‘ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট’-প্রবাদ বাক্যকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পোরিং করে ক্রিকেট বিশ্বেও কাছ থেকে সমালোচিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ানরা।
বল টেম্পারিংয়ের কথা অকপটে স্বীকার করে নেয় অসি অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার এমন কাণ্ডে হতবাক ক্রিকেট বিশ্ব। এতে হৃদয় ভেঙেছে ক্রিকেটপ্রেমিদের। বিশেষভাবে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রেমিদের। তারা অনেক বেশি ক্ষুব্ধ। বাদ পড়েননি সাবেক খেলোয়াড় ও কোচরা। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড তো বলেই দিয়েছেন, ‘নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সপ্তাহ এটি। মিডিয়া ও ক্রিকেটপ্রেমিরা অনেক বেশি হতাশ। যা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্যই বেশি ক্ষতিকর।’
বিশ্ব মিডায়াতেও অস্ট্রেলিয়ার এ বল টেম্পারিংয়ের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। সব মিডিয়াতে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের এ জঘন্য কাজে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিন বল টেম্পারিং করেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ক্যামেরুন ব্যানক্রফট। ফিল্ডিং করার সময় হলুদ রঙের একটি কাগজজাতীয় বস্তুর সাথে বল ঘষেন তিনি। এই কাণ্ড ধরে পড়ে যায় মাঠের বিভিন্ন পাশে থাকা ক্যামেরাগুলোতে। এমন ঘটনা টিভি স্ত্রিনে দেখতে পেরে ম্যাচ পরিচালনকারী আম্পায়ার ও রেফারিরা তার সাথে কথাও বলেন। মাঠের মধ্যে প্রথমে অস্বীকার করলেও দিনের খেলা শেষ হবার পর সংবাদ সম্মেলনে নিজের কু-কীর্তি স্বীকার করতে বাধ্য হন ব্যানক্রফট। পাশাপাশি কু-কীর্তি স্বীকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও।
নিজের অধিনায়কত্বের পদ থেকে সড়ে দাঁড়াতে বাধ্য হন স্মিথ। এমনকি আইসিসি কর্তৃক এক টেস্ট নিষিদ্ধও হন তিনি। শুধুমাত্র আইসিসি কর্তৃকই নয়, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে বড় ধরনের সিদ্বান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন স্মিথ। সাথে সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারও।
বল টেম্পারিং নিয়ে আরও তথ্য অর্জনের জন্য ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছেন সিএর এথিসক কমিটি প্রধান ইয়ান রয় ও দলের টিম পারফরম্যান্স ম্যানেজার প্যাট হাওয়ার্ড। সেখানে পৌঁছেই চাপে পড়ে গেছেন তারা। অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া তাদের দলের সংস্কৃতিকে ‘পচা’ বলে অভিহিত করেছে।
সাদারল্যান্ড বলেন, ‘ইয়ানের সাথে আমি দেখা করেছি। তদন্ত করে সবকিছু বের করে আনতে বদ্ধপরিকর তারা। আমরা জানি অস্ট্রেলিয়ানরা সবকিছু জানতে চায় এবং আমাদের তদন্তের আপডেট জানানো হবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
লিডারশীপ গ্রুপের মাধ্যমেই বল টেম্পারিংয়ের সিদ্বান্ত নেয়া হয় বলে জানান স্মিথ। কিন্তু একটি সূত্র বলছে- অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বল টেম্পারিংয়ের সাথে দুই সিনিয়র মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড যুক্ত ছিলেন না।
দলের উইকেটরক্ষক ও কেপ টাউন টেস্টের বল টেম্পারিংয়ের পর দলের দায়িত্ব পাওয়া টিম পাইন বলেন, ‘এটি সত্যি যে ভয়ঙ্কর যন্ত্রনার মধ্যে আমাদের ২৪ ঘণ্টা কেটেছে। আমাদের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা অনেক বেশি কষ্ট করছি কিন্তু এটাই বাস্তবতা। তবে আমরা এটি আশা করিনি যা অনেক বেশি বড় আকার ধারন করেছে।’
স্মিথ নিষিদ্ধ হবার পাশাপাশি শতভাগ জরিমানার কবলেও পড়েছেন। তবে বল টেম্পারিং-এর নাটের গুরু যে, সেই ব্যানক্রফটকে আইসিসি জরিমানা করেছে ম্যাচ ফি’র ৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট নামের পাশে যুক্ত হয়েছে বেনক্রফটের।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত কাজ হচ্ছে ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব করা। তাই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল স্মিথের এমন কাণ্ডে হতাশ। তিনি বলেন, ‘আমি হতবম্ব ও হতাশ।’
কেপটাউনের বল টেম্পারিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ দায়টা অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্মিথ ও কোচ ড্যারেন লেহম্যানকে দিতে চাইছেন দলটির সাবেক কোচ জন বুকানন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার অধীনে টানা ১৬টি টেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড ও টানা তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া।
বর্তমান দলের এমন কাণ্ডে হতাশ বুকানন বলেন, ‘দল কোন পথে হাটছে বা দলের মধ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তা দলের কোচ ও অধিনায়কের অবগত হওয়া উচিত। এখন যা ঘটেছে, সবকিছুর দায় তাদের নিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। কেন এমন সিদ্বান্ত নিতে গেল লিডারশীপ গ্রুপের সদস্যরা। অধিনায়কত্ব থেকে সড়ে গেলেও খেলোয়াড় হিসেবে স্মিথের দলে থাকা উচিত। এটি তার বড় ভুল হতে পারে কিন্তু এটি বিচারেও বড় ক্রুটি ছিল। ক্যারিয়ার নিয়েও এখন বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে পারে স্মিথ। তাই আশা করব সে খেলোয়াড় হিসেবে দলেই থাকবে কিন্তু ভবিষ্যতে তার অধিনায়কত্ব পাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে গেল।’