টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বার বার ব্যর্থতার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে আত্মবিশ্বাসের সাথে লড়াই করতে চায় বাংলাদেশ। শুক্রবার (২৪ জুন) সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন সামি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।
সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারী বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দারুণ শুরু করে ক্যারিবিয়ানরা। ওই ম্যাচেও যথারীতি চরম ভাবে ব্যর্থ ছিল টাইগারদের টপ অর্ডার। এতেই মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের প্রথম ইনিংস। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান হারের মূল কারণ হিসেবে টপ অর্ডারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের জন্য নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করার কোন উপায়ই যেন খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫টি টেস্টে নিয়মিত ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। সেটি হয় প্রথম ইনিংসে, না হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। এতেই বারবার পরাজয়ের লজ্জা মাথা পেতে নিতে হয়েছে টাইগারদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের দুই দফা ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটেছে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও। প্রথম টেস্টে ৫৩ ও দ্বিতীয় টেস্টে ৮০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগার ইনিংস।
এদিকে ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের দারুণ ব্যাটিংয়ে চাপে ফেলে দিয়েছিল সফরকারীদের। শেষ পর্যন্ত ড্র মেনে নিয়ে মাঠ ছাড়ে দু’দল। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসেই টপ অর্ডারের ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে। ২৪ রানেই হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। যার ফলে আরো একটি পরাজয় মাথা পেতে নিতে হয় টাইগারদের। বারবার এমন ব্যর্থতায় বাংলাদেশ এখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ ম্যাচেও হারলেও বাংলাদেশ যে শুধু আরো একবার পরাজয়ের লজ্জায় পড়বে শুধু তাই নয়, টেস্ট ক্রিকেটে শততম পরাজয়ের স্বাদও পেতে হবে তাদেরকে।
এ পর্যন্ত ১৩৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে জয় মাত্র ১৬টি। পরাজিত হয়েছে ৯৯টি ম্যাচে। বাকি ১৮টি ম্যাচ হয়েছে ড্র । অধিকাংশ ড্র’ই বৃষ্টির কল্যাণে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু সেন্ট লুসিয়ায় একটু আশাবাদীই হতে পারে বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে এই মাঠেই ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিল টাইগাররা।
২০০৪ সালের স্মরণীয় ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ রফিক। ম্যাচটিতে জয়ের দ্বারপ্রান্তেই নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্রয়ের মাধ্যমে হাফ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিক ক্যারিবীয়রা।
এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ কি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? এই প্রশ্নটিই অনুরাগীদের এই ম্যাচের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের বিপর্যয়ের মাশুল দেয়ার পরও সেখানে পেস বোলারদের পারফর্মেন্স ছিল ইতিবাচক। টপ অর্ডারে এক-দুইজন ব্যাটার দাঁড়িয়ে যেতে পারলে ম্যাচটি হয়তো বা জিততেও পারতো বাংলাদেশ।
সুতরাং প্রথম টেস্টের পর সাকিবের দেওয়া ইঙ্গিতটিই হবে প্রথম ও প্রধান বিষয়। সাকিব বলেন, “আমাদেরকে সর্ব প্রথম নিজেদেরকেই আরও ভালোভাবে মেলে ধরতে হবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলাটা কোনভাবেই ভালো কিছু নয়। প্রথম ওই সেশনটিই আমাদের একেবারেই শেষ করে দিয়েছে। আমরা এতো বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলাম যেখান থেকে বোলারদের আর কিছু করার ছিল না। অথচ বোলাররা সবাই আন্তরিকতার সাথে বল করে গেছেন।”
এ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৪টিতে। হেরেছে ১৩টি ম্যাচে। বাকী দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
এদিকে টাইগার শিবিরের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং। নির্ভরযোগ্য ওই ব্যাটার টানা নয় ইনিংসে দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই ইনিংস থেকে তার সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে ০ ও ৪ রান।
মমিনুল ইচ্ছে করলে বিরতি নিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন সাকিব। তবে সাকিবের ধারণার সাথে একমত হয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সাবেক অধিনায়ককে আসন্ন ম্যাচের বাইরে রাখবেন কিনা সেটি এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।
ইতোমধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডের জন্য ব্যাটার এনামুল হক বিজয় ও পেসার শরিফুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যানেজমেন্ট হয়তো একাদশে দু’টি পরিবর্তন আনতে পারে। সেক্ষেত্রে একাদশে জায়গা পেতে পারেন বিজয় ও শরিফুল।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর