্র ইংলিশরা তাড়া করছে বলেই এই লক্ষ্যও নিরাপদ নয়।
হলোও তাই, চতুর্থ দিন শেষে ইংলিশরা ম্যাচকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে,যেখান থেকে জয়ের সঙ্গে রেকর্ডও হাতছানি দিচ্ছে ইংল্যান্ডকে। কারণ, টেস্টে এর আগে কখনো ৩৫৯ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড-ভারত টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে চালকের আসনেই ছিল সফরকারী ভারত। কিন্তু সোমবার (৪ জুলাই) চতুর্থ দিনে মাত্র ১২০ রানেই শেষ সাত উইকেট হারাত তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে চেতেশ্বর পূজারা ও ঋষভ পান্থের হাফ সেঞ্চুরি ছাড়া আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেনি। কিন্তু এরপরও ৩৭৭ রানে লিড পেয়ে নিরাপদ অবস্থানেই ছিল জাসপ্রিত বুমরাহর দল।
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে ইংলিশরা যত ভালোই খেলুক না কেনো, ওপেনিং জুটি নিয়ে চিন্তা ছিলোই। কেননা, ওপেনিং জুটিই যে বড় হচ্ছিল না। কাল সেটাও হলো। দুই ইংলিশ ওপেনার মিলে দারুণ আক্রমণাত্মক শুরু এনে দেন ইংল্যান্ডকে। ওভার প্রতি সাড়ে চার এর বেশি রান তুলে প্রথম থেকেই চাই চাপে ফেলে দেন ভারতকে।
৪৯ বছরের পুরোনো রেকর্ডে ভাগ বসালেন ঋষভ
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে লক্ষ্য তাড়া করার একটা মনস্তাত্বিক চাপ তো ছিলোই ভারতের উপর। ১০০ রান পার করার পর ভাঙে ইংলিশদের ওপেনিং জুটি। চা–বিরতির এক ওভার আগে ওপেনার জ্যাক ক্রাউলিকে (৪৬) বোল্ড করে ভারতকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহ।
তিনে নামা অলি পোপ বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি, ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।তৃতীয় সেশনের প্রথম বলে তাকে ঋষভ পান্থের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন বুমরাহ। অধিনায়কের জোড়া ধাক্কার পুরো ভারত দল তখন দারুণ উজ্জীবিত। মাত্র দুই রান পরে রান আউট হয়ে ফিরেন ৫৬ রান করা অ্যালেক্স লিচ। মোহাম্মদ শামীর থ্রো থেকে ধরে লিচ পৌঁছানোর আগেই উইকেট ভেঙে দেন রবীন্দ্র জাদেজা।
তিন রানে তিন উইকেট হারিয়ে তবে কি ইংল্যান্ড ম্যাচ থেকে ছিটক গেল বা এতুটুকু চাপে পড়লো বলে মনে হয়? এতটুকু না। কারণ এই ইংল্যান্ড চাপ বোঝে না, বোঝে শুধু প্রতিআক্রমণ। সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশদের প্রতিআক্রমণের সামনে অসহায় হতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।
ভারতেও বিপক্ষেও ঠিক একই চিত্র দেখা গেলো এজবাস্টনের মাঠে। তিন রানে তিন উইকেট হারানোর আগের সিরিজের ম্যান অব দ্যা ম্যাচ জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো মিলের ম্যাচের বাকি সময় শুধু নির্বিঘ্নে কাটাননি ভারতের বোলারদের রাতের ঘুম বন্ধ করার ব্যবস্থাও করেছেন।
দুজনে মিলে দিনের শেষ ৩৩ ওভারে রান তুলেছেন ১৫০। তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন সেখান থেকে ইংল্যান্ড না জিতলেই বরং অঘটন মনে হবে। অথচ এর আগে তাড়া করে ইংল্যান্ডের জেতার রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৫৯!
ব্যাট হাতে বর্তমান দলে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে থাকেন জনি বেয়ারস্টো। প্রথম ইনিংসেও দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে ইংলিশদের পিছিয়ে থাকা রানের ব্যবধান কমিয়েছেন। এই ইনিংসেও উঁকি দিচ্ছে আরও একটি সেঞ্চুরি।
সদ্য নিউজিল্যান্ড সিরিজে চতুর্থ ইনিংসে ৭২ বলে জনির সেঞ্চুরি এত দ্রুত ভুলে যাওয়ার কথা নয়। কিউই বোলারদের উপর টর্নেডো চালিয়ে ম্যাচটা রীতিমতো নিউজল্যান্ডের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তখন পাশে পেয়েছিলেন অধিনায়ক বেন স্টোকসেকে। এবার সঙ্গে আছে সাবেক অধিনায়ক জো রুট।
অধিনায়ক থাকেন বা না থাকেন জো রুটের ব্যাটে রান বন্যা হচ্ছেই। এ ম্যাচেও ভিন্ন কিছু হয়নি। ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন রুট। যদিও স্লিপে তাকে একবার জীবন দিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটার হুনুমা বিহারী। দিন শেষে ১১২ বলে ৯ চারে ৭৬ রানে অপরাজিত জো রুট।
অন্যপ্রান্তে শুরুতে একটু সময় নিলেও সময়ের সঙ্গে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন জনি বেয়ারস্টো। ৩৪ বলে ১৮ থেকে ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। দিনশেষে ভারতীয় বোলারদের মনে ভয় ধরিয়ে ৮৭ বলে ১ ছয় ও ৮ চারে ৭২ রানে অপরাজিত জনি বেয়ারস্টো।
দুজনে মিলে দিন শেষ করেছেন ১৫০ রানের। ইংল্যান্ডের ইতিহাস তৈরি করতে প্রয়োজন মাত্র ১১৯! বাইরে এখনো বসে আছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। তাই রেকর্ড সৃষ্টি কেবল সময়ের ব্যাপার এখন।
এই সিরিজের আগে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা তিন ম্যাচে ২৫০ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে ইংল্যান্ড। তাই সাম্প্রতিক ইতিহাস তো অনুপ্রেরনাই জোগাচ্ছে ইংলিশদের।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি