টেস্ট ক্রিকেটে পথচলা ২২ বছর পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবুও সাদা পোশাকে মাঠে নামলেই টাইগারদের পারফর্মেন্সের হতশ্রী অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে বড় দুই-একটা দলকে হারিয়ে চমক দিলেও ধারবাহিক হতে পারেনি তারা। বরং সিরিজ যায়, সিরিজ আসে কিন্তু লাল বলে বাংলাদেশের ব্যর্থতার চিত্র পরিবর্তন হয় না। সর্বশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে টাইগাররা।
সিরিজের ২য় ম্যাচের হারে টেস্ট ক্রিকেটে শততম হার পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের। নিশ্চয়ই মন খারাপের খবর, তবে মন খারাপ আরও বাড়বে যখন জানবেন, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলেই শততম পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছেন সাকিব-তামিমরা। তবে যদি নিয়মিত বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ দেখেন, তাহলে মন খারাপ নাও হতে পারে। কারণ দিনের পর দিন হারে তো এতদিনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা!
২০০০ সালে ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং করলেও দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ধসে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা।
প্রথম হারের ২২ বছর পর টাইগাররা পেলো শততম হারের লজ্জা। প্রথম হারটা দেশের মাটিতে হলেও শততম হার এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। মাঝে টাইগাররা মাঠে নেমেছে ১৩২ টেস্টে। তার মানে ১৩৪তম টেস্টে হেরে বাংলাদেশের হারের সংখ্যা ১০০! এ সময়ে বাংলাদেশে টেস্ট জেতার সংখ্যা মাত্র ১৬টি! অমিমাংসিত ম্যাচের সংখ্যা ১৮টি।
টেস্ট সংস্কৃতি আগেও ছিল না, এখনো নেই: সাকিব
শততম হারে সবচেয়ে কম টেস্ট খেলা তালিকার প্রথম স্থানে স্থানে ছিল নিউজিল্যান্ড, যেটা এখন বাংলাদেশের দখলে। ২৪১তম ম্যাচে ১০০ টেস্ট হারের স্বাদ পেয়েছে তারা। শততম হারের স্বাদ পাওয়ার আগে ৩৩টি ম্যাচে জয়ে পেয়েছিল কিউইরা।
শ্রীলঙ্কার শততম হার এসেছে ২৬৬ ম্যাচে। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৬৮তম ম্যাচে, ভারত ৩০৩তম, পাকিস্তান ৩৫৭তম, দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭৯তম ও ইংল্যান্ডের ৩৪১তম ম্যাচে শততম হারের স্বাদ পেয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশি ৩৭৪ ম্যাচে মাঠে নেমে শততম ম্যাচ হেরেছিল।
২২ বছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ১৮টি ম্যাচ হেরেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সবচেয়ে বেশি ২৪টি ম্যাচও খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। লঙ্কানদের বিপক্ষে টাইগারদের একমাত্র জয় এসেছে শততম টেস্টে। বাকি ২৩ ম্যাচের ১৮টিতেই হার সঙ্গী বাংলাদেশের, বাকি পাঁচ ম্যাচে কোনো ফল আসেনি।
এছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি আটটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ম্যাচের সাতটিতে হার তিন ম্যাচে ড্র করেছে টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ ম্যাচে ১৪টিতেই হারের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। বাকি ম্যাচে ৪টি জয় ও ২টি ড্র। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ ম্যাচ খেলে টাইগারদের জয় একটিতে। বাকি ম্যাচের ১৩টি হারে ও একটি ড্র।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ম্যাচে ৯টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে একবারই ইংলিশদের হারাতে পেরেছে টাইগাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও বাংলাদেশের একটাই জয়। অজিদের বিপক্ষে নয় ম্যাচ খেলে বাকি আটটাতেই হেরেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও হালের আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পায়নি। ভারতের বিপক্ষে ১১ ম্যাচ খেলে নয়টাতেই হেরেছে টাইগাররা, বাকি দুই ম্যাচে ড্র।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচ খেলে ১২টাতে হার সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। সর্বসাকুল্যে এক ড্রই তাদের সেরা সাফল্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪ম্যাচ খেলে কোনো জয় পায়নি টাইগাররা। দুই ম্যাচ ড্র হয়েছে, তাতেও বৃষ্টির অবদানই বেশি। টেস্ট পাড়ার নবীন সদস্য আফগানদের বিপক্ষে এক ম্যাচ খেলে একটাতেই হেরেছে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা সম্ভব, মত সাকিবের
২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে এক ইনিংসে ৬৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ৪৩ রান টাইগারদের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৬৯টি সিরিজ খেলেছে। ৫৪টি সিরিজেই পরাজিত দল ছিল টাইগাররা। এর মধ্যে মাত্র ছয়টি সিরিজের শিরোপা গেছে বাংলাদেশের ঘরে। সবচেয়ে বেশি ৪টি সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ও দুইট সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ৯টি সিরিজে ড্র করেতে পেরেছে বাংলাদেশ।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি