দীর্ঘ এক বছর ধরে টেস্টে রানখরায় ভুগতে থাকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস যেন ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় দিনে আগাচ্ছিলেন দ্বিশতকের পথে। কিন্তু বিধি-বাম, ১৯৯ রানে নাঈম হাসানের বলে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট ম্যাথিউস। এতেই এক রানের আক্ষেপে পোড়েন এই লঙ্কান ক্রিকেটার।
রোববার (১৫ মে) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নে। তিনি নিজেই তার সিদ্ধান্তের যথার্থ বিচার করতে পারেননি। পাশাপাশি তার মতোই দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আরেক ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো।
শেষ পর্যন্ত কুশল মেন্ডিস আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দিনের শেষভাগে এসে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি। আর শেষ পর্যন্ত ২৫৮ রানে দিন শেষ করে লঙ্কানরা।
দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই দারুণ চট্টগ্রামের অস্বস্তিকর গরমে নিজের ইনিংসকে দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। অবশ্য অপরপ্রান্তে ছিল অন্য ব্যাটারদের যাওয়া-আসার মিছিল। সেখানে একা হাতে দলকে টেনে আনা ম্যাথিউসের সামনে ছিল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্বিশতক তুলে নেওয়ার সুযোগ।
কিন্তু সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ তিনি। নাঈম হাসানের বলে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে সাকিবের কাছে ক্যাচ তুলে দেন এই ক্রিকেটার। আর এতেই থামে তার ইনিংস!
অবশ্য এর আগে আরও তিনবার জীবন পেয়েছিলেন ম্যাথিউস। প্রথম দিনে দুইবার তাকে আউট করার সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেও মিলেছিল সুযোগ। ফিল্ডারদের ভুলে সেবারও জীবন পেয়েছিলেন। তিন তিনবার জীবন পেয়েও এক রানের আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাকে।
চট্টগ্রাম টেস্টে ম্যাথিউস ছাড়া শ্রীলঙ্কার হয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করতে পেরেছেন মাত্র দুই ক্রিকেটার। কুশল মেন্ডিস করেছিলেন ৫৪ রান আর দীনেশ চান্দিমালের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। এছাড়া মাত্র দুইজন ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘর ছুতে পেরেছিলেন। তারা হলেন- ওশাদা ফার্নান্দো (৩৬) এবং বিশ্ব ফার্নান্দো (১৭)। বাকি ব্যাটারদের সবাই ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে।
টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১২জন ক্রিকেটার ১৯৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। আর দুইজন ক্রিকেটার সঙ্গীর অভাবে নিজেদের দ্বিশতক পূর্ণ করতে পারেননি। তারা হলেন- জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, অপরজন লঙ্কান ব্যাটিং গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা।
১৯৯ রানে আউট ক্রিকেটারদের তালিকায় ১২তম হলেও আরেকটি রেকর্ডে একমাত্র প্রতিনিধি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৯৯ ও ১৯৯ রানে আউট হওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি। চট্টগ্রামে ১৯৯ রানে আউট হওয়ার আগে ২০০৯ সালে মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হওয়ার দ্বিতীয় কীর্তি এটি। এর আগে ২০১৭ সালে পচেফস্টুরমে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটার ডিন এলগার। তাকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আর এবার ১৯৯ রানে প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে আউট করলেন নাঈম হাসান। বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৯ রানে আউট হওয়া প্রথম ক্রিকেটারও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
১৯৯ রানে যে ১২জন ব্যাটার আউট হয়েছেন, তার মধ্যে ব্যতিক্রম বলা যায় ইউনিস খানকে। ১৯৯ থেকে ২০০ রানে পৌঁছানোর জন্য দৌড় শুরু করার পর রান আউট হয়েছিলেন তিনি। সতীর্থ শহীদ আফ্রিদির সাথে বোঝাবুঝির ভুল হওয়ায় দ্বিশতক মিস করেছিলেন ইউনিস।
১৯৯ রানে আউট এবং অপরাজিত থাকা ব্যাটারদের তালিকা দীর্ঘ হলেও ২৯৯ -এর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা কেবল মাত্র দুই। ২৯৯ রানে আউট হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো আর ২৯৯ রানে অপরাজিত থাকা একমাত্র ক্রিকেটার স্যার ডন ব্রডম্যান।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর