সাম্প্রতিক ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে সাফল্যের ট্র্যাকে ফিরতে অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। মমিনুল হকের দায়িত্ব ছাড়ার পর নতুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ে যাচ্ছেতাই পারফরমেন্স ও দলকে সাফল্য এনে দিতে না পারায় টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি নেন মমিনুল হক। তার জায়গায় তৃতীয়বারের মতো অধিনায়কত্বের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সব কিছু মিলিয়ে সাকিবের নেতৃত্বে নতুন যুগের সূচনা করতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ।
সাকিব নতুন করে অধিনায়ক হওয়াতে টেস্ট ফরম্যাটে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে বাংলাদেশের। কারণ এই সংস্করণের ব্যর্থতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে টাইগাররা। ২০০০ সালে ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে প্রবেশের পর এখন পর্যন্ত ১৩২টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশে। জয় আছে মাত্র ১৬টি, ম্যাচ হার ৯৮টি। এরমধ্যে ৪৫টি ইনিংস ব্যবধানে হার রয়েছে তাদের। ১৮ টেস্ট জয়তুল্য ড্র থাকলেও তার বেশিরভাগই হয়েছে বৃষ্টির কারণে।
তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাকিব। সম্ভবত, এটিই অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের শেষ দায়িত্ব পালন করতে নামছেন তিনি। সবারই প্রত্যাশা তার অধীনে এই ফরম্যাটে পুনরুজ্জীবিত হবে বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ায় প্রথমবার অধিনায়ত্ব পেয়েছিলেন সাকিব। পরে সাকিবের নেতৃত্বে দুই ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ে ছিল বাংলাদেশ।
এরপর ২০১১ সালে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সাকিবকে। কিন্তু ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে আবারও অধিনায়কত্ব পান তিনি। ২০০৯ সালের সাকিবের নেতৃত্বে প্রথমবারের মত ২-০ ব্যবধানে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ঐ সিরিজই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জয়।
এখন দেখার বিষয়, পরিচিত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আবারও অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের ফেরায় বাংলাদেশের ভাগ্য বদল হয় কি-না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৬টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জয় ৪টি, হার ১০টি ও ড্র ২টিতে।
একটি বিপর্যয়ের পর অবশ্যই ভাগ্যের পরশ দরকার পড়ে। ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাড়াহুড়া করে অধিনায়কত্ব পান মমিনুল। জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের তথ্য না জানানোয় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব।
মমিনুলের অধীনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় জয় আছে বাংলাদেশের। তবে কিছু ম্যাচে জয়ের বেশ কাছাকাছি থাকলেও সেগুলো হেরেছে বাংলাদেশ। মমিনুলের অধিনায়কত্বে বেশির ভাগ ম্যাচেই জয়ের অবস্থায় থেকেও হেরেছে।
বাজে ফর্মের কারণে মমিনুল দলকে অনুপ্রাণিত করতে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। টানা সাত ইনিংসে নিজের রান এক অঙ্কের ঘর পার করতে পারেননি। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসের মধ্যে ১২বারই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি তিনি।
অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের প্রথম কাজ হবে ব্যর্থতার কারণে বারবার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা টাইগার দলে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।
প্রথম টেস্টের স্পটলাইটে আছে সাকিবের অধিনায়কত্ব। দায়িত্ব নিয়েই শুনেছেন দুঃসংবাদ। ইনজুরির কারণে ইয়াসির আলি ছিটকে পড়ায় চিন্তার ভাঁজ বাংলাদেশের কপালে। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় ইয়াসিরকেই ভেবে রেখেছিলো বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তার অনুপস্থিতি মিডল-অর্ডারে শূন্যতা তৈরি করেছে।
পবিত্র হজ পালনের জন্য মুশফিকের অনুপুস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতি। কারণ টপ-অর্ডারের ব্যর্থতার পর মিডল-অর্ডারে লিটন দাসের সাথে জমজমাট জুটি গড়ে তুলেছিলেন মুশফিক। শেষ টেস্টের দুই ইনিংসে ২৫ রানের মধ্যে যথাক্রমে পাঁচ ও চার উইকেট হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের টেস্ট হারের প্রধান কারণ বলে মনে করেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো।
সাকিব-ডোমিঙ্গো জুটির প্রথম কাজ হবে, দলকে তৈরি করা। কারণ একটি নতুন টেস্ট যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ দল
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মমিনুল হক, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, ইবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, রেজাউর রহমান রাজা, মোস্তাফিজুর রহমান ও নুরুল হাসান সোহান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল
ক্রেইগ ব্রাথওয়েট (অধিনায়ক), জারমেইন ব্ল্যাকউড, এনক্রুমার বোনার, জন ক্যাম্পবেল, জশুয়া দা সিলভা, আলজারি জোসেফ, কাইল মায়ার্র্স, গুদাকেশ মোটি, এন্ডারসন ফিলিপ, রেমন রেইফার, জেইডেন সিলেস ও ডেভন থমাস।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর