টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা ভালো রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয় ছিল না ক্রিকেটের কোন ফরম্যাটেই। তবে এবার সেই নিউজিল্যান্ডেই টাইগারদের গর্জন দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। স্বাগতিকদের বিপক্ষে পুরো পাঁচদিনই আধিপত্য বিস্তার করে মমিনুলরা তুলে নিলো ঐতিহাসিক টেস্ট জয়।
জয়ের মঞ্চটা তৈরি হয়েছিল চতুর্থ দিনেই। প্রথম ইনিংসে টাইগার ব্যাটারদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদত-তাসকিনের বোলিং তোপ। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে ১৬৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়টা শুধু ঘরে তোলার বাকি ছিল।
জয়ের জন্য মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য পেয়ে বাকি কাজটুকু সারেন অধিনায়ক মমিনুল-শান্ত-মুশফিকরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এ জয় কোন সাধারণ জয় নয়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোন ফরম্যাটে বাংলাদেশের এটা প্রথম জয়।
সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই বোলারদের দারুণ ধারাবাহিক পারফর্মেন্স ছিল। এছাড়া প্রথম ইনিংসে টাইগারদের ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে জয় তুলে নিতে কোন বেগ পেতে হয়নি। অথচ এর আগের সিরিজেই ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমার্পণ করেছিল বাংলাদেশ।
কে ভেবেছিল তাসমান পাড়ের দেশটিতে গিয়ে স্বাগতিকদের উপরই ছড়ি ঘোরাবে মমিনুল হকের দল? নিউজিল্যান্ড গিয়ে সাউদি-বোল্ট-জেমিসনদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিবে টাইগাররা! তবে সব কিছু ছাপিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত জয়টা এবার পেয়েই গেল বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে মাউন্ট মঙ্গানুইতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মমিনুল হক। তার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে সময় নেননি বাংলাদেশি পেসাররা। প্রথম ইনিংসে তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম এবং স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের দারুণ বোলিংয়ে ৩২৮ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ ব্যাটিং শৈলীর প্রদর্শনী দেখান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান জয়। তার দারুণ ইনিংস বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো।
শুধু মাহমুদুল হাসান জয় নন, তার সঙ্গী হন নাজমুল হোসেন শান্ত, মমিনুল হক এবং লিটন দাস। চারজনই ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা পেতে পারতেন। তবে ভাগ্য সহায় না হওয়ায় সেঞ্চুরি বঞ্চিত থাকেন তারা। তবে চার হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৩০ রানের লিড নিয়ে ৪৫৮ রানে থামে বাংলাদেশ।
১৩০ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিনে ব্যাটিংয়ে নামে কিউই ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউই ব্যাটারদের সর্ষেফুল দেখাতে শুরু করেন পেসার ইবাদত হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ। টেস্টের পঞ্চম দিনে ইবাদতের কল্যাণে দীর্ঘ ৮ বছর পর কোনো বাংলাদেশি পেসার ফাইফারের দেখা পান। এছাড়াও দারুণ বোলিং করা তাসকিন আহমেদ শিকার করেন তিন উইকেট।
ইবাদত-তাসকিনের বোলিং তোপে স্কোর বোর্ডের মাত্র ১৬৯ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ফলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রান। দিনের প্রথম সেশন শেষ না হতেই এমন লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে সাদমান ইসলাম এবং নাজমুল হোসের শান্ত।
ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩৪ রানে দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম (৩) এবং নাজমুল হোসেন শান্ত (১৭) ফিরে গেলে বাকি কাজটুকু সারেন অধিনায়ক মমিনুল হক (১৩*) এবং মুশফিকুর রহিম (৫*)।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন দুই ইনিংসে বল হাতে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশের ইবাদত হোসেন। বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৭৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে শিকার করেন ৬টি উইকেট।
সব ফরম্যাট মিলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩৩তম ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। আর টেস্ট ক্রিকেটে ১০ম ম্যাচে টাইগারদের এটি প্রথম জয়। এছাড়া কিউইদের মাটিতে প্রথম জয়ের পাশাপাশি সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]