অধিনায়ক সাকিব ম্যাচের আগেরদিনই বলে দিয়েছিলেন, সেন্ট লুসিয়ার উইকেট ব্যাটারদের জন্য সহায়ক হবে। এখানে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে, যেটা খুব একটা কঠিন হবে না। কিন্তু অধিনায়কের কথা রাখতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম দিন হতাশায় শেষ হলো টাইগারদের।
অ্যান্টিগা টেস্টের দুঃস্মৃতি পিছনে ফেলে সেন্ট লুসিয়াতে বেশ ভালো শুরু করেছিল বাংলাদেশ। জয় একপাশে একটু নড়বড়ে হলে অন্যপ্রান্তে দারুণ সাবলীল ভঙ্গিমায় ব্যাটিং করছিলেন তামিম ইকবাল।
শুক্রবার (২৪ জুন) ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ এদিন একাদশে দু’টি পরিবর্তন এনেছে। সাবেক অধিনায়ক মুমিনুলের জায়গায় আট বছর পর টেস্ট একাদশে ফিরেছেন এনামুল হক বিজয়। অন্যদিকে মোস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রাম দিয়ে নেওয়া হয়েছে শরিফুলকে।
উইকেট পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যর্থতার চিত্র। আগের টেস্টগুলোর চেয়ে এদিন ভালো শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং ধ্বসে মাত্র ২৩৪ রানেই শেষ হয়েছে টাইগারদের প্রথম ইনিংস।
৪১ রানের ওপেনিং জুটিতে মাহমুদুল হাসান জয়কে অন্তত তিনবার আউট দিলে রিভিউ নিয়ে বেচেছেন তিনি। তবে অস্বস্তির ব্যাটিং বেশিক্ষণ করতে পারেননি এই ব্যাটার। তেরোতম ওভারে অভিষিক্ত স্বাগতিক পেসার ফিলিপসের ভিতরে ঢোকা বল ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন জয়, তখন তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ মাত্র ১০!
অন্যপ্রান্তে সাবললী ব্যাটিং করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল। সেন্টি লুসিয়ার উইকেটে ভালো করতে হলে টপ অর্ডারের ব্যাটারদের, কিন্তু তার বিপরীতটাই ঘটেছে বাংলাদেশের ইনিংসে।
সেন্ট লুসিয়ার প্রথম ঘণ্টায় তামিমের ব্যাটিংই বুঝিয়ে দিচ্ছিল উইকেটে আহামরি কিছু নাই বোলারদের জন্য। ৯ চারে ৪৬ রানে পৌঁছানো তামিমের কাছ থেকে বড় ইনিংসই আশা করছিল তখন টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু ২৩তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার আলজেরি জোসেফের বলে আলগা শটে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার।
এরপর আট বছর পর একাদশে ফেরা এনামুল হক বিজয় ও ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া নাজমুল হোসাইন শান্ত মিলে মধ্যাহ্ন বিরিতির আগের সমটুকু নির্বিঘ্নে পার করে দেন।
রেকর্ড গড়ে বিজয়ের প্রত্যাবর্তন
লাঞ্চ সেরে এসেই পুরোনো চেহারায় ফিরে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। ১০৫ রানে দুই উইকেট থেকে হয়ে ১২৫ রানে পাঁচ উইকেট! ১০৮ রানে চার বলের ব্যবধানে আম্পায়ার্স কলের স্বীকার হয়ে ফিরে যান শান্ত ও বিজয়। শান্ত করেন ২৬ ও প্রত্যাবর্তনে বিজয়ের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান।
এরপর চা বিরতির পর আবারও ধ্বস নামে। দলীয় ১২৫ রানে ব্যক্তিগত আট রান করে ফিরে যান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাত নম্বরে ব্যাট করতে আসা নুরুল হাসানও ফিরে যান মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে।
উইকেটে তখন নিঃসঙ্গ যোদ্ধা লিটন কুমার দাস। সোহানের পর মিরাজ এসেও খুব বেশি সময় টিকতে পারেননি। ফলে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটানো লিটনকে এদিন কেউই সঙ্গ দিতে পারেননি। তবু আট চারে তার ৫৩ রানের ইনিংসটি (১৪তম টেস্ট অর্ধশতক) জলজল করছে বাংলাদেশের ইনিংসে। লিটনের ব্যাটিং বাংলাদেশের ড্রেসিং দিয়েছে এক পশলা আনন্দের উপলক্ষ! অবশ্য ২০২২ সালে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১০০০ এর বেশি রান করা ব্যাটার তো এরকমই ব্যাটিং করবেন।
শেষ পর্যন্ত লিটন আলজেরি জোসেফের নীচু হয়ে যাওয়া বলে পুল করতে গিয়ে ৫৩ রানে ফেরার পর পেসার শরিফুলের ১৭ বলে ২৬ ও এবাদতের ২১ রানের ইনিংসে ২৩৪ রানে থামে টাইগারদের প্রথম ইনিংস। তিন চারে এই ৩৫ রান এবাদতের শুধু টেস্ট নয়, প্রথম শ্রেণিতেই ইবাদতের এটি সর্বোচ্চ স্কোর।
শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং আরও হতাশা বাড়িয়েছে বাংলাদেশের। ১৬ ওভার বোলিং করে স্বাগতিকদের কোনো উইকেট ফেলাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ক্রেগ ব্রাফেট ও জন ক্যাম্পবেলের উদ্বোধনী জুটিতে শেষ বিকেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ৬৭ রান।
ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের উপর চড়াই হয়ে খেলতে থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটার। শেষ চার ওভারে কোনো রান না আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ১২ ওভারেই এসেছে ৬৭!
১৬ ওভার বোলিং করে মাত্র দুইবার সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জন ক্যাম্পবেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছিলেন খালেদ, যদিও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। এরপর এগারোতম ওভারে এবাদত একই ব্যাটারকে ইনসাইড এজে বোল্ড করছিলেন প্রায়, ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান।
এরপর স্পিনাররা আক্রমণে আসলেও কোনো প্রভাব ফেলেনি স্কোরবোর্ডে। ম্যাচে ফিরতে হলে দ্বিতীয় দিন যতদ্রুত সম্ভব ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করতে হবে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি