পোর্ট এলিজাবেথে অচেনা উইকেটে স্বাগতিকদের বিপক্ষে কঠিন লড়াইয়ে প্রথম দিন শেষ করলো বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে একটি এবং বাকি দুই সেশনে দু’টি করে উইকেট শিকার করে লড়াইয়ে টিকে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫ উইকেটে ২৭৮ রান।
সিরিজের প্রথম টেস্টে আলো স্বল্পতার জন্য পাঁচদিনের কোনো দিনই পুরো ৯০ ওভার খেলা সম্ভব হয়নি। তবে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টি হানা দিলেও প্রথম দিন পুরো ৯০ ওভার খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দিন ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাঁচ উইকেট হরালেও তিন ব্যাটারই তুলে নিয়েছেন হাফ-সেঞ্চুরি।
দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এটাই প্রথম ম্যাচ। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। প্রথম দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও পেসার খালেদ আহমেদ। স্বাগতিকদের শিকার করা ৫ উইকেটের মধ্যে তাইজুল ৩টি এবং খালেদ নিয়েছেন ২টি উইকেট।
প্রথম টেস্ট থেকে দু’টি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। ওপেনার সাদমান ইসলামের জায়গায় তামিম ইকবাল ও ইনজুরিতে পড়া পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান স্পিনার তাইজুল ইসলাম। খালেদের সাথে ইনিংসের শুরুতে বোলিং করে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৮৮৯ সালের পর এই ভেন্যুতে কোন স্পিনার নতুন বলে বোলিং করলেন।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট শিকারের বড় সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার সারেল এরইউর বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেন বাংলাদেশের বোলার খালেদ। তা নাকচ করে দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। রিভিউ নিতে চেয়েছিলেন খালেদ। তবে সতীর্থদের সঙ্গে আলাপ সাড়তেই নির্ধারিত ১৫ সেকেন্ড পার করে ফেলেন অধিনায়ক মমিনুল! পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, আউট ছিলেন এরইউ।
৪ রানে জীবন পেয়ে অধিনায়ক ডিন এলগারের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন এরউই । তবে ১১তম ওভারে সেই খালেদের বলেই আউট হন এরইউ। উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন এরইউ। ৪০ বলে ২৪ রান করেন তিনি। এরইউর আউটে উইকেটে আসেন কিগান পিটারসেন। তাকে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়ান এলগার।
৬৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম ও টানা তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান এলগার। এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ২৮ ওভারে ১ উইকেটে ১০৭ রান। বিরতি থেকে ফেরার পর পঞ্চম ওভারে এলগারকে বিদায় দেন এ সিরিজে প্রথম খেলতে নামা বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
তাইজুলের করা ৩৩তম ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এলগার। ৮৯ বলে ১০টি চারে ৭০ রান করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এলগার। দ্বিতীয় উইকেটে পিটারসেনের সাথে ১২৫ বলে ৮১ রান যোগ করেন এলগার। অধিনায়ককে হারানোর পরও রানের চাকা ঘুড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
এবাদতের করা ৩৪তম ওভারের শেষ তিন বলে তিন বাউন্ডারিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন পিটারসেন। পিটারসেনের হাফ-সেঞ্চুরির পর ৩৯তম ওভার শেষে বৃষ্টিতে ২৪ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। পরে খেলা শুরু হলে বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছেন পিটারসেন ও তেম্বা বাভুমা। তবে ৫১তম ওভারে এ জুটিতে ভাঙন ধরান তাইজুল। এবারও সেই লেগ বিফোর নাটক, তবে রিভিউতে সাফল্য বাংলাদেশের।
পিটারসেনের বিপক্ষে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করেন তাইজুল। কিন্তু আবেদন নাকচ করে দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। এবার আর সময়ক্ষেপন না করে রিভিউ নিয়ে নেন অধিনায়ক মমিনুল। রিভিউতে সাফল্য পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে লেগ বিফোর আউট হন পিটারসেন। ৯টি চারে ১২৪ বলে ৬৪ রান করেন পিটারসেন।
প্রথম দুই জুটির মতো তৃতীয় উইকেটের জুটিও হাফ-সেঞ্চুরির রান করে। বাভুমা-পিটারসেন জুটি ১০৬ বলে ৫১ রান যোগ করে। দলীয় ১৮৪ রানে পিটারসেনের বিদায়ের পর ক্রিজে বাভুমার সঙ্গী হন রায়ান রিকেলটন। এ জুটিও বাংলাদেশের বোলারদের সামনে নিজেদের মেলে ধরেন। মিরাজকে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান বাভুমা।
বাভুমা-রিকেলটনরা যখন উইকেট ধরে খেলায় ব্যস্ত, তখন উইকেট শিকারের নেশায় ছিল বাংলাদেশের বোলাররা। দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার হাফ-সেঞ্চুরিয়ানকে ফেরানো তাইজুলের হাত ধরে আবারও ব্রেক থ্রুর অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। তবে দিনের চতুর্থ সাফল্যের দেখা মিলছিল না। অবশেষে সেই তাইজুল, বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন।
এবারও আলোচনায় রিভিউ। তাইজুলের ডেলিভারি রির্ভাস সুইপ করেন রিকেলটন। ব্যাটে বল না লাগলেও তা রিকেলটনের কব্জি ও গ্লাভস স্পর্শ করে। এতে ক্যাচ আউটের আবেদন করে। এতেও আম্পায়ার আগ্রহী না হলেও রিভিউ নেন টাইগার নেতা মমিনুল। তাতেই সাফল্য মিলে।রিভিউতে রিকেলটনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাইজুল। ৮২ বলে ৪২ রান করেন রিকেলটন। প্রথম তিনটির মতো এ জুটিও হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেয়। ১৮৬ বলে ৮৩ রানে আসে জুটিতে।
তাইজুলের ব্রেক-থ্রুর পর উইকেটে সেট থাকা ব্যাটার বাভুমাকে শিকার করেন খালেদ। ইনিংসের দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার ১১ বল পরই উইকেট পায় বাংলাদেশ। খালেদের বলে স্লিপে বাভুমার দারুণ এক ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের ৮৫তম ওভারে দলীয় ২৭১ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭টি চারে ১৬২ বলে ৬৭ রান করেন বাভুমা।
দিনের শেষ বেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার দুই সেট ব্যাটারকে বিদায়ের পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। তবে দিনের শেষ ৩৩ বলে কোনো বিপদ হতে দেননি দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কাইল ভেরিনি ও ওয়াইন মুল্ডার। অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষে করেন তারা। ভেরিনি ১০ ও মুল্ডার খালি হাতে অপরাজিত রয়েছেন।
বাংলাদেশের তাইজুল ৩২ ওভারে ৭৭ রানে ৩টি ও খালেদ ২০ ওভারে ৫৯ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন।