শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সোমবার (২৩ মে) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এ ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে জিততে পারলেই সিরিজ জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। সিরিজে প্রথম টেস্ট চট্টগ্রামে ড্র করেছে দুই দল।
জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হয়েছে টাইগারদের। শ্রীলঙ্কাকে ৩৯৭ রানে আটকে দিয়ে প্রথস ইনিংসে ৪৬৫ রান তুলেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ৬৮ রানের লিড পায় তারা।
পঞ্চম দিনে প্রথম সেশনে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট শিকার করলে ম্যাচে কিছুটা গতি লাভ করে। দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝিতে শ্রীলঙ্কা ১৬১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে। এমন অবস্থায় ৯৩ রানে এগিয়ে ছিল সফরকারীরা। এরপর দিনেশ চান্ডিমাল ৩৯ ও নিরোশান ডিকবেলা ৬১ রানের দু’টি অনবদ্য ইনিংস খেলে দলকে রক্ষা করেন।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মমিনুল হক জানিয়েছিলেন, জয় থেকে মাত্র ১ উইকেট দূরে ছিলেন তারা। ম্যাচের চিত্র অনুযায়ী এটা ছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশার। তবে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সেই হতাশাকে আনন্দে পরিণত করতে দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (২২ মে) ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মমিনুল বলেন, ‘মিরপুরের উইকেটে সব সময় ফলাফল হয়। এ ভেন্যু থেকে ইতিবাচক ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আমরা। মিরপুরের উইকেটে বড় ভূমিকা থাকবে সাকিব-তাইজুলের। আশা করছি, ব্যাটাররা নিজেদের সেরা দিয়ে ম্যাচ জিততে তাদের সহায়তা করবে।’
আঙুলের ইনজুরিতে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন অফ-স্পিনার নাঈম হাসান। তার জায়গায় খেলতে প্রস্তুত বল হাতে অফ-স্পিন করতে পারা ও ব্যাট হাতে ভালো করার সামর্থ্য রাখা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া নাঈমের না থাকাটা অবশ্য দ্বিতীয় টেস্ট বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা।
একাদশে মোসাদ্দেকের অন্তুর্ভুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন মমিনুল। তিনি বলেন, ‘ইনজুরির কারণে নাঈম না থাকায় মোসাদ্দেকের খেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সে ব্যাটিংও করতে পারে।’
ইনজুরির কারণে বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামকেও এ ম্যাচে পাবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একমাত্র ইনিংসে আঘাত পাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে পারেননি তিনি। তার পরিবর্তে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবাদত হোসেনের। তবে দল তাকে একাদশে রাখে কি-না সেটিই দেখার বিষয়।
২০১৮ সালে মিরপুরের ভেন্যুতে টেস্ট জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে এখানে সর্বশেষ টেস্টে পাকিস্তান ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছিল টাইগারদের। এখানে টেস্ট জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। মিরপুর আর বাংলাদেশের জন্য পয়মন্ত নয় বলেই ইঙ্গিত রয়েছে।
তারপরও মিরপুরে স্পিনই মুখ্য হয়ে উঠবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিনায়ক মমিনুল হক। একই সাথে মমিনুল এটাও জানেন এ উইকেটের সুবিধা নিতে শ্রীলঙ্কারও ভালো মানের স্পিনার রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের টেস্টে লক্ষ্য করা গেছে, শ্রীলঙ্কার চেয়ে বড় ব্যবধানেই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ স্পিনাররা। যা বাংলাদেশকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে।
এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যেকোনো দেশের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট। ২৩ টেস্টের মধ্যে ১টিতে জিতেছে টাইগাররা। ১৭টিতে হেরেছে ও ৫টিতে ড্র হয়েছে।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম ১২ ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। তবে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দু’দলের সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ হারে পাঁচ ম্যাচ। একমাত্র জয়টি আসে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ দলের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। আর চারটিতে শ্রীলঙ্কাকে ড্র করতে বাধ্য করেছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশ দল
মমিনুল হক (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, ইয়াসির আলী চৌধুরী, তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, কাজী নুরুল হাসান সোহান, রেজাউর রহমান রাজা, শহিদুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
শ্রীলঙ্কা দল
দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), কামিল মিশারা, ওশাদা ফার্নান্দো, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, কামিন্দু মেন্ডিস, নিরোশান ডিকওয়েলা, দীনেশ চান্দিমাল, রমেশ মেন্ডিস, চামিকা করুনারত্নে, সুনিন্দা লক্ষণ, কাসুন রাজিথা, বিশ্ব ফার্নান্দো, আসিথা ফার্নান্দো, দিলশান মাদুশঙ্কা, প্রবীণ জয়াবিক্রমা ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়া।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস