আ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে ২৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানের জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ডান হাতি ফাস্ট বোলার ঝাই রিচার্ডসনের বোলিং তোপে ১৯২ রানেই গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংলিশদের ৯ উইকেটে হারিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচ জিততে পঞ্চম ও শেষ দিন সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৬ উইকেট। আর ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৮৬ রান। এছাড়া উইকেট বাঁচিয়ে দিন শেষ করলেও পয়েন্ট ভাগ করে নিতে পারতো। তবে সেটি আর হয়নি। ঝাই রিচার্ডসনের ৫ উইকেটের পর মিচেল স্টার্ক ও নাথান লায়নের বোলে ১৯২ রানের গুটিয়ে গেছে ইংলিশ শিবির।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ টেস্ট ম্যাচটি ছিল দিবারাত্রির। এটি জয়ের ফলে এখন পর্যন্ত দিবা-রাত্রিতে খেলা ৮টি টেস্টের সবগুলোতেই জয় পেল অস্ট্রেলিয়া। দিবারাত্রির টেস্টে শতভাগ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অ্যাশেজের পাঁচ ম্যাচ সিরিজের ২-০ তে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল।
জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেওয়া ৪৬৮ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে রোববার (১৯ ডিসেম্বর) চতুর্থ দিন শেষে ৪ উইকেটে ৮২ রান করেছিল ইংল্যান্ড। তার আগে ৯ উইকেটে ২৩০ রান শেষে ইনিংস ঘোষণা করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় ইংলিশরা। রানের খাতা খোলার আগেই ওপেনার হাসিব হামিদকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান অস্ট্রেলিয়ার পেসার ঝাই রিচার্ডসন। এরপর মালানের সাথে ৪৪ ও অধিনায়ক রুটের সাথে ২২ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার ররি বার্নস। মালান ২০ ও বার্নস ৩৪ রানে আউট হন। মালানকে শিকার করেন অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা পেসার মাইকেল নেসার।
৩১তম ওভারে বার্নসের আউটের পর বেন স্টোকসকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন রুট। দিনের বাকি সময়টা বিপদ ছাড়া শেষ করতে চেয়েছিলেন রুট। নিমিষেই ৭৩ বল খেলে ফেলেন তারা। তবে ৪৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দিনের শেষভাগে রুটকে আউট করে ইংল্যান্ডকে বড় ধাক্কা দেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার স্টার্ক।
রুটের বিদায় নিশ্চিত করেন স্টার্ক। ৬৭ বল খেলে মাত্র ১টি চার মারেন রুট। রুটের আউটের পরই দিনের খেলার ইতি ঘটে। ৪০ বল খেলা স্টোকস ৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
শেষ দিন ৩ রান নিয়ে শুরু করা বেন স্টোকস বেশি দূর যেতে পারেননি। স্পিনার নাথান লিঁওর শিকার হওয়ার আগে ১২ রান করেন তিনি। আর ওলি পোপকে ৪ রানে তুলে নিয়ে দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন পেসার মিচেল স্টার্ক।
১০৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে ক্ষণিকের প্রতিরোধ গড়ে তোলেন উইকেটরক্ষক জশ বাটলার ও ক্রিস ওকস। উইকেট বাঁচাতে সতর্কতার সাথে খেলতে থাকেন তারা। ১৯০ বল খেলে এক পর্যায়ে বাটলার ও ওকস জুটিতে ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন দেখে ইংল্যান্ড।
উইকেটে জমে থাকা বাটলার-ওকসের জুটি ভাঙ্গতে অধিনায়ক স্মিথ নিজেও বল করেছেন। অষ্টম বোলার হিসেবে ট্রাভিস হেডকেও আক্রমণে আনেন স্মিথ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিলো না। অবশেষে ৮৮তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার মুখে হাসি ফোটান আগের দিন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারকে তুলে নেওয়া পেসার ঝাই রিচার্ডসন।
ওকসকে বোল্ড করেন রিচার্ডসন। আউট হওয়ার আগে ৯৭ বল খেলে ৭টি চারে ৪৪ রান করেন ওকস। এরপর ওলি রবিনসনকে ৮ রানে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে আসেন স্পিনার লিঁও। তখনও অস্ট্রেলিয়ার মাথা ব্যাথার কারণ ছিলেন বাটলার।
১১০তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার চিন্তাকে দূর করেন রিচার্ডসন। উইকেটের সাথে সন্ধি করে ফেলা বাটলার হিট আউট হন। ২০৭ বল খেলে ২টি চারে ২৬ রান করেন বাটলার। নবম ব্যাটার হিসেবে বাটলারের আউটের পর অস্ট্রেলিয়ার জয় সময়ের ব্যাপার ছিল।
ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট জেমস এন্ডারসনকে শিকার করে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন রিচার্ডসন। সেই সাথে ইনিংসে পাঁচ উইকেটও নেন তিনি। ৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিলেন রিচার্ডসন। ইনিংসে ৪২ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ২টি কওে উইকেট শিকার করেন স্টার্ক ও লিঁও।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯২ রানে অলআউট হওয়া ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রান করেছিল। আর দুই ইনিংসেই যথাক্রমে ৯ উইকেটে ৪৭৩ ও ২৩০ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন মার্নাস লাবুশেন। প্রথম ইনিংসে ১০৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রান করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৪৭৩/৯ডি ও ২৩০/৯ডি, ৬১ ওভার (লাবুশেন ৫১, হেড ৫১, রুট ২/২৭)
ইংল্যান্ড : ২৩৬ ও ১৯২, ১১৩.১ ওভার (ওকস ৪৪, বার্নস ৩৪, রিচার্ডসন ৫/৪২)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ২৭৫ রানে জয়ী
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচ সেরা : মার্নাস লাবুশেন (অস্ট্রেলিয়া)।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]